somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাদল দিনের গান...আষাঢ়ে গল্প।

২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারটা দিন ধরেই বৃষ্টি! আষাঢ়ের গোমড়ামুখো আকাশ। গাছপালা প্রকৃতিটা কেমন জানি নিঃতব্ধ
জাম গাছটাতে প্রচুর পরিমানে জাম পেকেছে। পাখ-পাখালীরা কুলু-কুলু শব্দে পাকা জামে ঠোকর
দিচ্ছে কিছু অংশ পাখির পেটে যাচ্ছে আর বাকীটা জাম পেকে যাওয়ায় বোটা নরম হওয়ায় টুপ
করে আঙিনায় ঝরে পড়ছে। সুরুজ উদ্দিন বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে গড় গড় শব্দে হুকো
টানছেন আর এদিক সেদিক তাকিয়ে স্ত্রী সফুরা বেগম কে হাক ডাক দিচ্ছেন। ওগো সফুরা! রান্না পাতির কদ্দুর!.
এইতো হয়ে এসেছে প্রায়!
তা কি রাধছো গো?..
বায়গন ভাত্তা আর পালানের কুমড়ো গাছের ফুল দিয়ে বড়া!.
কেন মাছ গোশ্ত কিছু নাই?..
মাছ গোস্ততো শেষ হইয়া গেছে!. আপনি হাটে ঘাটেও যাচ্ছেননা!. কিভাবো আইবো!..
আইচ্ছা আইজ বাদামতলীর হাটে যামু মাছ গোস্ত যা যা লাগে মরিওম কে বলে লিখা দিও।

গ্রামের জুম্মা থেকে সুরুজ উদ্দিন ও তার ছেলে সাদেক বাড়ির পথ ধরেছেন।
ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি শুরু হলো। আশে পাশে কোন সুবিধামত আশ্রয় না পেয়ে বাপ বেটায় বৃষ্টিতে নিজেকে
সপে দিয়ে পথ চলছে। বাজান আইজগ্যা বাদামতলী হাটে যাইবা?.
হ বাবা যামু! ক্যন কি ওইছে! আমারে লগে নিবা?..
বাদামতলীতো মেলা পথরে বাপ! হাইট্যা এদ্দুর যাইতে পারবি বাপ?..
হ পারুম! নিশ্চিৎ পারুম! তুমি পারলে মুই পারুমনা ক্যন!. বাজান আইজ কিন্তু হাট থিকা
ছুড়ে মারা জাল কিনা দিবা! বৃষ্টিতে গাঙে পানি ওইছে খয়বার মিয়া মেলা কৈরা মাছ ধরতাছে দৈনিক!
সাদেক? জি বাজান!. জাল না হয় কিনলাম! তুইকি পারবি জাল নিয়া মাছ ধরতে..
হ বাজান পারি! খয়বর চায়ায় আমারে জাল ছোড়া শিখাইছে!..
আইচ্ছা দুপুরের খানা খাইয়া বাপ বেটায় মিল্যা বাদামতলী হাটে যামুনে যাহ! তোর জালও কিনা দিমু।

মাটির মেঝেতে পাটি বিছিয়ে লাল কাপড়ের দস্তখান বিছিয়ে ভাত তরকারী সাজিয়ে বসে আছে সুরুজউদ্দিনের
একমাত্র কন্যা মরিওম। সফুরা বেগম রান্না শেষ করে মেয়েকে খানা সাজানোর কথা বলে কুয়োতলায় গোসল করে নামাজ আদায় করে ফিরলো।মরিওম আগেই নামাজ আদায় করে সেলোয়ার কামিজ পড়ে মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে পিড়িতে বসে অপেক্ষা করছে জুম্মা থেকে বাজান আর ভায়ের ফেরার জন্য। সফুরা বেগম গাছের পাকা আম ছিলিয়ে থালিতে সাজায়ে রাখছেন। গাভীর দুধ গরম করে নিয়ে এইমাত্র এসে জিজ্ঞাসা করলেন। কিরে সফুরা তোর বাজান আহে নাই!. অহনো তো আসলোনা… আল্লায় জানে! যেইহারে বৃষ্টি পড়তাছে বাজান আর ভাইয়ে মনে হয় কুনহানে আটকা পইড়া গেছে!.
তাই ওইবো মুনে ওয়!.
হঠাৎ বাড়ির উঠোনে ভিজে একাকার সুরুজ উদ্দিন ও ছেলে সাদেককে দেখে সফুরা বেগম হায় হায় করে উঠলো। তোমাগো হুস হইবোনা কুনুদিন! আষাইঢ়্যা বৃষ্টিতে ভিজা বাপ বেটা বেড়ামে পড়বা!
মরিওম গামছা আর লুঙি নিয়ে এসে বাজান ও ভাইকে দিল।
জামাকাপড় বদল করা হইলে সুরুজ উদ্দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুপুরের খাবার খেলেন।

