somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তনুমা’য় জ্যোৎস্না রাত ও আল নমাসের প্রান্তরে-২ (আরব ডায়েরি-৬০)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব

"চাঁদের পাহাড়"

পাহাড়ের আঁকাবাকা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলছি। মাঝে মাঝে রাস্তা মেঘে ঢেকে যাচ্ছিল। এক সময় তনুমা’য় ঢুকলাম। নিরিবিলি রাস্তায় তেমন মানূষজন চোখে পড়ল না। আমরা উঠলাম কচি ভাইয়ের বাসায়। আজ রাত থাকব।



সন্ধায় আমরা ছেলেরা সবাই বের হলাম শহর দেখতে। কচি ভাই আমাদের গাইড করছিলেন। তেমন কিছু নেই, ছোট শহরে সুযোগ সুবিধাও অল্প। তবে এই নীরবতা’র মাঝেও একধরনের আলাদা সৌন্দর্য্য আছে। এদিক সেদিক ঘুরে কচি ভাই আমাদের একটি রাস্তার মুখে নিয়ে আসলেন। রাস্তাটি ঢালু হয়ে নীচের শহর “তাহমা” চলে গেছে। রাস্তাটি এতটাই শার্প যে দক্ষ ড্রাইভার ছাড়া কেউ সেই রাস্তায় নামার কথা চিন্তাও করে না। আমরা এক জায়গায় থেমে রাস্তাটি দেখলাম। সৌদিরা কত সহজেই রাস্তা দিয়ে নেমে যাচ্ছে, ভয় বলে তাদের কিছু নেই।



বাসায় ফিরতেই মেয়েরা আবদার করল, তারাও ঘুরতে যাবে। জামান ভাই গাড়ী নিয়ে আবার বের হলেন। আমি সাঈদ রয়ে গেলাম। কিন্তু সময় কাটছে না। আমরা দু’জন বাসার নীচে নেমে আসলাম। সামনেই একটি খাবার দোকান। সেখানে আরশাদ নামে এক বাংলাদেশি ড্রাইভারের সাথে পরিচয় হল। চিটাগাং বাড়ী। সাঈদও সেখানকার ছেলে। শুরু হল তাদের ভাষায় কথোপোকথন। কিছু বুঝি, কিছু বুঝি না- বাংলা ভাষা এমন দূর্বোধ্য হতে পারে? আরশাদ ভাইয়ের হাইলাক্স গাড়ী। তিনি হঠাৎই বললেন, চলেন একজায়গায় ঘুরে আসি।

আমাদের সামনের রাস্তার ওপাশেই বিশাল এক পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। আরশাদ ভাই আমাদেরকে তার চূড়ায় নিয়ে যাবেন। সেই রাস্তাও নাকি “তাহমা’র” রাস্তার মতোই ভয়ংকর। এমনিতেই সাঈদের ভয়ডর কম, সৌদি এসে আমারও ভয় কিছুটা কমেছে। দু’জনেই এককথায় রাজী হয়ে গেলাম। সে রাতে পূর্নিমা ছিল কিনা, জানিনা। তবে চারপাশ চাঁদের আলোয় প্লাবিত। ৪৫ ডিগ্রি খাড়া রাস্তা ধরে পাহাড়ের চূড়ায় উঠলাম। ভয় আর ভালোলাগার মিশ্রণ সত্যিই অসাধারণ। পাহাড় চাঁদের আলোয় আলোকিত, চারপাশে কোন যান্ত্রিক আলো ছিল না।

উপর হতে নীচের তনুম শহরটি দেখা যাচ্ছিল। সাঈদ মনে হয় কিছুটা প্রেমী হয়ে উঠল। নাহ, শিমুকে এই সৌন্দর্য্য দেখাতেই হবে। আমিইবা বাদ যাই কেন? তাহলেতো শাকিলাকেও দেখাতে হয়। আমরা নীচে নেমে মেয়েদের খোঁজ করলাম, তারা তখন শহরের একমাত্র ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে শপিং করছে। জামান ভাইয়ের কাছ থেকে তাদেরকে রীতিমত হাইজ্যাক করে নিয়ে আসলাম। আবার সেই রাস্তা ধরে পাহাড়ে উঠলাম।তারা পাহাড়ের এই রূপ দেখে অভিভূত।শিমুকে তৃপ্ত করতে পেরে সাঈদের মুখেও তৃপ্তির হাসি।


