somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তনুমা’য় জ্যোৎস্না রাত ও আল নমাসের প্রান্তরে-শেষ পর্ব (আরব ডায়েরি-৬১)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব
২য় পর্ব

সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই মনটা ভরে গেল। চারদিক কেমন যেন মেঘাচ্ছন্ন, নীরব, নিথর, স্বপ্নালু পরিবেশ। গতকাল রাতে যে পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছিলাম, তার গায়ে সৌদি আরবের মানচিত্র আঁকা। রাতে নিয়ন আলোতে তা জ্বলজ্বল করে। জানালার ঠিক নীচেই অনেকগুলো ইজিপ্সিয়ান বড়ই গাছ, বড়ই নাকি খুবই মজাদার, মজার ব্যাপার হলো এ গাছে কোন কাটা হয় না। প্রায় সকালেই নাকি এখানে গাধারা চলে আসে, নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায়। বড়ই গাছগুলোর পাশেই একটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট, বাংলাদেশি শিক্ষক ও অন্যরা এখানে সন্ধ্যা রাতে কিছুটা সময় কাটান।



ফাহাদ আলশাহরি’র কথা বলেছিলাম। সে সাইফুল ভাই ও হাবিব স্যারকে একটি মিউজিয়ামে নিয়ে গিয়েছিল। ফাহাদ বলেছিল আমাকে সে নিয়ে যাবে। মিউজিয়ামটি আল-নমাসে, তনুমা থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে। ফাহাদের জন্য অপেক্ষা করলাম না। কচি ভাইয়ের বাসায় নাস্তা করে আমরা রওনা হলাম। আরশাদ ভাই গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছেন, তিনি আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন।

মিউজিয়ামটি আল-মাকার নামে পরিচিত। এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ১০ মিলিয়ন রিয়াল খরচ করে এই প্রাইভেট মিউজিয়ামটি তৈরি করেছেন। উনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রায় ৫০০০ মত জিনিষ সংগ্রহ করেছেন। অনেক পুরনো হাতে লেখা কোরান শরিফ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, সিন্দুক উনি সংগ্রহ করেছেন। যে জিনিষটি আমাকে উৎসাহী করেছে তা হলো মিউজিয়ামটির ডিজাইন মোঘল স্থাপত্যকর্মের মতো।



দূর থেকে পাহাড়ের উপর যখন মিউজিয়ামটি দেখলাম, সত্যিই মনে হচ্ছিল কোন মোঘল আমলের দূর্গ দেখতে যাচ্ছি। আমাদের মতো আরো অনেকেই ঘুরতে এসেছিল। মিউজিয়ামটির কাজ এখনো অনেক বাকী। ভেতরে ঢুকতে গিয়ে বাঁধা পেলাম। এক ইন্ডিয়ান দড়জা আগলে দঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেককে ২০ রিয়াল করে দিতে হবে। আমরা বললাম, “কোন সমস্যা নেই, টিকেট দাও।” টিকেট নাই। তার আচরণ ছিল উদ্ধত। আমাদের ভালো লাগলো না। আমরা ঠিক করলাম, ভেতরে ঢুকব না, ওর হাতে টাকাও দিবনা।







আমরা বাহির থেকেই ঘুরে ফিরে দেখলাম। এরই মাঝে একটি সাদা ক্যাডিলাক আসল। সাঈদ তখন ড্রাইভিং শিখছে। যেখানেই সুযোগ পায় হাতটা ঝালিয়ে নেয়। সে কিভাবে কিভাবে যেন গাড়ীর ছেলেটিকে পটিয়ে ফেলল। সাঈদ গাড়ীটি চালাল। আমরা তার কান্ডকারখানা দেখে হাসছি। কথায় কথায় সাঈদ জানতে পারল গাড়ীটি এক সময় কিং ফাহাদের ছিল। আমেরিকা কিং ফাহাদকে গাড়ীটি উপহার দিয়েছিল। ছেলেটির দাদা ৫০ হাজার রিয়াল দিয়ে রয়্যাল ফ্যামিলির কাছ থেকে গাড়ীটি কিনেছে। গাড়ীটি এখন তাদের আভিজ্যাত্যের প্রতীক। আমরা গাড়ীতে রয়্যাল ফ্যামিলির চিহ্ন দেখতে পেলাম।





