somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেনি মাজিনের সূর্যোদয় (আরব ডায়েরি-৬৪)

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন থেকেই ঘুরাঘুরি হচ্ছিল না। নতুন সেমিস্টার শুরু হবার কারনে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিন আদিল ভাই কথা প্রসঙ্গে বললেন আমাদের আবহা’র পাশেই একটা জায়গা আছে যেখান থেকে ভালো সূর্যোদয় দেখা যেতে পারে। উনি এক বিকালে ঘুরতে ঘুরতে সেখানে গিয়েছিলেন এবং জায়গাটি খুঁজে পেয়েছেন, এখন সূর্যোদয় দেখার পালা।

দিন যায়, সপ্তাহ যায়- আদিল ভাই নিজে থেকে সেখানে আর নিয়ে যান না। এক সন্ধ্যায় আমি ওনাকে এসএমএস পাঠালাম, “আগামীকাল সকাল ৫.৩০ এ আপনাদের বাসায় আসছি, সূর্যোদয় দেখতে যাব।” রাতে আদিল ভাই জানালেন, “ঠিক আছে, চলে আস।”

পরেরদিন ভোরে আদিল ভাই ও শম্পা ভাবীকে আমার গাড়ীতে তুলে নিলাম। শাকিলাও আমার সাথে আছে। শীত করছিল। ১৫ মিনিট ড্রাইভ করে, উঁচু, সর্পিল রাস্তা বেয়ে সেই জায়গা-বেনি মাজিন পৌছে গেলাম। দূর্ভাগ্যজনক হলেও আগে কেউই আমরা পারফেক্ট সূর্যোদয় দেখিনি। তাই সবাই কিছুটা এক্সাইটেড ছিলাম। আদিল ভাই আরো বেশী- দিগন্ত রেখার এত উপর থেকে আসলেই দেখা যাবে তো? কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাহাড়ের আড়াল থেকে প্রত্যাশিত সূর্য উঠল। সূর্যোদয় যে এত চমৎকার হতে পারে, আগে বুঝিনি। সমুদ্রের সূর্যোদয় নিশ্চয়ই আরো মনঘাতী। ১/২ মিনিটের মাঝেই ব্যাপারটা ঘটে গেল- সমস্ত সূর্যটা উঠে চারদিক আলোয় ভাসিয়ে দিল।



এত কিছুর পরও মন ভরল না। আরো অনেককে নিয়ে আসতে পারলে কতোই না ভালো হত। ভাবী বললেন, “আমরা এখানে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে নাস্তা করতে পারি।” আমি সাথে সাথেই রাজী। নতুন করে প্ল্যান করলাম। ঠিক করলাম নভেম্বরের ১ তারিখ শুক্রবার সকালে আমরা সূর্যোদয় দেখতে যাব। আরো কয়েকজনকে বললাম। সবাই রাজী।

আগের রাতেই আমরা ঠিক করে নিয়েছি কে কি করব। শাকিলা ডিম ভাজি, ধনে পাতা ভর্তা আর চা করবে। দীবা বিশেষ ধরনের খিচুড়ি রান্না করবে। ভাবী করবে আচারি চিকেন। চিটাগাং এর সাঈদ ও শিমু করবে মেজবানী গরু। সাথে ছিল ব্যাচেলর মামুন, তাকেও বাদ দেইনি। সে খাবার পানির ব্যবস্থা করেছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমরা সবাই যার যার গাড়ী নিয়ে যাব। চারদিকে গাড়ী দিয়ে দেয়াল তৈরি করে মাঝখানে বসে খাব।

আদিল ভাই সময়ের ব্যাপারে সবসময়ই সচেতন। কথা দিয়ে সব সময়ই তা রাখতে চেষ্টা করেন। আমিও তাই। সবাইকে রাতেই ফোন করে দিলাম যাতে ৫.৩০ এর মাঝে আমার বাসার সামনে চলে আসে। দীবা ও মোশতাক ভাইকে ৫.২০ এর সময় দিলাম। তাদের ব্যাপারে সব সময়ই আমার সন্দেহ কাজ করে।

আমি সময়ের অনেক আগেই নীচে নেমেছি। আদিল ভাই গাড়ী নিয়ে ৫ মিনিটের মাঝেই পৌছে গেলেন। সাঈদ একটু দেরী করে পৌছল। কিন্তু দীবা আর মোশতাক ভাইয়ের খবর নেই। তারা আমাদের বিল্ডিং এ থাকে, আমি নামার আগেও ফোন করে এসেছিলাম। তারা নামতে নামতে ৫.৫০ বাজিয়ে ফেলল। ৬.০৯ এ সূর্যোদয়। ভয় হচ্ছিল সূর্যোদয়টা না মিস করে ফেলি। আমরা ৩টি গাড়ী নিয়ে দ্রুত এগিয়ে চললাম।



সূর্যোদয়ের মূহুর্ত আগে আমরা পৌছাতে পারলাম। মারাত্নক ঠান্ডা ছিল। ধীরে ধীরে সূর্য উঠল। সবাই উপভোগ করল। আমরা ৩ টি গাড়িকে তিনদিকে রাখলাম। একদিকে খোলা, সে দিকে পাহাড়ের প্রান্তসীমা। মাঝখানে পাটি বিছিয়ে বসলাম। খাওয়াটা হলো জম্পেস। খিচুড়ি, ভর্তা আর মেজবানী গরুর সমন্বয়টা ছিল অসাধারণ। খাওয়া শেষে ঠান্ডা বাতাসে যখন চায়ের গ্লাস হাতে নিলাম, মনে মনে বললাম- আহ!







সেদিন সন্ধ্যাবেলায় আদিল ভাইয়ের ফোন- সবাইকে ওনার বাসায় যেতে হবে। উনি আমাদের সকালের আড্ডা আর সূর্যোদয়টা ভিডিও করেছিলেন। এখন একটা ডকুমুভি তৈরি করে ফেলেছেন। আমরা সবাই আগে আগেই পৌছে গেলাম। প্রজেক্টরের সাহায্যে বড় পর্দায় সেটা দেখলাম, সাথে আড্ডা ও খাওয়া দাওয়া চলল।

অনেকদিন পর দিনটা দারূণ কাটল।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×