
পদার্থ বিজ্ঞান বলে একই সময়ে একই বস্তু দুইটি ভিন্ন অবস্থানে থাকতে পারে না। এই অসম্ভব কাজ গতকাল সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে আসল বিশ্বকাপ ট্রফির প্রদর্শনী হয়েছে বাংলাদেশে এবং ভারতে।




আসল না নকল! বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে এই গুঞ্জন ছিলো দিনভর। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্মকর্তা প্রত্যেকের মনেই সংশয়। খোদ বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল আসল-নকলের বৃত্তে আটকে ছিলেন!



আসলে সত্যিটা কী? বিশ্বকাপ ট্রফিকে ঘিরে যে পরিবেশ ছিলো এতে সংশয়ের জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক। নিরাপত্তা বলতে দুজন পুলিশ, কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক এবং হিরো হোন্ডার স্থানীয় এজেন্ট এটলাস বাংলাদেশের কর্মীদের অংশগ্রহণ।



ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের স্টেজে টেবিল পেতে রাখা হয় ট্রফি। ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যে। অনেকেই ট্রফি ছুঁয়ে দেখেন। চুমিও খেয়েছেন দু’একজন। অবধারিতভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে ১৫ কেজি ওজনের সোনার বিশ্বকাপ ট্রফি এভাবে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কাছে ছেড়ে দেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)? অতটা অরক্ষিত অবস্থায় একদেশ থেকে অন্যদেশে যাবে আইসিসির কোন প্রতিনিধি ছাড়াই?



বিসিবি সভাপতি বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নিয়েছিলেন। এরপর তার কাছে আসল-নকলের উত্তর জানতে চাইলে বলেন,“অনেক ওজন, আসল হতে পারে।”
তবে হিরো হোন্ডার রপ্তানি বিষয়ক ব্যাবস্থাপক জি সাই হরিস নির্দ্বিধায় বলেছেন, বিশ্বকাপের আসল ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, তাহলে রিবোক কোনটা নিয়ে ভারতে রোড’শো করছে? আমতা আমতা করে উত্তর দেন,“ওরা নিশ্চয়ই রেপ্লিকা ব্যবহার করছে।”



আসল নকলের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে হিরো হোন্ডার প্রচারণামূলক অভিযান খুব জমজমাট হয়েছে তা বলা যাবে না। সাই হরি জানান, বুধবার দুপুরে ট্রফি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। রাতে রাখা হয় হোটেল রিজেন্সিতে। সকালে এটলাস বাংলাদেশের অফিস টঙ্গীতে নিয়ে যায় হিরো হোন্ডা। (১৫ কেজি ওজনের সোনায় তৈরি বিশ্বকাপ এই নিরাপত্তায়!



সাজোয়া ট্রাকে ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে রামপুরায় বিটিভি ভবন, উপ-পুলিশ কমিশনের কার্যালয় হয়ে ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ট্রফি পৌঁছায় বিকেল তিনটার আগে। সেখানে বেসরকারি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয় বিশ্বকাপ ট্রফি ঘিরে। অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে ছবি তোলেন। সেখান থেকে ট্রফি চলে যায় আইডিবি ভবনে। কিছুটা সময় দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করা হয়। এরপর ট্রফি হস্তান্তর করা হয় বিসিবির কাছে।
আগে থেকে প্রচার করা হয়নি বলে অনুষ্ঠানটা ম্যারম্যারে হয়ে গেছে বলে মনে করেন এটলাস বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মী। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন,“ক্রিকেটার এবং শিল্পীদের নিয়ে বাদ্যবাজিয়ে প্রচার করলে ভালো হতো। মানুষতো জানেই না বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে রোড’শো হচ্ছে।”



আপাতত রোড’শো শেষ। ট্রফি ঢাকায় থাকবে না ভারতে ফিরে যাবে এ নিয়েও দুই রকমের ভাষ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে বিশ্বকাপের স্থানীয় আয়োজক ‘এলওসি’ থেকে জানানো হয়েছে রাতেই ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ট্রফি। তবে হিরো হোন্ডার ভারতীয় রপ্তানি বিষয়ক ব্যবস্থাপক হরি জানান, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পর্যন্ত ঢাকায় রাখা হবে ট্রফি।



দেশের মানুষকে এরা এত আহাম্মক মনে করে!



সূত্র: ওজন আছে, আসল ট্রফি হতে পারে: বিসিবি সভাপতি!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৩৪