১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
সৌদির মুখে বাংলা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। ফর্সা, স্বাস্থ্যবান চেহারা, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি এবং ট্রাডিশনাল সাদা তোপ পরিহিত লোকটিকে দেখলে কে না সৌদি ভাববে? কিন্তু ইনি আমাদের নাজমুল ভাই। ওনাকে সে কথা জানালে মুচকি হাসলেন। উনি আমাদেরকে জানালেন একাডেমিক ছুটির কারনে হোটেল সম্পূর্ণ ভর্তি। এটাই ফারাসানের সবচেয়ে অভিজাত ও সুন্দর হোটেল। এবং বিচের কাছে একমাত্র হোটেল। আমাদের কথা চিন্তা করে উনি একটি রুমের ব্যবস্থা করেছে। আমরা তা দেখতে চাইলাম।
উনি আমাদেরকে মূল ভবনের পেছনদিকে বিচের দিকে নিয়ে গেলেন। হোটেল লাগোয়া বিচ, কত চমৎকার, সাজানো গোছানো। সৌদি ফ্যামিলি বিচে গোসল করছিল, মহিলারা বোরকা পরেই পানিতে নেমেছে। নাজমুল ভাই আমাদেরকে তাবু দিয়ে তৈরি ১ রুমের ১ টি কটেজে নিয়ে আসলেন। স্বয়ংসম্পূর্ণ কটেজটিতে এ্যাটাচড বাথ ও বারান্দা ছিল। দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। রুম থেকেই বিচ দেখা যাচ্ছিল। বারান্দায় ২ টি চেয়ার পাতা আছে-চাইলে অলস বসে থাকা যাবে, সাগরের ঢেউ গোনা যাবে। এক কথায় অসাধারণ। আমাদের সামনেই আরো কয়েকটি কটেজ, কিন্তু এমনভাবে তৈরি যে আরেকজনের বারান্দা দেখা যাবে না।
আমরা কটেজটি ভাড়া নিয়ে নিলাম। রেগুলার ভাড়া ৬০০ রিয়াল, কিন্তু নাজমুল ভাই ডিসকাউন্ট দিয়ে ৪০০ রিয়াল রাখলেন।
আমি সাধারণত আমার লেখায় কারো ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করিনা। নাজমুল ভাইয়ের অনুমতি স্বাপেক্ষে ওনার একটি ছবি এখানে দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।
নাজমুল ভাই, সৌদি ট্র্যাডিশনাল পানীয় হাতে ...
শুক্রবার। আমি, আলী ও নাজমুল ভাই মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে খাবার কিনতে যাই। খেবসা আর আল ফাহামের জন্য প্রচন্ড ভীড়। কোনমতে খাবার নিয়ে রুমে আসি। নাজমুল ভাইকেও আমাদের সাথে খেতে বলি। নাজমুল ভাই সাথে করে বিভিন্ন মিষ্টান্ন ও কেক নিয়ে আসলেন। সবাই মিলে জম্পেস একটা খাওয়া হল।
খাওয়া দাওয়া শেষ করেই বিচে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে বের হলাম শহর পরিভ্রমণে। ফারাসান থেকে জিজান যাওয়ার টিকেটও কেটে রাখতে হবে। এদিকে আমাদের অনুপস্থিতে দিবা ও মোশতাক ভাই ছবি তোলার রেকর্ড গড়ে ফেলেছে।
প্রথমেই গেলাম টিকেট কাটতে। বলল, আসরের পরে দিবে। আমরা এই সময়টা কাজে লাগাতে চাইলাম। আশে পাশেই কোথাও অনিন্দ সুন্দর আল-রিফাই হাউজ আছে। সেটা খুঁজতে খুঁজতে এ গলি সে গলি ঘুরে অটোমান ক্যাসলে চলে গেলাম। ছোট পাহাড়ের উপর নিঃসঙ্গভাবে ভাঙ্গা দূর্গটি দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই রেড সি। এখান থেকে সমূদ্র ও আইল্যান্ড উভয়ই পর্যবেক্ষণ করা যেত। ভাবতে অবাক লাগে রেড সি’র এই সাধারণ দ্বীপটিতেও অটোমানরা তাদের সীমানা বিস্তৃত করেছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী অটোমানদের শৌর্য্য বির্য্যের কথা মনে পরে গেল- যাদের সীমানার বিস্তৃতি ঘটেছিল সেই সদূর স্পেন পর্যন্ত।
নিঃসঙ্গ দূর্গটির পাশেই একটি কুপ, যা সেই সময় খাবার পানির জোগান দিত। আমরা এখানে বেশ কিছু ছবি তুলে আবার আল-রিফাই হাউজ খুঁজতে বের হলাম। এবার আলী এক লোকাল সৌদির সাহায্য নিল। সেই সৌদি লোকটি আমাদেরকে আল-রিফাই হাউজে পৌছে দিল।
আহমেদ মোনোয়ার রিফাই ও তার পরিবার ছিল মনি, মুক্তা’র ব্যবসায়ী। তারা কোরাল দিয়ে আল-রিফাই হাউজটির ডেকোরেশন করে। শতবর্ষ পুরনো এই বাড়ীটি এতটাই মনমুগ্ধকর যে, শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। এর একটি রেপ্লিকা রিয়াদে টুরিস্টদের জন্য বানিয়ে রাখা হয়েছে। প্রচুর ছবি তুললাম, কিন্তু মনে হল এর প্রকৃত সৌন্দর্য্য ছবিতে ধরা পড়েনি। এত চমৎকার মনঘাতী সৌন্দর্য্য সাথে নিয়ে যেতে পারব না–এমন একটা হাহাকার নিয়ে গাড়ীতে উঠলাম।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