শাকিলা ও শিমু জানাল, জামান ভাইয়ের সাথে ঘুরতে গিয়ে তারা বন্য গাধার পাল দেখে এসেছে। গাধাগুলো নাকি রাস্তার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আমার আফসোস শুরু হয়ে গেল। আহা! এতো কাছ থেকে বন্য গাধার পালতো দেখা হলো না।নাজরানে একটা পাল দেখেছিলাম কিন্তু অনেক দূর থেকে। ড্রাইভার আরশাদ ভাই আমাদের সঙ্গ বেশ উপভোগ করতে শুরু করেছেন।বললেন, "চলেন তাহমা'র রাস্তায় নামি।" আমার গলা শুকিয়ে গেল,"পাগল নাকি? আমাদের মারতে চায়।"

কিন্তু আরশাদ ভাই জোড় দিয়ে জানালেন যে, তিনি ঐ পথে প্রায়ই আসা যাওয়া করেন।কৌতুহল আর নতুন অভিজ্ঞতা নেবার তাড়নার কাছে ভয় পরাজিত হল। শাকিলা ও শিমু সহ আমরা পাঁচজন সেই ভয়ংকর পথে নামতে শুরু করলাম।


এটা তাহমা'র রাস্তা নয়, কিন্তু এর চেয়েও ভয়ংকর।

রাস্তা খাড়াভাবে নীচে নেমে গেছে। গাড়ীর হেডলাইট আর চাঁদের আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই। অল্প প্রশস্ত রাস্তা কিছুদূর পরপরই ভয়ংকর বাঁক নিয়েছে। এই রাস্তা আগে থেকে জানা না থাকলে গাড়ী নিশ্চিতভাবেই নীচের খাদে পড়ে যাবে।মাঝে মাঝে এত খাড়াভাবে নীচে নামছিলাম যে মনে হচ্ছিল পেট শূণ্য হয়ে গেছে। আরশাদ বেশ ভালোভাবেই ড্রাইভ করছিল। আরো অনেক গাড়ী ছিল। ছেলেরা দলবেধে এখানে সেখানে জড়ো হয়েছে।পাহাড়ের প্রসস্থ জায়গায় ছাউনি করে দেয়া আছে। সেখানে তারা রান্না বান্না করবে। আমরা অর্ধেক পথ এসে থেমে গেলাম। আরো নীচে নামতে সাহস করলাম না। আরশাদ ভাই রাস্তার পাশের এক প্রসস্থ জায়গায় থামলেন। নেমে অবাকই হলাম। এত আলো? চারিদিকে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ। জ্যোৎস্নায় প্লাবিত আরবের পাহাড়। সবাই অনেকক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম।এটাই কি তবে বিভূতিভূষণের সেই "চাঁদের পাহাড়"?

"চাঁদের পাহাড়ে" বাস করত ভয়ংকর এক দানব যে রত্ন খনি পাহাড়া দিত। বাঙালি যুবক কিন্তু ঠিকই সেই রত্নখনির সন্ধান পায়। আরবের পাহড়ে কি আমরা সৌন্দর্যের খনি খুঁজে পাইনি?

ফেরার পথে ভাগ্যক্রমেই গাধাদের দেখা পেলাম। রাস্তার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, জ্যোৎস্না খাচ্ছে। এক পাহাড় ভালোলাগা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।


কচি ভাই ব্যাপক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছেন। আমাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। খাবার পর মোশতাক ভাইয়ের রুমে গেলাম। ছুটিতে দেশে যাবেন, তাই অনেক শপিং করেছে। বিভিন্ন রকম আর ডিজাইনের জায়নামাজ আর সুগন্ধি। একটি একটি করে সব আমাদের দেখালেন। সবার শরীরে পারফিউম স্প্রে করলেন। গায়ে ৬/৭ রকম পারফিউমের ককটেল গন্ধ নিয়ে ঘুমুতে গেলাম।


(চলবে)

সামু’র গোলযোগে পোস্ট করতে দেরী হয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×