ঠিক কি কারনে আন্তজর্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ২১ ফেব্রুয়রী দিনটিকে নির্বাচন করা হলো সেই তথ্যও আর পাওয়া গেলোনা , নেই বলেই হয়তো পাইনি !! কিন্তু আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা বানীতে কোথাও ১৯৫২ সনের বাঙালির ভাষার সংগ্রামের কথা লিখা নাই। এই দিনটি যে বাঙালির ভাষার আত্ন ত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নির্ধারন করা হয়েছে এটি আমারা বাঙালিরা যতটা বিশ্বাস করি পৃথীবীর তাবৎ লোক কি তাই জানে, তাদের জন্য আসলে কি তথ্য দেয়া আছে ইন্টারনেটে ??
১৯৯৯ সন হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিগত বছরগুলোতে পালন হওয়া ইউনেস্কোর জাতীয় অনুষ্ঠানমালার সংবাদগুলোতেও কোথাও ভাষা শহীদের এই আত্নত্যাগের কথা লিখা নাই। আরো হতাশার কথা হলো ২০০৮ সনেও একই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এই প্রতিবেদন যখন লিখছিলাম তখনও পর্যন্ত ২০০৮ সনের সংবাদটি ইউনেস্কোর অন্তজালে ছিলো, ছিলো পোষ্টারটিও। কিন্তু লেখা শেষ করে দেখি সেই সংবাদটিও আর পাওয়া যাচ্ছেনা। ভাগ্যিস ছবিটা সেভ করে রেখেছিলাম!!
শুধু তাই নয় ইউনেস্কোর ডাইরেক্টর জেনারেলের শুভেচ্ছা বানীতেও ভাষা শহীদের প্রতি কোন কৃতজ্ঞতা কিংবা ভাষা সংগ্রামের নাম নাম গন্ধও পাওয়া যায়নি।
ধরে নিলাম দিবসটি ৮ বছর পুরোনো হয়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষটি হয়তো অনিচ্ছাকৃত ভাবে বাদ পড়েছে, না পাঠক ইউনেস্কো মহাসাচিবের বানীতেও প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সনে উদযাপিত আন্তজাতিক মার্তভাষা দিবসের বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের আত্ন ত্যাগের কথা উল্লেখ নাই !!
বিষয়টি কি এমন যে,একটি দিনকে মাতৃভাষা দিবস হিসাবে বানাতে হবে তাই বানিয়ে দেয়া, নাকি অন্যকিছু?? শুধু মাত্র ভাষার জন্য একটি দেশের মানুষ এভাবে আত্নাহুতি দিয়েছে সেই দৃষ্টি ভঙ্গির প্রতি সম্মান রেখে,৫২ ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যদি এই দিবসের স্বীকৃতি আসে তবে তাদের সেই সম্মান দিতে বাঁধা কোথায় ?? এটি কি ইউনেস্কোর অজ্ঞতা নাকি তথ্য গোপনের চেষ্টা ?? বিচক্ষণ কারো মনে কি এই প্রশ্ন জেগেছে? বাংলাদেশের বাইরে আর্ন্তজতিক ভাবে আয়োজিত সেমিনার ও অনুষ্ঠানমালায় কি বাংলাদেশের নামটি কিংবা ইতিহাস সঠিকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে?? নতুন প্রজন্ম ও অবাঙালিরা কি জানতে পারছে কেন ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তজর্তিক মাতৃভাষা দিবস করা হলো ? আমরা বাংলাদেশের পত্র পত্রিকায় যেভাবে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা হিসাবে দিবসটিকে তুলে ধরছি আন্তজার্তিক গনমাধ্যম গুলোতে কি ঠিক সেইভাবে সংবাদগুলো প্রতিফলিত হচ্ছে ??
বিগত বছর গুলোতে আন্তজার্তিক ভাবে পালিত ইউনেস্কোর পোষ্টার লিফলেট কিংবা নিউজ লেটারে কোথাও বাংলাদেশের ১৯৫২ সনের এই আত্মত্যাগের সংবাদটি আমার চোখে পড়েনি।
শুধুমাত্র উইকিপিডিয়াতে এর খানিকটা ব্যতিক্রম। এখানে ভাষা শহীদের প্রতি কিছুটা হলেও সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। কারন উইকির সংকলনটাতে রাগিব ভাইয়ের সহযোগিতা রয়েছে।
ইউনেস্কোর ২০০৪ সনের পোষ্টার
২০০০ সন থেকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসে উপলক্ষে কয়েকটি পোষ্টার আমার নজরে এসেছে এর কোন একটাতেও ১৯৫২ সনের একুশে ফেব্র“য়ারী কিংবা ভাষার জন্য লড়াইয়ের কোন নাম গন্ধ পেলামনা। আমি না হয় শিল্পী নই, শিল্পের মুল্য বুঝিনা ইতিপূর্বে ছাপা হওয়া পোষ্টারগুলো পর্যবেক্ষণ করে পাঠক আপনারাই বলুন এই পোষ্টারগুলোর শিল্পমান উপলব্দি করতে পারছেন ?? এই পোষ্টারগুলোর সাথে ’৫২ ভাষা সংগ্রামের কোন গন্ধকি খুঁজে পেয়েছেন কেউ ?? পোষ্টারের কোন একটাতেও কি বাংলাদেশের শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি আঁকা যেতোনা ??
২০০৬ সনের পোষ্টার
এই বিষয়গুলো নিয়ে আসলে প্রতিবাদের চেয়ে বেশী প্রয়োজন আলোচনা । যুক্তি তর্কের চেয়ে বড় বেশী জরুরী সমাধানের পথ খোঁজা। ইউনেস্কোর যদি অজ্ঞতা থেকে থাকে তবে তাদেও অজ্ঞতা দূর করতে সহায়তা করা।
২০০৭ সনের পোষ্টার
আসলে আমাদের চাওয়া পাওয়া খুব সীমিত, এত সহনশীল জাতি পৃথীবীতে দ্বীতিয়টি আছে বলে আমার জানা নেই....অল্পতেই আমরা তুষ্ট থাকি। তাই আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসটি ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখে পালিত হচ্ছে দেখেই আমরা অবিভূত !!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১০:৪৩