ফাহাদ আলশাহরি। তার সাথে দেখা হলেই যে জিনিষটি সবার আগে নজর কাড়বে তা হলো তার আকর্ণ হাসি। এরকম অমায়িক ছেলে সৌদিতে খুব কমই দেখা যায়। আমার সাথে দেখা হলে সে মনে হয় আরো বিনয়ী হয়ে উঠে। সে মাহাইল ক্যাম্পাসে ইংরেজি বিভাগে টিচিং এ্যাসিস্টেন্ট হিসাবে আছে, সেখানে আমাদের সাইফুল ভাইও আছেন। সাইফুল ভাই এর আগে আমাদের সাথে নাজরান ভ্রমণ করে এসেছেন।
ফাহাদ এ বছর আমেরিকার বিংহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে কম্পেরাটিভ লিটারেচার এ মাস্টার্স করতে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারনে আমার সাহায্য তাকে নিতে হয়েছে। সে ভালোভাবেই জানত আমি ঘুরতে, নতুন জায়গা এক্সপ্লোর করতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু এক সকালে অবাক হয়ে সাইফুল ভাই এর ফেসবুক প্রোফাইলে দেখলাম- ফাহাদ, হাবিব স্যার ও সাইফুল ভাই প্রশান্তি নিয়ে কোন এক যাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। হাবিব স্যারও মিনিটে মিনিটে আপডেট দিয়েছেন। ফাহাদ আমাকে জানাল না?
ফাহাদকে ফোন দিলাম। সে খুবই লজ্জিত হলো, সময় না থাকায় আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। সে জানাল, যাদুঘরটি তার নিজ শহর আল নমাসে এবং আমাকে অবশ্যই সে আরেকদিন নিয়ে যাবে।
এর মাঝেই এক বুধবার দুপুরে সাঈদের ফোন, “বস, বিকালে রেডি থাকবেন। আমরা তনুমা ঘুরতে যেতে পারি।” আমিও একবাক্যে রাজি। সাঈদের এই একটি ব্যাপার খুব ভালো লাগে, যা করে ঝটপট। আমিও যখন তাকে হঠাৎ করেই কোথাও যেতে বলি সে সাথে সাথেই তৈরি হয়ে নেয়, সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলে। অপরদিকে অন্য টিচারদের সাথে ১ সপ্তাহ আগে বসে প্রোগ্রাম ঠিক করতে হয়। তারা ৫ দিন ধরে নিজ নিজ ওয়াইফদের সাথে আলোচনা চালাতে থাকেন, সবার ওয়াইফদের সাথে আবার বসতে হয়। মেয়েরা তাদের চাহিদানামা প্রকাশ করে। পরিপূর্ণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মাঝ দিয়ে সবাইকে খুশী রেখে সব কিছু শেষ করতে হয়। অনেকে আগের রাতে বলেন, “আমি যেতে পারছি না”। সেই দিক থেকে সাঈদের ফ্যামিলি’র কোন কিছুতে মানা নেই।
বিকালে আমি ও শাকিলা তৈরি হয়ে রইলাম। জামান ভাই নিজের গাড়ি নিয়ে আসলেন। উনিও ইংরেজি বিভাগে আছেন, খুব চুপচাপ মানুষ। আমরা ৬ জন রওনা হলাম তনুমা’র পথে।
তনুমা নামের বাংলা অর্থ করলে নাকি দাঁড়ায় “ঘুমের শহর”। ছোট, নিরিবিলি একটা শহর। আবহাওয়া আমাদের আবহা’র মতোই। সেখানে আমাদের ভার্সিটির একটা নতুন ক্যাম্পাস হয়েছে। কচি ভাই, মোশতাক ভাই ও ওসামা’র পোস্টিং সেখানে হয়েছে। ওসামা প্রতিদিন আবহা থেকে যাওয়া আসা করলেও বাকী দুজন তনুমাতেই থাকেন। আবহা থেকে ১.৩ বা ২ ঘন্টার ড্রাইভ। আমরা উঠব কচি ভাইয়ের বাসায়।
পাহাড়ের আকাবাকা রাস্তা দিয়ে জামান ভাই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০