সে অনেক দিন আগের কথা।১৯৮৩ সাল।আমার মা-খালারা তিন বোন এক ভাই।সেই সময়ে হাইস্কুলে পড়ি। মামা প্রতি সপ্তাহে আমাদের বাড়ীতে আসেন।যদিও তিনি বছরে ১/২ বারের বেশী আসতেন না। এর আগের বছর নানা মারা গেলেন।মনে করেছি নানা মারা গেছেন বলে মামা নানার দায়িত্বটা পালন করছেন।মামার ঘন ঘন আসাতে আমি খুব খুশি।২/৩ মাসের মধ্যে ৭/৮ বার মামা আমাদের বাড়ীতে এলেন।একদিন স্কুল থেকে এসে দেখি ছোট খালা,খালু এবং খালাতো ভাই-বোনেরাও এসে হাজির। আমার কি যে আনন্দ তা বলে প্রকাশ করতে পারব না।পরের দিন শুক্রবার স্কুল নেই।বাড়ীতে পুরা পার্টির আমেজ। শনিবারে খুব সকালে আমার মা,খালা,মামা এবং আমি না খেয়েই রওয়ানা দিলাম(কোথায় যাব তা আমি জানতাম না)।গন্তব্যে পৌঁছে একটা হোটেলে সবাই নাস্তা করলাম ডিম ভাজা আর পরটা।সবাই চা খেল(পান করল) আমি খেলাম ফান্টা।আহ্ সেই কি স্বাদ।জীবনে এমন মজার ফান্টা আর খাইনি।অতিরিক্ত ক্ষুধার কারনে না অন্য কোন কারনে জানিনা।এরপর দেখলাম মা,খালা এবং মামা কিছু কাগজ সই করলেন।একটা সরকারী অফিসে গেলেন।আমি বাইরে বসে ছিলাম।এর পর বাড়ী আসলাম।রাতেই মামা চলে গেলেন।ছোট খালা পরের দিন।মামা এর পর আর আসেন না।এক মাস যায়,দুই মাস যায় মামার খবর নাই।পরে জানতে পারলাম মামা নানার জমি-জমা বিক্রি করে দিয়েছেন।ক্রেতা মা-খালা(কম পক্ষে ৩জনের মধ্যে দুই জন) সই না করলে টাকা দেবেন না।তাই এত ঘন ঘন মামার আসা যাওয়া।আমার মা সবার বড়।ভাইয়ের জন্য অনেক মায়া।আমার বিয়ের সময় অজ্ঞাত কারনে মামা এবং ছোট খালা আসেনি(এখন জানি,মামা ছোট খালার মেয়ের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।মা এতে রাজি হননি। কারন আমি গ্রামে বড় হয়েছি। আর ছোট খালার মেয়ের জন্মই হয়েছে ঢাকায়।তাদের ঢাকা শহরে নিজস্ব বাড়ী আছে।মায়ের কথা আমাদের গ্রামের পরিবেশে সে মানিয়ে নিতে পারবে না)।২০০৭ সালে আমি ডিস্কের সমস্যার কারনে শয্যাশায়ী।নড়া-চড়া করার ক্ষমতা নেই।সাড়ে চারমাস হস্পিটালে থাকলাম।মামাকে,ছোট খালাকে দেখার বড় ইচ্ছে হচ্ছিল(বিশেষ করে অপারেশন টেবিলে অজ্ঞান করার আগে তাদের কথা খুব মনে পড়ছিল।ছোট খালা আমাকে অনেক আদর করতেন।কখনো কখনো মনে হতো আমার মায়ের চেয়েও বেশী)।এখন আর ফান্টা খাইনা।দেখলে কেন যেন বমি বমি লাগে।সেটা কি কারনে জানিনা। আজ ৯ বছর যাবৎ মামা এবং ছোট খালাকে দেখিনা।নিজের কস্ট নিজের মাঝেই বয়ে বেড়াই।কারো সাথে শেয়ার করতে পারিনা। আজ ব্লগে শেয়ার করে কিছুটা হাল্কা হবার প্রয়াস মাত্র।বিদেশে একা থাকি বলে হয়তো আরো বেশী কস্ট লাগে।
অফ টপিকঃ - আজ চেয়ারম্যানের ব্লগে একজনের নিক দেখলাম ফান্টা।তখন আমার জীবনের স্বরনীয় ফান্টার কথা মনে পড়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:২০