somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রুমী ইয়াসমীন
আয় ফিরে আয় শৈশব আমারnআয় ফিরে আয় আমার মেয়েবেলা nএক্কা দোক্কা, চড়কি চড়া, ডাঙ্গুলী আর পুতুল খেলা; nআয় ফিরে আয় শৈশব আমার nআয় ফিরে আয় আমার ছেলেবেলা nমাছ ধরা আর চড়ুইভাতী, ফড়িং, পাখির পিছে ছুটা; nআয় ফিরে আয় শৈশব আমার nআয় ফিরে আয় আবার আমার কাছে nগোল্লাছুট

৯১' এর ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আমার শৈশবস্মৃতি কথন.....

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যতবারই দেশে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া হয় ও ঘূর্ণিঝড় দেখি ততবারই আমার অতি ছোট্টবেলার (তখন বয়স প্রায় ৪ বছর) স্মৃতিময় সেই ১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড়ের কথা মনে পড়ে ও মুহূর্তেই চোখে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
গত দু'দিন ধরে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় "বুলবুল" এর পূর্বাভাস অনুযায়ী সারাদিন আকাশ গুমোট করা হালকা মাঝারি টুপটাপ বৃষ্টি ও বাতাস দেখে বারবারই সেই শৈশবের ৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিল রাতের কথা খুব মনে পড়ছে।

