কিছুদিন আগে ঢাকা যাচ্ছিলাম রাত ১১ টার বাসে।
দির্ঘ ৬-৭ ঘন্টার জার্নি।
উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী কোচের মিছিল। ঘন্টা দু-তিনেক পর বাস থামলো ফুড ভিলেজ
নামক হোটেলে। ২০ মিনিটের যাত্রা বিরতী।
হোটেলের সামনে পার্কিংয়ে প্রচুর বাস তখন। বাথরুম সেরে বের হয়ে দেখি একটা টেবিলও খালি নেই।
রাত তখন দেড়টার মত। ঢাকা থেকে রাত ১০টায় ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী বাস এবং উত্তরবঙ্গ থেকে রাত ১১টায় ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী বাসের সন্মিলন হয়েছে এই হোটেলে। সোনালী রুপালি ভরে গেছে মানুষে। ভাবলাম কয়টা টাকা নাহয় বেশিই নিবে চামেলীতেই (এসি) ঢুকি।
আমি একলা মানুষ হোটেলের পুর্ব দিকে একটি টেবিলে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্য নাবিল আর এসআর ট্রাভেলস এর এসি বাস এলো। চামেলীও ভরপুর হয়ে গেল।
ওয়েটারকে একপিছ নান রুটি আর সবজীর অর্ডার দিয়ে বসে আছি।
হঠাৎ এক ভদ্রলোক কোন টেবিল ফাকা না পেয়ে আমার টেবিলে বসার অনুমতি নিলো। বললাম বসেন। আমি নান আর সবজি খাচ্ছিলাম।
ভদ্রলোক দম্পত্তি খাবারের অর্ডার দিয়ে হোটেলের বাহিরে দাড়ানো বাসগুলি দেখছিল আর বলছিল। শুনেছি বাংলাদেশ নাকি গরীব রাষ্ট্র কিন্তু এদেশের গাড়ি ঘোড়া এতো উন্নত?.. বাসে কোন শব্দ নেই। ঝাকুনী নেই। আর রাস্তায় আসতে গ্রাম গন্জ্ঞ যা দেখলাম তাতেতো অতো গরীব মনে হচ্ছেনা!.
গলা খাকারী দিয়ে বললাম কিছু বলতে পারি?.. ভদ্রলোক বললেন অবশ্যই অবশ্যই।
আপ্নারা কোথা থেকে আসছেন?..
শিলিগুড়ি থেকে। কোথায় যাবেন?.. মুন্সিগন্জ্ঞ আত্নীয়ের বাড়িতে।
আপনারাতো বাঙালী তো কলিকাতা না থেকে শিলিগুড়ি কেন?.
আসলে আমরা দার্জিলিং স্কুলের শিক্ষক। শিলিগুড়ি থেকে এসআরে করে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছি এখান থেকে কোলকাতার বাসে চলে যাবো। ওও আচ্ছা।
বললাম ঢাকা এসেছিলেন কখনো?..
সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম ঢাকাকে। তারপর আর আসা হয়নি। এবারে গৃহিনী সহ এলাম। ও কলকাতার মেয়ে। বললাম তাহলে ঠিক আছে… ঢাকা দেখলে বুঝতে পারবেন

কেন ঢাকা দেখলে মানে?.

বললাম আমরা গরীব দেশের মানুষ বটে!
তবে আমাদের রুচী পছন্দ আধুনিক ও উন্নত।
আমাদের বাসে চড়ে নিশ্চয়ই বুঝেছেন?..

হ্যাঁ আপনাদের দেশের বাসগুলি খুব সুন্দর শব্দ নেই একদম।
আরে দাদা আমাদের বাসগুলি কি ফাটা (টাটা) কোম্পানীর নাকি যে সাউন্ড করবে?..


ভদ্রলোক বললেন ফাটা কোম্পানী মানে বুজলামনা?..

বললাম ভাড়তের টাটার বাস নয় এগুলি। সব জাপানী হিনো ওয়ান জে প্লাস।
তা দাম কেমন একেটটির?
বললাম নন এসি ওয়ান জে ৬৫-৭৫ লাক আর যেগুলি এসি হিনো আরএমটু এগুলি দেড় কোটির মতো।
দাদাবাবু তব্দা খাইয়া গেল! বৌদি বললো এত দামী দামী বাস!..

