somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুনর্জন্ম ......... (ফ্যান্টাসী ছোট গল্প)

১১ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
মেয়েটা ছেলেটার থেকে বয়সে পনের বিশ দিনের মত বড়ই হবে, কিন্তু এই নিয়ে তার সে কি ভাব ! সুজোগ পেলেই ছেলেটাকে খোটা দিতে ভুলে না।

ছেলেটাও কম যায় না। সে বলে মাত্রতো পনের বিশ দিনের বড় আর এতেই এতো ভাব ? আর ভালোবাসায় বয়স কোন ব্যাপার না, তুমি তা জানো না ? তারপর ছেলেটাও একটু ভাব নিয়ে বলে, "আর আমিতো নিতান্তই দয়াপরবসত হয়ে তোমার সাথে আছি।" এইটা বলে ছেলেটা একটু বুক টান টান করে দাড়ায় ।

মেয়েটা একটু ভেংচি কেটে বলে কে বলেছে আমার সাথে পড়ে থাকতে, যাও না চলে দেখি কে তোমাকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসে !

২.
জন্মের পর থেকেই ওরা দুইজন যেন দুই দেহ এক আত্মা। পাশাপাশি বড় হয়েছে, এক জন আর এক জনকে ছাড়া বেঁচে থাকা যেন ভাবতেও পারে না। যদি কোনদিন ছেলেটার একটু খাবার কম পড়ে যায় মেয়েটা নিজে কম খেয়ে ছেলেটাকে খাওয়ায়। ছেলেটা প্রথমে একটু না না করলেও পরে ঠিকই খেয়ে নেয়। ছেলেটা একটু পেটুকতো তাই। মেয়েটার কি যে ভালো লাগে এই খাওয়ার দৃশ্য দেখতে ! তার চোখ ভিজে যায়, সে আস্তে করে মাথাটা ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে যাতে ছেলেটার চোখে ধরা না পড়তে হয়। ছেলেটার কোনদিকে খেয়াল নেই, এক মনে খেয়ে যায়। খাওয়া শেষ হলে সে জিজ্ঞাস করে তুমি পেট ভরে খেয়েছো তো ? মেয়েটা বলে, আমার অল্পতেই হয়, তোমার মত আমি অত খাই খাই করি না। ছেলেটা একটু লজ্জা পায়।

দুপুর বেলায় যখন প্রখর রোদ উঠে তখন ছেলেটা নিজের দেহ দিয়ে মেয়েটাকে আড়াল করে রাখে আর মেয়েটা আরাম করে ঘুমায়। ইস ! কি সুন্দর লাগে তাকে যখন সে ঘুমায়, ঠিক যেন সে অন্য গ্রহের কেউ । ছেলেটা আলতো করে মেয়েটিকে ছুঁতে চাই, কিন্তু ছুতে গিয়েও আবার ফিরে আসে , যদি তার ঘুম ভেঙ্গে যায় ! ঐ দিকে দিন দিন তার গায়ের রং রোদে পুড়ে আরও কালচে সবুজ হয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু যায় আসে না, গায়ের রং দিয়ে সে কি করবে ? সে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে তারপরও মেয়েটার গায়ে একফোটা রোদ লাগতে দিবে না। মেয়েদের গায়ের রং টাই আসল। ইস্ কি সুন্দর দিন দিন কাচা হলুদের মত হচ্ছে ওর গায়ে রং ! ছেলেটা শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

৩.
পাড়ার কিছু বখাটে প্রায়ই এইদিক দিয়ে যায় আর মেয়েটার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকে আর নিজেরা নিজেরা কি কি যেন বলাবলি করে ! ভয়ে মেয়েটা গুটিশুটি মেরে যায়, ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। ছেলেটাও খুব সাহস করে বলে, "কোন ভয় নেই তোমার, যতক্ষন পর্যন্ত আমি আছি ততক্ষন ওরা তোমার কিছু করতে পারবেনা"। কিন্তু ছেলেটা জানে আসলে ও কত অসহায়। ওর বুকটা হুহু করে উঠে।

৪.
ছেলেটা বলে , "তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে, তোমার গা থেকে মন মাতানো কেমন একটা মৌ মৌ গন্ধ আসছে !"

মেয়েটা একটু লজ্জা পায় তার পর বলে, "তুমিতো স্বার্থ ছাড়া কিছু বলো না, তো হঠাৎ আমার এত প্রশংসা ! কি ব্যাপার ?"