আমাদের এলাকাটি ছিল চারদিকে সম্পূর্ণই ছোট ছোট পাহাড়ে ঘেরা। বলা যায় পাহাড়ি টিলায় এবং পাহাড়ের পাদদেশে সবার বসবাস। আমাদের এলাকায় আমার আব্বাই ছিলেন একমাত্র সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি ও সবাই আমার আব্বাকে অনেক মান্য করতেন। তাই এলাকায় যতকিছুই ঘটুক না কেন সবাই আমার আব্বার সিদ্ধান্ত দেয়া ছাড়া কোনোকিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতেন না।
সেদিন যখন বিকেল হতেই ঝড়ের তান্ডব প্রচন্ডভাবে দেখা দেয় তখন এলাকার সবাই অনেক ভীত হয়ে পড়েন এমতাবস্থায় আমার আব্বা আমাদের আশেপাশের কয়েকঘরের মানুষজনকে (প্রায় ৩৫ জন) আমাদের ঘরে নিয়ে আসেন। আমাদের ঘরটা ছিল এলাকার সবচেয়ে বড় চৌ-চালা ঘর। সবাই যখন আমাদের ঘরে অবস্থান নেয় তা দেখে আমার আনন্দ দেখে কে! কারণ এতে আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলার সাথী আলো, পান্না, জেসমিন, শিপন, শিউলি, হাসিনা, রেহানা, মর্জিনা ও আরো ছোটছোট বাচ্চারা এবং ওদের মা-বাবা, ভাইবোন সবাই সারারাত আমাদের ঘরে ছিল।
আমার মতন ছোট বাচ্চাদেরকে খাটের নিচে বিছানা পাতিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছিল আর সবাইকে বারবার আল্লাহ বিল্লাহ করতে বলা হচ্ছিল যখন প্রচন্ড বজ্রপাতের শব্দে সবাই আঁআঁআঁ.... করে চিৎকার করে ওঠে দেখে! আমার মা সহ এলাকার খালাম্মা,চাচী, মামী মহিলারা সবাই কোরআন শরীফ পাঠ করছিলেন সাথে সারারাত আমাদের রেডিওতে সবাই কান পেতে ছিল ঘূর্ণিঝড়ের আপডেট খবর শোনার জন্য পাশাপাশি রেডিওতে সারারাত হামদ-নাত ও গজলও সম্প্রচারিত হচ্ছিল।
অন্যদিকে পুরুষদের কেউ কেউ ঘরের চারকোণায় উচ্চস্বরে আযান দিচ্ছিলেন, কেউ জোরে জোরে দোয়া ইউনুস -‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজজলিমীন’ পড়তেছিলেন যখন চারদিকে প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হচ্ছিল, ঘরের টিনের চালায় ঝনঝনিয়ে বড় বড় শীলা ও গাছের ডালপালা মড়াৎ মড়াৎ শব্দে ভেঙে পড়ছিল এবং আশেপাশের প্রায় সবার ঘরই ধড়াম ধড়াম শব্দ করে পড়ে যাচ্ছিল। কারো কারো একেবারে ঘরের চালাসহ সম্পূর্ণ ঘর উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
এইদিকে আমাদের ঘরের কাছেই প্রায় ১৫ গজ দূরত্বে থাকা পাহাড়ের উপর স্থাপিত সম্পূর্ণ এ্যালবেস্টর দ্বারা তৈরী তখনকার সময়ে কাপ্তাই উপজেলার সবচেয়ে বড় নামকরা সিনেমাহলটি প্রচন্ডরকম ম্যাটম্যাট শব্দে ভেঙে পড়ে সম্পূর্ণ গুড়িয়ে যায় এতে করে আমরা সবাই ভয়ে আরো আঁৎকে উঠি। সেই সিনেমাহল ভেঙে পড়ার শব্দটা এখনো যেন আমার কানে বাজে।
যখন মনে হচ্ছিল প্রবল বাতাসে আমাদের ঘরের চালাও উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তখন আমার আব্বাসহ এলাকার কয়েকজন মামা,খালু ও কাকারা মিলে আমাদের ঘরের চালা ধরে লটকে ছিলেন যা এখনো স্পষ্ট আমার চোখে ভেসে উঠে।
আমার খেলার সাথী আলোদের ঘরটা একেবারে আমাদের ঘরের সাথেই ছিল আর সবার আগে ওদের ঘরটাই বাতাসে পড়ে যায় আর ওর নানা-নানী ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক মুরুব্বী মানুষ। ওনারা দুজন ভয়ে কান্নাই শুরু করে দিলেন যখন ওনাদের ঘরটা সম্পূর্ণ পড়ে যায়।
কিন্তু আমার আর আলোর মধ্যে যেন কোনো ভয়ই কাজ করছিল না কারণ আলোকে সাথে পেলে দুনিয়া একদিকে উল্টে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক আরেক দিকে আমরা দু'জন বেখবর হয়ে যাই এমনকি কেউ সহজে আমাদের আলাদাও করতে পারত না। তাই সেদিন আমরা দু'জন যেন মহা আনন্দে উৎসুক হয়ে সারাঘরে ছুটোছুটি করছিলাম ও কে কি করছে তা খেয়াল করছিলাম। এতে কেউ কেউ আমাদেরকে ধমকও দিচ্ছিলেন যেন চুপচাপ গিয়ে শুয়ে থাকি!
এইভাবে আমাদের ঘরে সবার সারারাত কেটে গেল নানান হাহাকার ও হাজার দুঃশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে।
যখন সকাল হলো তখন বাহিরে গিয়ে দেখলাম আমাদের ও এলাকার সবার সব বড় বড় আম কাঁঠাল গাছ ভেঙে উপড়ে পড়ে আছে সারা উঠুন জুড়ে ও বড় বড় শিলের চাক জমে ভরে রয়েছে যা আমার এই ছোটজীবনে এতো বড়বড় শিলা ও ঝড়ের এমন ধ্বংসাত্মক তান্ডব আর দেখিনি। আমাদের সারা এলাকা ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যেন মরুভূমির মতন খাঁ খাঁ করছিল যা সেই ছোট্ট আমিটি অনূভব করতে পারছিলাম ও এখনো তা ভাবতে গেলে আমি শিউরে উঠি!
যতদূর জানি সেইবারের ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরনকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে ছিল একটি। এটি ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল বাংলাদেশে দক্ষিণপূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০কিমি/ঘন্টা বেগে আঘাত করেছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করে এবং এর ফলে প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়। [ তথ্য - উইকিপিডিয়া]

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঘূর্ণিঝড় "বুলবুল" এর কবল হতে জান মালে হেফাজতে রাখুন এই প্রার্থনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×