দৃশ্যপট ১.
থানার সীমানায় ঢুকার পর থেকেই একটা গাড়ীর ধ্বংসাবশেষ বারবার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলো, আমি আমার বন্ধু "হুজাইফার" সাথে একটুআধটু কথাও বলছিলাম যে, গাড়ীটার মূল ইতিহাসটা কি হতেপারে! সৌভাগ্যক্রমে একটু পরেই একজন কনস্টেবলের সাথে কথা হয়েছিলো আর তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম এই গাড়ীটা ১৯৯২ সালে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিলো আর তাতে তৎকালীন জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের "স্ত্রী" মারা গিয়েছিল! এবং সেখান থেকেই "নিরাপদ সড়ক চাই" নামক সামাজিক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে কাজ করে আসছে নায়ক ইলিয়াস, যদিও এই সমস্ত আন্দোলনকে সব সরকারই "থোড়াই কেয়ার" করে নচেৎ তারেক মাসুদ, মিশুক মনির, আইনুদ্দীন আল আযাদের মত গুণী লোকদের আমরা অকালেই হারাতাম না!
.
দৃশ্যপট ২.
হঠাত করেই খেয়াল করলাম অনেকটা ছোট কভার্ড ভ্যানের মত একটা যাত্রীবাহী টেম্পু থানার ভিতরে ঢুকলো আর কিছু মহিলা থানার সীমানার ভিতরের এককোণে স্তব্ধ অবস্থায় বসে আছে! একটু খবর নিয়ে জানতে পারলাম টেম্পুটির ভিতরে একজন সিএনজি চালকের লাশ আছে যে কিনা আগের দিন রাতে কিছু দুর্বৃত্ত কর্তৃক খুন হয়েছে আর কারনটা হচ্ছে সিএনজি ছিনতাইয়ের তুচ্ছ ঘটনা (যদিও সিএনজিটা হজম করতে পারেনি), আর সেই মহিলাগুলো হচ্ছে হতভাগ্য এই সিএনজি চালকের স্বজন; তাদেরকে দেখে মনেহচ্ছিল অনেকটা অসহয় তারপেও যেন তারা একটু ন্যায়বিচারের আশায় "শেষ আশালয়" থানায় এসে ভিড় জমিয়েছে
.
দৃশ্যপট ৩.
থানা ভবনের মাঝের খালি জায়গাটা প্রায় অনেকগুলো বেনামি মটর সাইকেল পড়ে আছে, একটু হেটে ভিতরে যেতেই কাস্টডির পাশে একটা তালাবন্ধ কুঠরিতে চোখ পড়লো, ভাঙ্গা জানালার ফাকা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল পরিত্যক্ত কিছু বাজেয়াপ্ত মাল! যার মধ্যে শ'খানেক বিদেশী মদের বোতলও আছে আরো কিছু লাগেজ আর কি কি যেন আছে! একজন কনস্টবলকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলছিল "এগুলো চোরাই পথের আটক কৃত মাল এইযে রবিবারেই কোর্টে চালান হয়ে যাবে!" তার কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছিল যে, এইতো কিছুদিন হল এগুলো আটক হয়েছে আর রবিবারেই চালান করে দেয়া হবে; অথচ আমার কাছে মালগুলো দেখে মনে হচ্ছিল কত বছর যাবত যেন এভাবে পড়ে আছে আর কত কত রবিবার চলে যায় কিন্তু কোর্টে চালান করার মত লোক বা উদ্যোগ কিছুই নেই!
.
দৃশ্যপট ৪.
ঘড়ির কাটা রাত আটটা ছুঁইছুঁই থানার সীমানারর ভিতরেই পাইচারি করছিলাম, হঠাৎ দেখলাম দুচার জন লোক কি যেন কথা বলছে! কথা শেষ করেই তাদের মধ্য থেকে একজন "কমিউনিটি পুলিশিং" এর রুমে ঢুকে একজন এসআইয়ের সাথে কথা বলছে এবং এসআই লোকটাকে ভালোভাবে ঝাড়ছে! একটু পরে লোকটা পকেট থেকে বের করে টেবিলের নিচ দিয়ে মুঠকরে কি যেন দিলো, আর এসআই ড্রয়ার থেকে একটা চাবি বের করে দিল অতঃপর সেই লোকটি বেরিয়ে আসে আর সাথে সবাই মিলে আটককৃত একটা সিএনজিতে উঠে সেটা চাইলিয়ে চলে যায়! পরে অবশ্য বুঝতে বাকি রইলো না যে, "কমিউনিটি পুলিশিং" রুমে তখন কি হয়েছিল!
.
দৃশ্যপট ৫.
পরদিন সন্ধ্যায় একটা লোকের সাথে কিছুটা আলাপচারিতা হয়েছিলো, কথার ধরনে বুঝতে পারলাম সে এই থানারই বিশেষ বাহিনীর লোক! লোকটা আমাকে বলছিলো, "ভাই আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি ৯০-৯১সালের দিকে, আমাদের বলা হয়েছিল আমরা যদি অস্ত্র জমা দেই তাহলে আমাদের নিঃশর্ত ক্ষমার সাথে সাথে বিশেষ বাহিনীর মর্যাদা দিবে... সরকার তার প্রতিশ্রুতি পূরণও করেছে! তবে আমারা সর্বহারাতে যোগ দেয়ার আগে আমাদেরকে বোঝানো হয়েছিল যে, আমারা শুধু নিজেদের এবং গরীবের স্বার্থ রক্ষার জন্য লড়বো কিন্তু সর্বহারার সদস্য হওয়ার পর বুঝতে পারলাম এখানে অন্য মতলব আছে! (বাকিটা নাহয় নাই বললাম)
উপরের লেখা দৃশ্যপটগুলো আমাদের দেশের কোন এক থানার হাল-অবস্থা... তবে এটাকি একটা দেশের থানার স্বাভাবিক অবস্থা কিনা সেটা জানিনা(!)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১২