বললাম আরো দামী বাস আছে.. টিআর ট্রাভেলস এর মার্সিডিজ বেন্জ্ঞ, স্ক্যনিয়া,ভলবো সহ হুন্দাই, ডায়ো আর কিন্ঞ্চিৎ ফাটা কোম্পানীর বাস।

বৌদি বললো টাটার বাসতো দাম কম ২০-২২ লাখ টাকা। তো তোমরা এত দামী গাড়ি কেন কেনো?

বললাম লাইফটাইমের জন্য… জানেন এর একটি বাস ২০ থেকে ৩০ বছর রাস্তায় চলার উপযোগী আর আপনাদের তৈরী বাস ৫ বছরেই মুড়ির টিন! বুঝলেন বৌদি?.

দাদাবাবু কহিলো আসলে বাংলাদেশের মানুষ খুব হিসাব করেই গাড়ি টাড়ি কেনে।

বললাম ইউর আইডিয়া ইজ রং!..

আপনি যে এসআরে এসেছেন সেই কোম্পানীর কত বাস আছে জানেন?..
বৌদি বলে কত?.. ৩৫০+ একটির দাম গড়ে ৬০ লাখ হলে কত দাড়ায়?...
শ্যমলীর বাস ৬০০+ তবে সবচাইতে বড় কোম্পানী হচ্ছে হানিফ এন্টার প্রাইজ।
হানিফের গাড়ি কতগুলি?..
আজ থেকে বছর খানেক আগে শুনেছিলাম লংরুটে ১৭৯৩ খানা আর ঢাকায় চলে শতিনেক।
দাদা বাবু বৌদির চোখ কপালে ওঠার দশা!..

বললাম এতেই এই অবস্হা?.. ঢাকা শহরে যখন পাজেরো, করোল্লা, পোর্সে, মার্সিডিজ বেন্জ্ঞ এর কার আর জিপের বহর দেখবেন তখন আবার অজ্ঞান হয়ে না যান।

শোনেন দাদা বৌদি… আমরা মানুষ গরীব হতে পারি কিন্তু আমগো রুচী পছন্দ অনেক ভালা… টাকা দিয়া জিনিস কিনুম দেইখ্যা শুইন্না ভালাটাই কিনুম… এইডা আমগো নীতি বুঝলেন?..
বৌদি কয় বুঝলাম কিন্তু এত গর্ব করার কিছু নেই নিজেদের তৈরীতো একটাও নেই!..

বললাম বৌদি!
ভাড়তীয়রাই হিংসার লালন ও চর্চায় বিখ্যাত!..

পাজেরো দেখেছেন?..
বউদি বলে না! বললাম ওই দেখেন সাদা জিপটা।
বউদি বলে ওমা এত্ত সুন্দর গাড়ি!

বললাম দামডাও মাশাল্লাহ….
কতদাম বাপু? মাত্র
৮৬-৮৭ লাখ… আর এই গাড়ি কিন্তুক আমগো চিটাগাংয়ে তৈরী বুঝলেন?..

বৌদি কয় কিভাবে?..

কইলাম জাপানের মিৎসুবিসি আর আমাদের প্রগতি জয়েনভেন্চারে তৈরী করতেছে এজন্য ৮৬-৮৭ লাখেই ব্রান্ড নিউ পাওয়া যাচ্ছে আর যদি এটি জাপান থেকে আনা হতো তাহলে ৩ কোটি টাকার মত দাম পড়তো। আর এখানে যত বিলাসবহুল বাস দেখছেন সব বাসের বডিই আমাদের দেশে তৈরী অধিকাংশই আফতাবের তৈরী বুঝলেন। দুজনেই তব্দা খাইছে….


হোটেলের সাউন্ডবক্সে ধ্বণিত হচ্ছে ---- থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামি ----- পরিবহনের D1 সিটের যাত্রী মিঃ যুবায়ের… আপনার জন্য ওয়েট করছি…দ্রুত বাসে আসন গ্রহন করুন।
তারাতাড়ি খাবারের বিল দিয়ে দৌড়ে গিয়ে বাসে চড়লাম…
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২৮