বছর তিনেক আগের কথা শিল্প সাহিত্যে বিলেতে বড় হওয়া বাঙালি তরুণদের সম্পৃক্ততা আসলে কতটুকু সেটি তলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম, অধীকাংশই আমাকে হতাশ করেছিল। তারা যেমন রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুলের প্রতি উদাসিন , ঠিক একই তালে শেক্সপিয়ার ও জন ডানের প্রতিও উদাসীন। প্রতিদিন অন লাইনে খবরের কাগজ পড়বার যেমন তাদের কোন তাগিদ নেই, তেমনি তথ্য প্রবাহের এই অফুরন্ত ভান্ডারের অনুসন্ধানেরও কোন প্রয়োজন তারা বোধ করেনা । তবে এই দৃশ্য শুধু পূর্ব লন্ডেনর বাঙালি পাড়ার অবস্থা। পুরো ব্রিটেনের বাঙালি তরুনদের এমন অবস্থা সেটি বললে আসলে ভুল বলা হবে। জলে উঠা তরুণের সংখ্যাও কম নয়। প্রত্যেকটি বাঙালি পাড়ার স্কুল গুলোতে ইয়ুথ পার্লামেন্টের মেম্বারের পদগুলো বাঙালি শিশু কিশোরদের দখলে। জিসিএসই কিংবা এ লেভেলে বাঙালি শিক্ষার্থীরাও লাভ করছে ঈর্ষণীয় ফলাফল।
এবার বিজয়ের চেতনার সন্ধানে বের হয়েছিলাম নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, প্রায় গোট পঞ্চাশ জন বিভিন্ন বয়সের তরুন ব্রিটিশ বাঙালীর সাথে কথা বলেছি, জানতে চেয়েছিলাম আসলে বিজয় দিবসের চেতনাটি তাদের কাছে কেমন ভাবে নাড়া দেয় সেটি জানবার জন্য। হতাশ হয়েছি দারুণ ভাবে, আবার স্বপ্ন দেখে পুলকিত হয়েছি বার বার। '৭১ নিয়ে তরুন প্রজন্মের ভাবনাগুলো অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। তাঁরা শুধূ এতটুকুই জানে '৭১ সনে বাংলাদেশে শুধু একটা যুদ্ধ হয়েছিলে তাতে পাকিস্তানীরা পরাজিত হয়েছিলো মাত্র !
কেউ বা ১৬ ডিসেম্বর আসলে কি সেই দিবসটিই জানেনা, ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস সম্পের্কেই তাদের উৎসাহ বেশী। বিলেতে জন্মনেয়া তরুনটির কাছে লাল সবুজের পতাকার চেয়ে সাদা ক্যানভাসে নীল ও লাল
রঙের পতাকা বেশী আকর্ষণীয়। তবে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী প্রজন্ম যারা যুদ্ধের পর কিংবা যুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে এসেছেন, অথবা যুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে থেকে মুক্তিযু্দ্ধের সময়ে সমস্ত অর্থ আর সহায় সম্বল দিয়ে সহায়তা করেছেন তাদের সন্তানরাই এই নতুন প্রজন্ম; যাদের কাছে ধীরে ধীরে বিজয় দিবসের চেয়ে ক্রিসমাস কিংবা বক্সিং ডে অধীকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, হতাশার কথা এখানেই।
আশার কথা হলো এঁরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধদের বিরত্বের কথা , গনহত্যার কথা , রাজাকারদের কূ-র্কতীর কথা , লাখো নারীর সম্ভ্রম হানীর কথা শোনার পর মুল বিষয়গুলো সম্পর্কে উৎসাহ দেখিয়েছে, জানিয়েছে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা , উচ্চারণ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির কথা। কেউ কেউ পরিবার থেকে কিছু শিক্ষা পেলেও মুক্তিযুদ্ধের উপর পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত, ইংরেজী বই , প্রামান্য চিত্রের অভাবের কথা বলেছেন। পাশ্চত্যের সিলেবাসে অভ্যস্ত শিক্ষার্থীরা নিজের দেশের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস আর শ্রেষ্ঠ বীরদের বিরত্বগাঁথা গল্পের সহজলভ্যতার সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন, তাদের কেউ এনে বসিয়ে কোনদিন মুক্তির গল্প শোনায়না, হাতে তুলেদেয়না একখানা বই কিংবা প্রামান্য চিত্র ! ঠিক এমনি ভাবে বেড়ে উঠা এই প্রজন্ম যদি ১৬ ডিসেম্বর ভুলে বসে, বা দিবসটি সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায় এই দায় ভার কে নেবে ?
নতুন প্রজন্মকে তাদের শেকড়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের একটা চেষ্টা করেছি একটি প্রামান্য চিত্রের মাধ্যমে। বিলতে বড় হওয়া তরুনরা ১৯৭১ নিয়ে বলেছেন তাদের চেতনার কথা , হতাশা আর স্বপ্নের কথা।
প্রামান্য চিত্রটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
British Bangladeshi's Thoughts on 16 Dec
প্রামন্য চিত্রটি তৈরীতে কারিগরী সহায়তা দিয়েছে চ্যানেল আই ইউকে।
আর সার্বিক তত্বাবধানে ছিলো 'নেটওয়ার্ক বাংলা '
১. ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:২৫ ০