যেহেতু ভ্যালেন্টাইনস ডে, তাই শঙ্কা ছিল সিনেমা হলে অধিকাংশই জোড়ায় জোড়ায় থাকবে । তাই বন্ধুকে বোরকা পরিয়ে হলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বন্ধুকে এই অফার টা দিতেই দিলো একটা থাবড়া। তাই তাকে বোরকা পরানোর প্ল্যান থেকে পিছু হটলাম। কিন্তু হলে ঢুকেই চোখ ছানাবড়া। সবাই দেখি জোড়ায় জোড়ায়! এতগুলো জোড়ার ভিতর আমরা দুই নাদান অসহায় এই অসহায়ত্ব নিয়েই দেখা শুরু করলাম ইফতেখার চৌধুরীর সিনেমা অগ্নি। পাশে বসে থাকা জোড়ার ছেলেটা বলে উঠলো, "উফ মাহি! আমার জান"। সে হয়তো ভুলে গিয়েছিল গার্লফ্রেন্ডের সাথে এসেছে। গার্লফ্রেন্ডের হাতে বাড়ি খাওয়ার পর চুপ হয়ে গেল। যাক গার্লফ্রেন্ড ছাড়া আসার একটা সুবিধা উপলব্ধি করলাম। অগ্নি সিনেমা টা মুক্তির আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। সেই সুবাদে হয়ত হল ছিল হাউজফুল।
কাহিনী সংক্ষেপ:
তানিশা (মাহিয়া মাহী) তার বাবা মা হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কামালের আস্তানায় ঢুকে তাকে হত্যা করে। কিন্তু বাকি হত্যাকারীদের খুজে পেতে তাকি পাড়ি জমাতে হয় থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডে গিয়েই তানিশা ছদ্মবেশ ধারন করে। এদিকে কামালের মৃত্যূর খবর গুলজার (আলীরাজ) এর কানে যায়। গুলজারই তানিশার বাবার মূল হত্যাকারী। গুলজার তানিশা কে মারার জন্য ড্রাগন(আরেফিন শুভ) কে পাঠায়। কিন্তু ড্রাগনের চোখ কে ফাকি দিয়েই তানিশা ডন কে ছুরিকাঘাত করে। তানিশা ড্রাগনের মামা কাবিলার বাসা ভাড়া নেয়। ড্রাগন তানিশার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু ড্রাগন জানতো না তানিশা ছদ্মবেশি কিলার এবং তাদেরই কিলার যাদের ড্রাগন নিরাপত্তা দেয়। ড্রাগনের সেফ হাউজ থেকেই তানিশা ডন কে মেরে ফেলে। ডন কে মারার পর তানিশার পরবর্তী টার্গেট হয় শিবা সানু। শিবা সানু কে মারার পরপরই ড্রাগন টের পেয়ে যায় তানিশা ছদ্মবেশি কিলার্। এদিকে হায়দার(মিশা সওদাগর) ও গুলজার জেনে যায় তানিশাই ছদ্মবেশি কিলার এবং সে ড্রাগনের প্রেমিকা। হায়দার লোক পাঠায় ড্রাগন কে মারার জন্য। কিন্তু তারা ড্রাগন কে না মারতে পেরে তার মামা মামিকে মেরে ফেলে। শেষদিকে তানিশা এবং ড্রাগন এক হয়ে গুলজার ও হায়দার কে হত্যা করে।
যা ভালো লেগেছে:
সিনেমার সবচেয়ে ভালো দিক এর এ্যাকশন দৃশ্যগুলো। কামাল কে মারার দৃশ্যটুকু, আরেফিন শুভর সাথে মাহীর স্পীডবোট চেজিং, গুলজার ও হায়দার কে মারার এ্যাকশন দৃশ্য ইত্যাদি প্রতিটি এ্যাকশন দৃশ্যই দর্শকের ভালো লাগবে। সিনেমার কাহিনীতেও গতি ছিল বলা যায়। সিনেমার চিত্রায়ন, উপস্থাপন, এ্যাকশন এবং কাহিনী মিলিয়ে ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যাবে এটা নিশ্চিত। শুভর সাথে মাহীর রোমান্টিক কমেডি গুলো যথেষ্ট উপভোগ্য ছিল। শুভ যতবারই পিস্তল বের করছিল ততবারই মাহির সামনে চলে আসা এবং চিতকার দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। ফুলের বদলে পিস্তল নিয়ে মাহির পেছনে ছোটা, লিফটে মামা তেলাপোকা কম দিল কিনা সংবলিত দৃশ্যগুলো ভালো ছিল। শিশুশিল্পী পূজার অভিনয় বেশ সাবলীল ছিল। পূজা তানিশার ছোটবেলার সাহসী চরিত্রটি বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। শুভ এবং মাহীর অভিনয় ভালো ছিল। প্রতিটা গানই শ্রুতিমধুর ছিল। ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড, ঝকঝকে কালার, লোকেশন সবকিছু মিলিয়ে এটাকে ভালো সিনেমা বলাই যায়।
যা ভালো লাগেনি:
সিনেমাটিতে ভালো না লাগার মত অংশ খুব কম ছিল। সাধারন দর্শকের দৃষ্টিতে ত্রুটি ধরা নাও পড়তে পারে। বোঝা যাচ্ছিল সবাইকে মারার পরই সিনেমা শেষ হয়ে যাবে। এর ভেতরে আরেকটু বৈচিত্র আনলে ভালো হত। প্রথমদিকে কামালের অতিমাত্রায় খসখসে গলা ভালো লাগার মত ছিল না। যেহেতু এ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা, তাই শেষ দিকের মারামারি আরেকটু চমকপ্রদ করা উচিত ছিল। কিছু জায়গায় আরেফিন শুভকে কাঁদো কাঁদো ভাবে উপস্থাপন করাটা বেমানান লেগেছে।
পরিচালক- ইফতেখার চৌধুরী
প্রযোজক- শিষ মনোয়ার
রচয়িতা- এ যে বাবু
অভিনয়- মাহিয়া মাহী,
আরেফিন শুভ, আলিরাজ, মিশা সওদাগর, কাবিলা, ডন, শিবা সানু, ড্যানি সিডাক, ইফতেখার চৌধুরী।
সম্পাদক- তৌহিদ হোসেইন
চৌধুরী
স্টুডিও- জাজ মাল্টিমিডিয়া
বণ্টনকারী- জাজ মাল্টিমিডিয়া
মুক্তি- ফেব্রুয়ারি ১৪ , ২০১৪
অগ্নি বাংলা সিনেমার জন্য আশাজাগানিয়া একটি সিনেমা। বাংলা সিনেমার সুদিনের বার্তা বহন করে। এই ধরনের কিংবা এর চাইতে ভালো সিনেমা তৈরি হলেই সিনেমা শিল্প চাঙ্গা হয়ে উঠবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:১৬