১ম পর্ব
২য় পর্ব
বির হিমা'র পথে ...
নাজরান বাঁধটি শহরের ৭০ কিমি বাহিরে। প্রায় ১০টা বেজে গিয়েছিল। আমরা তাড়াতাড়ি ‘আল ওখদুদ’ যেতে চাচ্ছিলাম। ১২টার পর মিউজিয়াম ও সংরক্ষিত জায়গাটি বন্ধ হয়ে যায়, আবার বিকাল ৩ টায় খোলে।
সাইফুল ভাই আবহা ছেড়ে আসার পর থেকেই ব্যাপক টেনশনে ছিলেন। এদিন ছিল সাঈদি’র মামলার রায়। তিনি বারবার দেশে ফোন দিচ্ছিলেন রায় জানার জন্য। তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন, ‘কত বড় রায়? এখনো পড়া শেষ হয় না?’ আমরাও সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম রায়ের ফলাফলটি শোনার জন্য। একসময় রায়টি জানার পর সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
নাজরান মিউজিয়ামের পাশেই ‘আল ওখদুদ’- ইহুদি রাজার গণহত্যা এখানেই হয়েছিল। কিন্তু ১১টার দিকে সেখানে পৌছে দেখলাম মিউজিয়াম ও ‘আল ওখদুদ’ দুটোই বন্ধ আছে। সাঈদ এখানকার এক সৌদিকে ধরে নিয়ে আসল। সে জানাল বৃহঃবার ছুটির দিন বলে শুধুমাত্র বিকালে ৩টায় খুলবে। আমাদের প্ল্যানে হঠাৎই ভটজট লেগে গেল। বুঝতে পারলাম না কি করব। সকালে এই দুটি জায়গা বন্ধ থাকবে তথ্যটি আমাদের আগে জানা ছিল না।
শহরের ভেতর কিছু কয়েকটি দূর্গ আছে, যা দেখে আমরা সময়টি কাটিয়ে দিতে পারি। কিন্তু তা করতে গেলে আমাদের ‘বির হিমা’ দেখা হবে না। ‘বির হিমা’ পাহড়ে প্রায় ৯০০০ বছর পুরনো ছবি ও লিপি পাওয়া গেছে। সেখানে ৬ টি প্রাচীন কুয়াও আছে। আমরা হিসাব করেছিলাম ১২ টার মাঝে ‘আল ওখদুদ’ দেখে শহরের দূর্গগুলো দেখব তারপর ‘বির হিমা’ দেখে আবহা’র পথে রওনা দেব। এখন পরিস্থিতি এমন যে শহরের দূর্গগুলো বাদ দিতে হবে। সরাসরি ‘বির হিমা’ গিয়ে ৪টার মাঝে ‘আল ওখদুদ’ ফেরত আসতে হবে। কিন্তু সাঈদ বেকে বসল, সে ‘বির হিমা’ যাবে না। ‘বির হিমা’ নাজরান থেকে প্রায় ১৫০ কিমি। কিন্তু আমি ‘বির হিমা’ ও ‘আল ওখদুদ’ না দেখে আবহা ফেরত যেতে রাজি না।
সাঈদ পরামর্শের জন্য রাজীব ভাইকে ফোন দিল। রাজীব ভাই নাজরান ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে আছেন। তিনি বললেন, ‘একটা মাত্র জায়গা দেখার জন্য এত দূর যাওয়া ঠিক হবেনা।’ সাঈদের স্বপক্ষে যুক্তি এসে গেল। এদিকে আমি সবাইকে বুঝাতে থাকলাম ৯০০০ বছর প্রাচীন ছবি ও লিপি সারা জীবনে দ্বিতীয়বার দেখার সৌভাগ্য নাও হতে পারে। সাইফুল ভাই, সূধা ও আলীম ফুসে উঠল, “বির হিমা না গেলে, সাঈদের ফাঁসি চাই।” পারলে তখনই সাঈদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়।
আমরা রাজীব ভাইয়ের সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইলাম। সাঈদ রাজীব ভাইকে ফোন দিল। রাজীব ভাই আমাদের সাথে দেখা করলেন। আমাদের হৈচৈ দেখে বাতাস কোনদিকে বইছে তিনি তা খুব দ্রুতই বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন, ‘বির হিমা দেখা যায়, আমার কাছে ভালো লেগেছিল’। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ সময় বয়ে যাচ্ছে। রাজীব ভাই কিছু বুঝে উঠার আগেই আমরা ওনাকে কিডন্যাপের মতো করে গাড়ীতে উঠিয়ে নিলাম। ড্রাইভারকে বললাম, ‘গাড়ী চালান। রাজীব ভাই আমাদের গাইড।’ পরে বুঝেছিলাম রাজীব ভাইকে না আনলে বিপদ হতো। এই মরুভূমির মাঝে জায়গাটি খুঁজে পাওয়া সহজ কথা নয়। অবশেষে ‘বির হিমা’র’ পথে চললাম।
মরুভূমির মাঝ দিয়ে রোড চলে গিয়েছে। পাশেই বিখ্যাত ‘রুব-আল-খালি’। পৃথিবীখ্যাত Empty Quarter। নাজরানের কিছু অংশে ‘রুব-আল-খালি’ পড়েছে। এই মরুভূমি সৌদি আরব, ওমান, ইয়েমেন ও আরব আমিরাতের ৬.৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এর একেকটি বালির টিলা ৮০০ ফিট পর্যন্ত উচু হয়। এখানে কোন বসতি নেই, গাছপালা নেই। অনেকে ধারনা করেন কোরআনে বর্ণিত আ’দ জাতির রাজধানী ইরাম নগরী এই মরুভূমির মাঝেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এখনো ইরাম শহর খোঁজা হচ্ছে।
গাড়ীতে করে যাবার পথে মরুভূমিতে মরীচিকা দেখতে পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল সামনেই বুঝি পানির লেক। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তা মিলিয়ে যাচ্ছিল। সূধা তা দেখে বাচ্চাদের মতো বিষ্মিত, ‘সত্যি, সত্যি মরীচিকা? কিভাবে হয়?’
আমরা প্রায় দেড় ঘন্টা পর সোজা রাস্তা ছেড়ে বামে ঢুকে পড়লাম। রাজীব ভাই নিশ্চিত এই রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলেই ‘বির হিমা’ পৌছে যাব। একটি মসজিদ, কয়েকটি বাড়িঘর দেখতে পেলাম। এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করেও ‘বির হিমা’র’ পাহাড় ও কুয়া খুঁজে পেলাম না। মিলন একটি বাসায় নক করল। এক সুদানি বের হল। মনে হয় ঘুম থেকে এই মাত্র উঠে এসেছে, বিরক্ত। তাকে কুয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে মনে হল সে আকাশ থেকে পড়েছে। সে কিছুই জানাতে পারল না। আমরা যখন দিকভ্রান্ত, একজন লোককে রাস্তা দিয়ে আসতে দেখলাম। চালচলনে বুঝতে পারলাম লোকটা বাংলাদেশি। এই মরুর মাঝেও বাংলাদেশি?
আমরা তার কাছে দ্রুত গেলাম।
নোটঃ মরুর ছবি- নেট হতে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৫১