মিউজিয়ামটির চারপাশ দেখা শেষ করে আমরা চললাম আল-নমাসের মূল শহরে। সেখানে আল-নমাস প্যালেস অবস্থিত। সেখানেও একটি মিউজিয়াম আছে। কিন্তু আমরা মিউজিয়ামটি বন্ধ পেলাম। প্যালেসটির এখন ভগ্নদশা। কিছু অংশ সংরক্ষিত। উন্মুক্ত অংশে আমরা ঘুরে ফিরে দেখলাম। প্যালেসের একাংশে দেখলাম কয়েকজন পাকিস্তানি থাকে। আমরা ভেতরে ঢুকলাম। ছোট ছোট রুম, আলোর ব্যবস্থা অপ্রতুল, আবদ্ধ জায়গা। তৎকালিন সময়ে এখানে কিভাবে মানুষ থাকত ভেবে পেলাম না।









আল-নমাস ভ্রমণ শেষ করে আমরা তনুমায় ফিরতি পথ ধরলাম। কথা ছিল বৃহঃবার বিকালেই আমরা আবহা ফেরত যাব। কিন্তু সাঈদ ও জামান ভাই আরো একটা রাত থাকতে চাচ্ছে। শুক্রবারে নাকি এখানকার বড় মসজিদের সামনে বাজার বসে। সস্তায় অনেক ধরনের সব্জি ও পাহাড়ী মুরগী পাওয়া যায়। সবাই যখন চাচ্ছে, রয়ে গেলাম আরেকটি রাত।

পরেরদিন জুম্মার নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ শেষে তুমুল বৃষ্টি। বাজার ঠিক মতো বসতে পারেনি। আমি ও সাঈদ বেশ সস্তায় ১৫ কেজি টমেটো ও ২০ কেজির মতো মিস্টি আম কিনলাম। কচি ভাই দেখলাম মরিচ কিনছে, খুবই নাকি ঝাল। মরিচের নাম “খালেক মরিচ”। খালেক নামের বাংলাদেশি একজন প্রথম এই মরিচের আবাদ করে, সেই থেকে এর নাম “খালেক মরিচ”। আমিও আধা কেজি কিনে নিলাম। পরে খেয়ে বুঝেছি ঝাল কাকে বলে।


বাজারে উঠা ৫০ বছর পুরনো খঞ্জর, হাতলটি নাকি হাতির দাঁতের (!)

বাজার থেকে বাসায় ফেরা পথে দেখি কচি ভাইদের বাসার পেছনে বিরাট এক বট গাছ। এই গাছ এখানে দেখব, এটা কখোনোই ভাবিনি। এদিকে আরশাদ ভাই লোভ দেখিয়েছেন পরেরবার উনি আমাদেরকে পাহাড়ঘেরা এক ছোট লেকের কাছে নিয়ে যাবেন যেখানে জাল ফেললেই প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।





দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকালে আবহা’র পথে রওনা হলাম। ফেরার পথে রাস্তার ধারে এক গ্রামে ঢুকলাম। দুম্বার পাল রাস্তা পার হচ্ছিল। সেখানে কিছু প্রাচীন বাড়ী ছিল। মূহুর্তেই মেঘ এসে সবকিছু ঢেকে দিল। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, একটি গাড়ী এসে পাশে থামল। সৌদি ভদ্রলোক আমাদেরকে তার বাসায় চা খাওয়ার আমত্রণ জানালেন। আমরা ধন্যবাদ জানালাম।







আবহা পৌছলাম সন্ধ্যা নাগাদ। মাছ ধরার জন্য হলেও আরেকবার তনুমায় যেতে হবে।

(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×