somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শখের নারী, শখের পুরুষ

১১ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খের জিনিস থাকে যতনে, আলমারিতে প্যাকেট করে তোলা৷ সেটাকে আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি না, অকেশনে বের করি৷ শখের জিনিসের চাইতে আমরা উঠতে বসতে যে জিনিস ব্যবহার করি তার গুরুত্ব যে কত বেশি তা আমরা বুঝতেই চাই না৷ আমাদের যাবতীয় কনসার্ন যাবতীয় কেয়ার ওই শখের জিনিসটার প্রতিই৷ প্রথমেই জিনিসটা স্পষ্ট যে শখের জিনিস আপনার দৈনন্দিন কাজে আসবে না৷ এবার জিনিস বাদ দিয়ে মানুষে আসি৷ নারী পুরুষ আলাদা করছি না, শখের মানুষ বলতে সেই মানুষকে বোঝায় যার প্রতি আমরা গুণমুগ্ধ! সেই মানুষটা কথা বললেই কানে মধুবর্ষণ হয়, সে হাসলে যেন গোটা জগতটা দুলে ওঠে, সে একটু চোখ মেলে তাকালেও দুনিয়ার তাবত মায়া ভর করে! সে যা করে তাতেই আমরা বিগলিত হয়ে যাই, সে যদি কুৎসিত গালিও দেয়, তাও রোমান্সের পুলক ছড়িয়ে দেয়! একটা মানুষকে যখন আমরা এমন ভাইটাল পজিশন দেই, তখন সে হয় শখের মানুষ! ওই মানুষটাকে খুশি রাখতে আমরা সব করতে প্রস্তুত, আমরা তার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জানপ্রাণ লুটিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকি৷

একটা মানুষ যখন জানতে পারে, অমুক আমার জন্য যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত, তার বুক উঁচু হয় (গৌরবে উঁচু হয়), সে তখন নিজেকে আরো মূল্যবান ভাবতে শুরু করে, আত্মবিশ্বাস বাড়ে তার, নিজেকে রাজা রাণী ফিল হতে থাকে, এবং তখন ছোটখাটো হুকুম তৈরি হয়! আমার জন্য এটা আনতে পারবে? ওটা করে দিতে পারবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। এই হুকুম একটা পর্যায়ে আর ছোটোখাটো থাকে না, ভ্রুণের মতই বড় হতে থাকে, খুবলে যতখানি নেওয় যায়, সে পর্যন্ত!
শখের মানুষের কাছে আপনি জাস্ট টেকেন ফর গ্রান্টেড হয়ে যান!

শখের মানুষ বলেছে, আর কোন কথা নাই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি! হাজির করে দেই, শখের মানুষের মুখে হাসি ফোটে৷ এরপর আবার শখের মানুষের আরেকটা শখ বা খায়েস জাগ্রত হয়, আমরা আবার ঝাঁপাই! আমাদের মায়া বা মোহ আমাদের এই চেতনাকে ভুলিয়ে রাখে যে, তার খুশির জন্য আমি যে এতটা করছি, আমার খুশি কীসে তা কি সে একবারও ভাবছে??

আমরা এই চিন্তা মাথায় আনিই না, কারণ কোন এক ছাপড়ি মনীষীর, যার নাম কেউ জানে না তার দোহাই দিয়ে, বাণী ছাড়া হয়ে গেছে যে, গিভ এ্যান্ড টেইক দিয়ে তো ভালোবাসা হয় না! অতএব, তুমি কিছুই পাইবে না, শুধু কলুর বলদের মত ঘানি টানিয়া যাইবে! এবং এই যে ঘানি টানবা এটাই তোমার মহান প্রেম, এটাই তোমার মহত্ত্ব!

আমি একজনকে দেখেছি, বয়ফ্রেন্ডকে টাকা দিয়ে হেল্প করার জন্য একটা একটা করে নিজের গহনা বিক্রি করতে, আমি একটি মেয়েকে দেখেছি, টিউশন করে তিলে তিলে জমানো টাকা দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের জন্য মোবাইল কিনতে, শুধু বয়ফ্রেন্ডের মন রাখতে আরো কত কী করেছে মেয়েরা তার আরো করুণ ফিরিস্তি আছে, সেসব থাক! আমি ছেলেদের বেলায়ও দেখেছি, গার্লফ্রেন্ডকে খুশি রাখতে একের পর এক ফোনসেট, অর্নামেন্টস, ড্রেস কিনে দিতে, গার্লফ্রেন্ড বলামাত্রই শত মাইল পাড়ি দিয়ে এক শহর থেকে আরেক শহর ছুটে যেতে, গার্লফ্রেন্ডকে মাসে একবার ভালো একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর জন্য রোজ একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিতে দেখেছি; ছেলেদের বেলায়ও এমন হাজার ফিরিস্তি আছে, কার আত্মত্যাগ কতখানি বড় সে পরিমাপ নিষ্প্রয়োজন৷

