ইদানিং শাকিবের সিনেমার নামকরণও অনন্ত জলিলের মত হচ্ছে। কৌতুহলী হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম দেখেই ফেলবো ফাঁদ-দ্যা ট্র্যাপ। ভেবেছিলাম ঘুঘুর ফাঁদ হয়ত দেখলেও দেখতে পারি। শাকিবের সিনেমা বলে কোনো ফ্রেন্ড কে সিনেমা দেখার আমন্ত্রন জানানোর রিস্ক নিলাম না। শেষ মেশ তাদের হাতে মার খেয়ে আমিই ফাঁদে পড়ে যেতে পারি। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মত আমিও ফাঁকা হলে কেবলই গা এলিয়ে দিয়েছি। ওমনি স্ক্রীনে দ্রুম করে শব্দ হল। কি হল কি হল! বোমা টোমা পড়লো নাকি? স্ক্রীনে পরিচালকের নাম দেখে বুঝলাম বোমা টোমা কিছুই না ওইটা পরিচালকের নাম ছিল।
কাজী হায়াত দেখি দুইপাশে দুইটা নাদান লোক আর সামনে কয়টা সাংবাদিক নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছে। সাংবাদিক দের ভিতর ভালো করে খুজলাম কোথাও মুন্নি সাহা আছে নাকি। যাক কাজী হায়াত বাচছে মুন্নি সাহা নাই দেইখা। নাইলে বেচারার কপালে দু:খ আছিল। কাজী হায়াত কি না কি থিওরী আবিষ্কার করছে সেইটা দিয়ে নাকি অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। যাক বাবা এইবার বুঝি দেশের বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে। কিন্তু কাজী হায়াৎ খালি কয় থিওরী দিয়া বিদ্যুৎ বানাইবো। আরে ব্যাটা থিওরী দিয়া বানাবি বুঝলাম, ভনিতা না কইরা কইলেই তো হয় কি কাচামাল ব্যবহার করবি। এখন নাহয় তেল, পানি, গোবর, বাতাস, সূর্যের আলো ইত্যাদী ব্যবহার করে বিদ্যুত বানায়। তুই কি দিয়া বানাবি সেইটা ক্লিয়ার কর্। নাকি তোর থিওরী লিখলেই বিদ্যুত তৈরি হইয়া যাইবো? হইতেও পারে বলা যায় না।
এদিকে দেখি গীটার নিয়া মুখ না নাড়ায়া গান গাইতে গাইতে নায়ক হাজির্। নায়ক কে ঘিরে ধরে চারটা মেয়ে হাত উপর থেকে নিচে নামাচ্ছে আর মাজা দুলাচ্ছে। নায়ক রে জাদুটোনা করতাছে না তো! পরে বুঝলাম এইটা নাচ ছিল। যাউক গা নাচ নিয়া আমার মাথা ঘামায়া কাম নাই। এরপর নায়ক তার বস রে যা কইলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। শাকিব তার বসের কাছে বিলিয়ন ডলার চায় (যেন বিলিয়ন ডলার ওর পকেট মানি)। তার বসও শাকিবের প্রতি এমনই খুশি যে তার মানিব্যাগ বের করে এখনই বিলিয়ন ডলার দিয়ে দেবে।
সিনেমা আবার চলে আসলো বাংলাদেশে। অমিত হাসান কাজী হায়াতের গার্ড রে এমন মাইর দিল যে গার্ড মাটিতে পড়ার আগেই মাটি রক্তে লাল হইয়া ছিল। বুঝলাম না মাটি ফাইটা রক্ত বাইর হইল ক্যাম্নে? যাউক গা আমার বুইঝা কাম নাই, ভিতরে দেখি কাজী হায়াত কয়েকটা কম্পিউটারে কি জানি টিপাটিপি করলো তারপর একটা হার্ড ডিস্ক হাতে নিয়া ইউরেকা ইউরেকা কইরা লাফাইলো। আর কইতেছিল তার সারাজীবনের স্বপ্ন তার ডিস্কের ভিতরে। ধুর ব্যাটা, এইটা তো তুই জানোসই, অমিত হাসান রে জোরে জোরে শুনানোর কি আছে? এখন তো তোর কাছ থেইকা ডিস্ক কাইড়া নিবো। নিলোও তাই। এই ডিস্ক বেইচা নাকি অমিত হাসান দশ বিলিয়ন টাকা পাইবো। বুঝলাম এই সিনেমায় খালি বিলিয়নের কারবার। দশ বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টের সিকিউরিটির জন্য দুই তিনজন লাঠিয়াল গার্ডই যথেষ্ট।
এইবার অমিত হাসান এয়ারপোর্টে হাজির ডিস্ক নিয়া মালয়েশিয়া যাইবো। আরে বলদের বাচ্চা এই ইন্টারনেটের যুগে ডাটা ট্রান্সফারের জন্য শশরীরে মালয়েশিয়া যাওয়া লাগে? ডিস্ক তো তোর হাতেই। আর তখনই সে ডিস্ক টা সুন্দর ভাবে আচলের ভ্যানিটি ব্যাগে দিয়ে দিলো। পেছনের আবুল পোলা সব দেখলো অথচ কিছুই কইলো না! ওই বলদা পোলারে থাব্রানো উচিত।
