somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাপা নুই: এক রহস্য ঘেরা দ্বীপ

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুদূর প্রাচীন যুগ থেকেই রহস্য পৃথিবীর মানুষকে করেছে রোমাঞ্চিত, ভীত এবং উৎসাহী। তাই অনুসন্ধিৎসু মানুষ নেমে পড়েছে রহস্যভেদের অভিযানে। অনেক রহস্যের জাল তারা আজও ভেদ করতে পারেনি। আবার কিছু ক্ষেত্রে আংশিক পারলেও পরিপূর্ণ তৃপ্তি আসেনি কখনো। রাপা নুই বা ইস্টার আইল্যান্ডের নাম শোনেননি এমন মানুষ কমই আছেন। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক রাপা নুই পৃথিবীর বুকে আজও এক রহস্যময় দ্বীপ। উনিশ শতাব্দীতে তাহিতির এক পর্যটক ঘুরতে ঘুরতে এসে এ দ্বীপের দেখা পেয়েছিলেন।



রাপা নামে তাহিতির এক দ্বীপ আছে যার আকৃতি অনেকটা এ দ্বীপের মতোই কিন্তু আয়তনে এর চেয়ে খানিকটা ছোট। তাই সেই রাপার সঙ্গে নুই অর্থ যোগ করে নাম রাখলেন রাপা নুই। একাধিক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি নিয়ে দৈর্ঘ্যে পনের মাইল আর প্রস্থে দশ মাইল আকারের ছোট্ট ত্রিকোণাকার আগ্নেয় এই দ্বীপটি প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল বুকের একপাশে বহুকাল ধরে জেগে আছে, সভ্য জগৎ থেকে শত শত মাইল দূরে। কিন্তু কেন এত রহস্য রাপা নুইকে ঘিরে? কি আছে এই দ্বীপে? প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে এক দুঃসাহসী ডাচ আবিষ্কারকের নজর পড়ে রাপা নুইয়ের ওপর, আর সেই তারিখটি ছিল ১৭২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল। ধারণা করা হয় সেদিনটি ছিল রবিবার, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দিন ইস্টার সানডে। সেই পবিত্র দিনটি থেকেই উনি এর নামকরণ করলেন ইস্টার আইল্যান্ড।

তিন হাজার অধিবাসী অধ্যুষিত সেই দ্বীপে ওলন্দাজ অধিপতি তিন ধরনের গোত্রের মানুষের সন্ধান পান। সেই তিন গোত্রের লোক ছিল তিন রকম গাত্রবর্ণ বিশিষ্ট। একদল ছিল গাঢ়কৃষ্ণ বর্ণ, কিছু ছিল লালচে রঙের যা রেড ইন্ডিয়ানদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আরেক দল মানুষ ছিল লাল চুলওয়ালা শ্যামলা গায়ের রং বিশিষ্ট। এ দ্বীপটিতে তিনি আখ, কলা, ডুমুর ইত্যাদি শস্যের সন্ধান লাভ করেন বলে তার লেখায় উল্লেখিত আছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যে বস্তুটি তিনি দেখতে পান তা হলো দ্বীপের প্রান্ত ঘেঁষে সমুদ্রের দিকে পেছন ফিরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো অদ্ভুত মানব চেহারা বিশিষ্ট শত শত দৈত্যাকার পাথরের মূর্তি। কঠিন আগ্নেয় শিলা খোদাই করে তৈরি এই মূর্তিগুলোর সংখ্যা ছিল ৮৮৭টি, যা মোয়াই নামে পরিচিত।



