বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির অপহৃত হাবিলদার লুৎফর রহমানকে রক্তাক্ত অবস্থায় হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।
ভারতে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মাথায় একাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে এবং সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমন অবস্থায় তাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্ত দিয়ে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, বিজিবি ১২ ব্যাটালিয়ানের উপ অধিনায়ক মেজর একরাম খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘লুৎফুর রহমানকে ভারতে নির্যাতন করা হয়েছে। তার দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মাথায় একাধিক সেলাই রয়েছে। তাছাড়া তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। রাতে তাকে হস্তান্তর করার সময় ভারতের তেলিয়ামুড়া বিএসএফের ডিআইজি এবং বাংলাদেশের কুমিল্লা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।’
অন্যদিকে আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের গোয়েন্দা প্রধান মেজর ইশতিয়াক আহমেদ মোবাইল বার্তায় বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন যে, বিএসএফ হাবিলদার লুৎফর রহমানকে হস্তান্তর করেছে।
ক্ষুদে বার্তায় তিনি আরও জানান, শুক্রবার রাত তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে লুৎফরকে ফেরত দেওয়া হয়।
এর আগে শুক্রবার সকালে বিজিবির গুলিতে এক ভারতীয় নিহত হওয়ার পর লুৎফরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ নিয়ে শুক্রবার দুপুরের পর কুমিল্লা সীমান্তে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর এক দফা পতাকা বৈঠক হয়।
বৈঠকে লুৎফরকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশি সীমান্ত রক্ষীদের দাবি, নিহত ভারতীয় নাগরিক শাহ আলম মাদক চোরাচালানি।
অন্যদিকে, বিএসএফ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, শাহ আলম একজন সাধারণ নাগরিক। বিজিবি সদস্যরা তাকে ভারতের সীমান্তে ঢুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে।
ওইদিন সকালে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের দলকুইয়া গ্রাম সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক নিহত ও বিজিবি সদস্যকে তুলে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটে।
বিজিবি কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একদল চোরাকারবারি দলকুইয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেনসিডিল পাচার করছিল। ওই সময় বিজিবির বৌয়ারা বাজার বিওপির হাবিলদার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে তিনজনের টহল দল সীমান্তের ৮৮ নম্বর পিলারের কাছে চোরাকারবারিদের ধাওয়া করে এবং ফেনসিডিল আটক করে।
ধাওয়ার খবর পেয়ে পাচার করা ফেনসিডিলের মালিক ভারতের তারাপুকুর পাড়ের শাহআলম এবং তার সঙ্গীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তের দেড়শ’ গজের ভেতরে ঢুকে বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালায় বলে স্থানীয়রা জানান।
গলিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিরাজ হোসেন শামীম ও সদস্য মোসলেম মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ওই সময় বিজিবি সদস্যরা গুলি ছুঁড়লে শাহ আলম (৪০) নিহত হন।
তবে তার সঙ্গীরা লাশ এবং হাবিলদার লুৎফরকে (৫৫) ধরে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দুপুরের পর তারাপুকুর সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকে বসেছিলেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আক্তারুজ্জামান বীরপ্রতীক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিএসফের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন ২৯ ব্যাটালিয়নের গাউসভা ধনপুকুর ক্যাম্পের কমান্ডার একে হলব্রম ও ডেপুটি কমান্ডার অনীল কুমার।