শখের মানুষের জন্য ছেলে বা মেয়ে দুই পক্ষই সর্বস্ব দিয়ে করে, কিন্তু এই শখের মানুষেরা প্রথমত শুধু নিয়েই যায়, কিছু দিতে পারে না৷ এমনকি তাদের জীবনেও আমাদের জায়গা দেয় না, আমরা তাদের প্রতি মুগ্ধ হয়ে নিজেকে লুটাই, তারা আবার অন্য কারো প্রতি মুগ্ধ হয়ে নিজেকে লুটায়, আমরা এভাবেই একে অপরের পেছনে ছুটি, অল্প কিছু মানুষ একে অন্যের পেছনে না ছুটে পরস্পরের দিকে ছুটে আসে, এই মানুষগুলো ভাগ্যবান৷

এজন্য ভালোবাসার মানুষের জন্য সব উজাড় করে দেওয়া, সারা দুনিয়া একদিকে আর ভালোবাসার মানুষটার প্রায়োরিটি আরেক দিকে রাখা অবশ্যই জরুরি, সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে না পারলে সেটা ভালোবাসা হয় না এ ঠিক আছে, কিন্তু এই প্রত্যয়টা দুই পক্ষেরই দরকার আছে৷ আপনি যার জন্য পানিতে নামছেন, সেও যদি আপনার জন্য এক কদমও না নামে তাহলে আপনার ওখানেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত৷ গিভ এ্যান্ড টেইক দিয়ে ভালোবাসা হয় না, কিন্তু সবচেয়ে বড় গিভ এ্যান্ড টেইকটা এই কেয়ার এবং প্রায়োরিটিতেই লাগে৷

আমার এই লেকচারে কেউ শখের মানুষ ধরা বাদ দেবে বা ছেড়ে দেবে না এটা— আমিও জানি৷ আমার লেখার ইচ্ছে ছিল মাই ক্রাশ শিরোনামে একটা গল্প, থাক সেটা৷ কোমল রোমান্টিকতার অবশ্যই দরকার আছে, তবে আমরা ম্যাচিউর্ড হতে হতে এটাও বুঝতে শিখি, কে আমার মাথায় কাঁঠাল ভাঙছে আর কে খাচ্ছে এবং আমাকেই বা কাঁঠালের কোষটা কে এগিয়ে দিচ্ছে৷ এটুকু বোঝা জরুরি! আপনি কারো শখের মানুষ হলে আপনি অবশ্যই ভাগ্যবান, বাট আপনার প্রতি আমার প্রশ্ন থাকবে, শখের মানুষ হয়ে সুবিধা কেবল নিয়েছেন, না যে মানুষটা আপনাকে এত প্রায়োরিটি দিচ্ছে তার প্রতি আপনিও সমান আগ্রহ সমান কেয়ার কনসার্ন প্রায়োরিটি আদায় করছেন? যদি না করতে পারেন, তাহলে এই ফায়দা নিতে একটুও লজ্জা হয় না??

এই শখের নারী বা পুরুষ টার্মটা কোন উজবুক হঠাত প্রচার করে কনসেপ্টটাকে মহিমান্বিত করা আরম্ভ করেছে কে জানে, নিশ্চিত লুতুপুতু রোমান্টিক পোস্ট করা পেইজ বা গ্রুপের কাজ এটা৷ ব্যক্তি কে জানি না, একেকটা বিষ সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ, এমন ইনফ্লুয়েন্সার যারা, তারা এতটুকু দূরদৃষ্টি রাখে না যে কোন জিনিসটার জল কতদূর গড়াতে পারে!

এই শখের মানুষের প্রতি মুগ্ধ হয়ে ছুটে যাওয়ার সঙ্গে স্যাপিয়োসেক্সুয়ালিটির একটা লিংক আছে, সেটা নিয়ে লিখব আরেকবার৷

যাহোক, সব পুরুষ প্রেম বোঝে না, যে পুরুষ প্রেম বোঝে, তার জীবনে সবচেয়ে শখের নারীটি হয় তার কন্যা৷ মা নয়, স্ত্রী নয়, কন্যা! বিরাট বিরাট বেয়ারা পুরুষও এই শখের নারীর শাসনে মিনমিন করতে আরম্ভ করে! এমন শখের নারী পুরুষের শাসন আব্দার দেখতেও আনন্দ৷
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৩২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×