পুলিশ অমিত হাসান রে ধইরা ফালাইলো, অথচ তার কাছে কোনো ডিস্ক পাইলো না। পাইবো ক্যাম্নে? ডিস্ক তো আচলের আচলে থুরি ভ্যানিটি ব্যাগে। যেই এয়ারপোর্টে জুতার ভেতর, আন্ডারওয়্যারের ভেতর কইরাও শান্তিমত সোনার বার পাচার করা যায় না, সেই এয়ারপোর্টে ভ্যানিটি ব্যাগে ডিস্ক ক্যাম্নে পাচার হবে বুঝতে পারলাম না। এদিকে আবার এক চ্যালা পুলিশ তার উপরের লেভেলের পুলিশ রে কয় অমিত হাসানরে ক্রসে দেয়া উচিত। ধুর ব্যাটা তোরাই যদি মুখের কথায় ক্রস দিবি তাইলে RAB কি আঙ্গুল চুষবো? এইবার পুলিশের এক অফিসার কইলো, "বিজ্ঞানী মুনতাসির মামুন (কাজী হায়াত) কি জানি এক "পারমানবিক এটম" তৈরি করেছে সেটা দিয়ে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।"
পাশে কুড়াল থাকলে নিজেই নিজের মাথা কুপাইতাম, কুপাইয়া কোনো পারমানবিক এটম পাই কি না দেখতাম। কেমিস্ট্রি তে অবিলম্বে "পারমানবিক এটম" যুক্ত করার জন্য ইভেন্ট খোলা উচিত।
পারমানবিক এটম হোক আর অমানবিক এটম হোক সেইটা নিয়া আর মাথা ঘামাইলাম না। নায়িকা সহীহ সালামত্র ডিস্ক ব্যাগে করে মালয়েশিয়ায় গিয়ে হাজির। একা একাই এয়ারপোর্টের বাইরে বাইর হইয়া আইলো। ইভা নামের একটা মেয়েরে ফোন দিলো। কিন্তু ক্যামেরার কীর্তিকলাপে বুইঝা গেলাম এইটা সাইড নায়িকা । কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না, সাইড নায়িকার গ্যালাক্সী কোরে কল আসলেও আলো জ্বলে না ক্যান? মনে হয় ফোনের স্ক্রীন নষ্ট হইয়া গ্যাছে। এদিকে আবার তিন টা চ্যালা আচলের ভ্যানিটি ব্যাগ নেয়ার জন্য দাড়ায়া ছিল। তারা কিছুক্ষন "হ এই মাইয়া, এই মাইয়া না?" এইরকম আঙ্গুলবাজী করে আচলের পিছু তাড়া করলো। আচলরে মনে হয় কেউ আগেই বলে রাখছিল তাকে তাড়া করা হবে, তাই সে আগেই দৌড় দিলো। এইবার ভিডিও নায়কের পায়ের ফাঁকে, সেই ফাঁক দিয়া দেখা গেলো আচল দৌড়িয়ে আসছে। কি দিয়া কি হইলো সব চ্যালা চিৎপটাং । নায়িকার মাথার ডান পাশে হাত নিয়ে একটা স্ক্রু টাইট দিয়ে নায়ক বুঝিয়ে দিলো সেই মেরেছে গুন্ডাদের্। নায়িকা হয়ে গেলো ফিদা। এদিকে নায়িকার বোন ইভা গাড়ি নিয়ে মারপিটের স্পটে এসে হাজির যেন প্লেন থেকে নেমে নায়িকার এখানেই থাকার কথা ছিল
নায়িকা যেহেতু ফিদা তাই এখন একটা গান হওয়া উচিত। শুরু হল শিখবো প্রেমের এবিসিডি। শাকিবের সিনেমা যারা দেখেন তাদের কাছে এই ড্যান্স অপরিচিত নয়। কারন প্রায় সব সিনেমাতেই আগ পিছ করে এই ড্যান্স তিনি দেন। সাথে তো তার ঠোটের কারুকাজ, কীর্তিকলাপ থাকেই
নায়িকা ইভারে কইলো "হিন্দীতে একটা কথা আছে না, পেহলে দর্শনধাতী ফির গুনবিচারি"। আব্বে হিন্দী শেখার স্কুলে যা। এরপর নায়িকার বোন ইভা নায়িকার জামা পরে ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় ঘোড়ার মত লাফাতে লাফাতে তার বস এর কাছে যাচ্ছিল। আরে ছেমড়ি গাড়ি না নিয়া কই যাস? ঘোড়া হইয়াই কি বস রে ঘোরাবি? হঠাত সেই তিন চ্যালা হাজির্। তারা মোবাইলে ছবি দেখেই ইভার হাত থেকে ব্যাগ হাতিয়ে নেয়। আরে ব্যাটা মাইয়াগো ছবি তে আগে কেউ জামা দেখে যেইখানে মাইয়ার মুখ পর্যন্ত আছে? বুঝলাম এই তিন ডারও ঘোড়ার বুদ্ধি। ইভা কে বাচানোর জন্য কোথা থেকে তার বস এসে হাজির্। এই ব্যাটা নিজের বাসায় না থেকে ইভার বাসার সামনে কি করে!??