বিখ্যাত ব্রিটিশ নাবিক এবং আবিষ্কারক জেমস কুক ১৭৭৪ সালে ইস্টার আইল্যান্ডে গিয়ে দেখতে পান খুব অল্প সংখ্যক মূর্তিই তখন দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছে। বেশিরভাগ মাটিতে শায়িত অবস্থায় পড়ে আছে দ্বীপের চারদিকে, কিছু অর্ধনির্মিত আর কিছু ছিল মাটিতে আংশিক বা পুরোটাই প্রোথিত। এখন প্রশ্ন হলো কারা এই দ্বীপে এত বিশাল বিশাল মূর্তি তৈরি করেছিল? সেখানে যদি না তৈরি হয় তবে তা সুদূর জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে কীভাবে এলো? কারা নিয়ে এসেছিল সেই টন টন ওজনের কঠিন আগ্নেয়শিলার মূর্তি? যদি সেখানেই বানানো হয় তবে সেই লোহার মতো শক্ত পাথর খোদাই করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তারা কোথায় পেয়েছিল? নাকি নিজেরাই সে সব আবিষ্কার করেছিল? না এর কোনো সঠিক উত্তর আজও মেলেনি। রয়ে গেছে অজানা আর তা জানার জন্য আজও চলছে বিস্তর গবেষণা।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, এ দ্বীপে প্রথম বসতি গড়েছিল পলিনেশিয়া থেকে আসা মানব গোষ্ঠী আর এই মূর্তিগুলো তাদেরই তৈরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে পলিনেশিয়ান মানবরা প্রথম পা ফেলেছিল সেই দ্বীপে। তাদের মতে, সেই সমুদ্র স্রোত যা তাদের ভাসিয়ে এনেছিল সেই জনমানবহীন দ্বীপে তা আর তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়নি। আটকে পড়েছিল তারা সেখানে চিরদিনের মতো। আবার কারো কারো দৃঢ় বিশ্বাস এই বিশাল ওজনের মোয়াই বা মূর্তিগুলো কোনোভাবেই সেই দ্বীপ বা পৃথিবীর মানুষের তৈরি হতে পারে না। এটা অবশ্যই মহাকাশ থেকে কোটি কোটি মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা কোনো ভিন গ্রহের বাসিন্দাদের কাজ। পাথরের গায়ে স্পেস স্যুট পরা বেশ আঁকা মূর্তি চোখে পড়ে। এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরো কিছু প্রমাণও তারা দিয়েছে।

ভিনগ্রহবাসীর কাজ বলে যারা বিশ্বাসী তাদের আরেকটা যুক্তির পেছনে ছিল রাপা নুই দ্বীপে আবিষ্কৃত কিছু শিলালিপি যা ‘রোংগোরোংগো’ নামে পরিচিত। সে সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জনগণ লিখতে জানত না। এমনকি আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরাও না। আর আমরা সবাই জানি আজ থেকে কয়েক হাজার খ্রিস্টপূর্বে এই এশিয়া মহাদেশেই সর্বপ্রথম লেখার সূচনা হয়েছিল। তা হলে কি করে সেই জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাপা নুইয়ের লোকেরা লিখতে শিখেছিল! তাদের সে লেখার পদ্ধতি ছিল একেবারেই নিজস্ব ধারার। সেগুলোতে কি লেখা তা আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

কে তাদের লিখতে শিখিয়েছিল? কোথা থেকে তারা এই অভিনব লেখা শিখে এসেছিল? এমন লেখা তো পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলে দেখা যায় না। প্রশ্ন উঠে তবে কি করে লিখতে জানল জগৎ বিচ্ছিন্ন সেই দ্বীপবাসী? তা হলে কি সেই ভিনদেশি গ্রহবাসীই তা শিখিয়েছিল দ্বীপবাসীকে! রাপা নুই দ্বীপ বা ইস্টার আইল্যান্ডের হারিয়ে যাওয়া বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা আর দ্বীপের চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল পাথুরে দৈত্য তৈরির ব্যাপারটি সত্যি রহস্যময়।



লেখাটিঢাকাটাইমস নিউজএ প্রকাশিত
কৃতজ্ঞতা :তানজিলা প্রিমা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×