আরে নাহঃ ! তুমি সবকিছুতেই আমার দোষ খুজ কেন ? আসলেই তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।

মেয়েটার গালে একটু গোলাপী আভা ফুটে উঠে, কিন্তু কিছু বলে না।

ছেলেটাও চুপ থাকে কিছুক্ষন। অনেকক্ষন পর ছেলেটি বলে, "তোমাকে একটু ছুঁই ?"

একটা ধমক দিয়ে মেয়েটা বলে, ও এই তাহলে তোমার মতলব, অসভ্য ! বেহায়া ! দেখছনা সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে ?

ছেলেটা একটু থতমত খেয়ে যায়। মুখ ভার করে মেয়েটার পাশ থেকে একটু সরে আসে আর ভাবে, ও এত কঠোর কেন ? একটু ছুয়ে দিলে কি হয় ?

মেয়েটা ভাবে, ও এখনও ছোয় না কেন ? এত বোকা কেন ও ? ইস্ এইভাবে ধমক না দিলেও পারতাম।

৫.
হঠাৎ করে একদিন সেই বখাটেগুলো আবার হাজির। একজন বললো, "দেখ, মালটা মনে হয় পাঁকছে ?"

ঐ কেউ একজন একটা বাঁশ নিয়ে আয় , জলদি !

সেই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন, বাঁশ দিয়ে বাড়ি মেরে মেয়ে আমটাকে গাছ থেকে ফেলে দেয় । মেয়ে আমটার গলা দিয়ে বেশি না, মাত্র দুই এক ফোঁটা সাদা রক্ত গড়িয়ে পড়ে।

ঐ দিকে ছেলে আমটা চিৎকার করে যাচ্ছে গলা ফাটিয়ে। কিন্তু কে শুনে তার ঐ কান্না ? ঐ অসভ্যগুলো চোখের সামনে তার প্রেয়সীর দেহ খুবলে খুবলে খেল ! তার কিছুই করার ছিলো না। অবশেষে তারা মেয়েটার কংকালটাকে একপাশে ছুড়ে ফেলে দিলো।

দিন যায় রাত যায়, ছেলেটার কিচ্ছু ভালো লাগে না । আগের মতো খেতেও ভালো লাগে না। জীবন এখন তার কাছে খুব দীর্ঘ হয়। তার এখন একটাই চাওয়া, "এ জনমে তো আর তার সাথে মিলন হলো না, পরজন্মে যেন তাকে পাই"। মৃত্যুই এখন তার একমাত্র কামনা ।

একদিন ভোরে সে ঘুম থেকে উঠে দেখে, তার প্রেয়সীর কংকাল থেকে নতুন গাছ জন্মিয়েছে। এই দেখে ছেলেটা যে কি খুশি ! সে দুর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে ঐ গাছাটা দেখে আর প্রান ভরে তার গায়ের গন্ধ অনুভব করে। আহঃ আবার সেই মন মাতানো মৌ মৌ সৌরভ !

৬.
একদিন এক বৃদ্ধ এসে ঐ ছোট গাছটাও তুলে নিয়ে তার আম বাগানে নতুন করে লাগায়। ছেলেটা আবার তার প্রেয়সীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, কিন্তু অতদিনে সে অনেক সহনশীল হতে শিখেছে, আগের মত এত কষ্ট পায় না, শুধুই দীর্ঘশ্বাস তার বুক চিড়ে বের হয়ে আসে।

একদিন কোন এক ব্যাপারী এসে গাছের সব আমের সাথে তাকেও পেড়ে নিয়ে যায়। তার পর তার আর কিছু মনে নেই।

শেষ অংশ:
অনেক দিন পরে একটা ছোট আম গাছ পৃথিবী মাটি ফুড়ে বের হয়। আহঃ, কি সুন্দর বাতাস, কি মিষ্টি আলো। সে নিজেকে কোন এক আম বাগানে দেখতে পায়। তার চারদিকে শত শত বিভিন্ন আম গাছ। হঠাৎ অতি চেনা একটা গন্ধ তার নাকে আসে, মন মাতানো মৌ মৌ গন্ধ। কিন্তু সে কিছুতেই স্মরন করতে পারে না এই গন্ধ সে আগে কোথায় পেয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৫০
৩৮টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×