এইবার শুরু হইলো গান। "বনমালি মনটা খালি হাতে হাতে বাজাও তালি" সে কি গানের কথা আর ড্যান্স তো পুরাই ঘোড়া লাফাইন্না। এইটা না দেখলে জীবনই বৃথা। গান শেষ হইতেই আচল কে আক্রমন করলো অমিত হাসান। কিন্তু একি! আচলই অমিত হাসানের হাত ধরে রেখে বলছে "ছাড়ো ছাড়ো"। নাকি অমিত হাসান হাতে ফেভিকল লাগায়া নিছিল?
ডিরেক্টর সাব দেখি সিনেমার প্রথম গান টা আবার দিয়া দিলো। গানের তো কম পড়ার কথা না। এতক্ষন পর নায়িকা দেখি ডিস্ক টা ল্যাপটপে চালাইলো। ওরে মোর আল্লাহ! এইটা দেখি ভিডিও ফাইল! একটা ভিডিওর জন্য দশ বিলিয়ন ডলার! আর এইটার জন্যই এতকিছু! ইন্টারনেটে এক দেশ থেকে আরেক দেশে হাতিঘোড়া পাঠানো যায় আর এরা সামান্য ভিডিও ফাইল পাঠানোর জন্য এত কাহিনী করলো!?
নায়ক সাব যেইখানেই হাটতে থাকে সেইখানেই নায়িকা দেখি হাজির, আর দুজনের প্রতিবার দেখা হওয়ার পরই দুজন অবাক হয়। নায়িকা এবার নায়ককে বলিল, "তোমার মনের মনিটরে ভালোবাসার ফাইল আছে কিনা দেখতে চাই" আরে গাধী ফাইল কি মনিটরে থাকে? ফাইল থাকে হার্ড ডিস্কে এইটাও জানোস না। এইবার শাকিব বলিল, "নেই, তোমার হৃদয়ের নেট থেকে যদি ডাউনলোড করে দাও তবে পাওয়া যাবে" এইডা দেখি পুরাই ডিজিটাল ভালোবাসা! এইবার আবার গান। গানের কথা "চাই আমি তোমাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট" গান গুলোর গীতিকার আর সুরকার কে কাছে পেলে লম্বা সালাম দিতাম। সাথে কি সুন্দর নাচ। এরা এত এপিক ক্যা!?
সিনেমা প্রায় শেষ হয়ে আসলো তাও আমি কোনো ফাঁদ পাইলাম না কাহিনীতে। এদিকে অমিত হাসান এর সাথে সবসময় এই তিন চ্যালারেই দেখা গেলো। আরে চ্যালা চামুন্ডা কম পড়লে ধার নিতে পারতি। এক চ্যালারে বিভিন্ন রুপে হাজির করার মানে কি? অমিত হাসান এইবার শাকিবের ভাই আর অমিত হাসানের গার্লফ্রেন্ড কে মেরে ফেলল। অথচ শাকিব কে অজ্ঞান করেই রেখে দিলো। এইটা কেমন ইনসাফ! মারলে সবটিরে মার, আসল টারে বাচায়া রাখলি ক্যান? দশ বিলিয়ন ডলারের ভিডিও ফাইল বিক্রির জন্য এক বিদেশিরে ফোন দিয়া কইলো, "আই উইল কামিং"। অমিত হাসান ডিস্ক নিয়া বারে গেলো। সেইখানে বিদেশীরা বাংলা গানে নাচতেছিল। আসল নর্তকী দুই একবার মুখ মেলাচ্ছিল তবে বেশিরভাগ সময়ই চুপ ছিল। একবার বসলেই আরেকবার উঠলেই যেন নাচ হয়ে যায়।
সিনেমা এবার শেষ করা লাগবে। শাকিব অমিত হাসান কে মেরে তার কাছ থেকে ডিস্ক নিয়ে দেশে চলে এল। ডিস্ক পেয়ে কাজী হায়াত সুস্থ হয়ে উঠলো এবং সিনেমা টি শেষ হল।
সিনেমায় কোন ফাঁদ না পেয়ে এক দর্শকের মন্তব্য, "এই সিনেমা দেখার চেয়ে বিয়ের ভিডিও দেখা ভালো"
আমার ব্যক্তিগত ব্লগে এই পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