তিনটে বাজতেই সুরুজউদ্দিন একমাত্র পুত্র সাদেককে সাথে নিয়ে বাদামতলীর হাটের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লেন।
টুপটুপ বৃষ্টি পড়ছিল তখন অবধি। সুরুজ উদ্দিন একটি ছাতার নিচে অরেকটিতে সাদেক। সুরুজ উদ্দিন বললেন বাবা সাদেক পা টিপে টিপে হাটিস নইলে কিন্তু পিছলে পড়ে যাবি মাটি বড্ড পিছলে!.
হাটে গিয়ে বাপ বেটা জিলাপী খেল পেটপুরে বাড়ির জন্যও একসের জিলাপি নিয়ে নিল। গরুর গোস্ত কেনা
হলে মাছবাজারে গেলে সাদেক বাজানকে মাছ কিনতে বারন করলো। জালতো কিনছিই মাছ ধরুম প্রতিদিন
মাছ কিনা টাকা নষ্ট কইরোনা বাজান! সুরুজ উদ্দিন পোলাডারে বহুৎ ভালোবাসে কি সুন্দর ফুটফুটে পোলা
মাথায় বুদ্ধিও বেশ ভালা! অগত্যা ছেলের কথামত মাছ কেনা থেকে বিরত রইলেন সুরুজ উদ্দিন।
মাইয়াডার জন্যও চুড়ি ফিতা কিনলেন আর স্ত্রী সফুরার জন্য আলতা কিনলেন তবে ছেলের সামনে আলতা কিনতে কিছুটা ইতস্ততই হলেন সুরুজ উদ্দিন। হাটের কেনা কাটা শেষ হলে বাড়ির পথে হাটা ধরলেন বাপ বেটা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কখন জানি বৃষ্টি এসে যায়! অনেকটা পথ পেরোলেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি!.. মূষলধারে… ছাতাও কুলুচ্ছেনা… অনেকটা কাকভেজা হয়েই বাড়ি ফিরলেন বাপ বেটা।

বারান্দায় বেতের চেয়ারটাতে বসে আছেন সুরুজ উদ্দিন। সফুরা বেগম হুকো সাজিয়ে দিলেন। সুরুজ উদ্দিন
মনের সুখে হুকো টানছেন আর ভাবছেন মাইয়াডাও প্রায় সেয়ানা হইয়া গেল!. সেইদিনকার মেয়ে…দেখতে দেখতে কতবড় হইয়া গেল!. আর কিছুদিন পর মাইয়ার জন্য পাত্র খুজতে হবে!. পোলাডাও কেমুন বড়
হইয়া গেল!. সেইদিন কাজী বাড়িতে বিয়া করলাম সফুরাকে তার পরের বছর মাইয়াডা মরিওম হইলো। বছর তিনেকের মধ্যই পোলা দিল আল্লায়… আল্লাহর রহমতে সংসারে অভাব নেই বেশ ভালোই চলছে।
হুকো টানতে টানতে মনের অজান্তেই গান ধরলেন সুরুজ উদ্দিন ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লেজালালুহু…
শেষ করাযে যায়না গেয়ে তোমার গুণগান…’

রাত বেশ ভালই হয়েছে সুরুজউদ্দিন সবেমাত্র ঘুমিয়েছেন। সফুরা বেগম ঘুম ভাঙালেন!.
এই যে!. উডেন!. কি ওইলো উডেন না ক্যন!.. পোলাডা জ্বরে কাপতাছে..
তড়িঘরি করে উঠে সাদেকের মাথায় হাত দিয়ে দেখে প্রচন্ড জ্বর উঠেছে… মরিওম সাদেকের কপালে জলপট্টি করে দিচ্ছে.. সুরুজ উদ্দিন একটা হারিকেন নিয়ে ডাক্তার ডেকে আনলেন। ডাক্তার দেখে সিটামল ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে গেলেন। ডাক্তার বলে গেছেন কোন সমস্যা নাই সিটামল খাইলেই জ্বর ছেড়ে যাবে।
জ্বরের ঘোরে সাদেক আবোল তাবোল বকছে.. দেখ বাজান এই খ্যপে কত্ত মাছ উঠছে জালে দেখ দেখ!.
ট্যংরা, পুটি, কৈ! দেখ বাজান দেখ দেখ! ম্যলা মাছ! দুইদিন আমগো অনায়াসে চইল্যা যাইবো…
সুরুজ উদ্দিনের চোখের কোনটা চিকচিক করে গড়ালো দুফোটা অশ্রু!...
পোলাডা মোরে বড্ড ভালবাসে!.. জ্বরের ঘোরেও আমারে লইয়া মাছ ধরার স্বপন দেখিতেছে…

১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসলেই কি নির্বাচন হবে?

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২৩

আপনারা যদি নির্বাচনের পর সংস্কার সত্যি করতে পারবেন তাহলে ৫৩ বছর পারেননি কেনো?

- উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

এই যে কয়েকদিনের মধ্যে এই কথাগুলো উঠছে এর মানে হলো আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না ভাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

রংপুর জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে তৈরী মডেল মসজিদের ছবিটি উইকি থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশে ইসলামের নামে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও বাস্তবে তার অনেকগুলোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

AI-এর লগে গ্যাঁজাইলাম =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(স্ক্রিনসট)

সামহোয়্যার ইন ব্লগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালন সাঁইজির আধ্যাতিকতা,পরিচয় ও মানবতাবাদ

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

লালন সাঁই ছিলেন একজন বাউল সাধক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। তাঁর আধ্যাত্মিকতা মূলত গুরু-শিষ্য পরম্পরা, সাধনা ও অন্তর্জ্ঞানভিত্তিক। তিনি ধর্ম, জাতি, বর্ণভেদ মানতেন না এবং বিশ্বাস করতেন, "মানুষের ওপরে কিছু নাই।"... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ছোট কালের ঈদ।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫



ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।



আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×