সেদিন "সন্তোষ " ভাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "ভাই... আজকে লাঞ্চের জন্য কি এনেছেন?" তবে সে কিছুটা বিব্রতবোধ করলেও অকপটেই উত্তরটা দিয়েছিলো যে, "ভাত আর লবণ এনেছি!" উত্তরটা শুনে চমকে গিয়েও পরক্ষণেই মনে হচ্ছিল যে, কথাটা শুনতে কষ্ট লাগলেও এটাই হয়তোবা সত্যি! কারন তার এই সামান্য বেতন যদি নিজের ভালো খাবারের পিছনেই খরচ করতে হয় তাহলে মায়ের কাছে কি পাঠাবে? পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিযে সে-ই! তবে আমি তাকে সেদিন আমার সাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু সে আমার সাথে খায়নি, হয়তোবা চক্ষুলজ্জার কারনে; অথচ আমার অনেক কষ্ট লেগেছিল তার দুপুরের খাবার তালিকার পরিধিটা দেখে!
সাজিদ ভাইয়ের মুখে "সন্তোষ'' নামক মানুষটির কষ্টাবস্থা ঠিক এমন ভাবেই শুনেছিলাম! কথাগুলো শুনতে আমার কাছেও খুব খারাপ লেগেছিলো আর এটাও জানি যে, কথাগুলো শুনলে যেকেউই কষ্ট পাবে, কিন্তু বাস্তবতার বেলায় অনেকেই হয়তো পিছু হটবে অনেক সময়, যদিও সে নিকটতম "কেউ" হয়!
.
আমাদের সমাজের কাছে আমরা কতটুকু দায়বদ্ধ(?) বা আমাদের সমাজ আমাদের কাছে কতটুকু দায়বদ্ধ(!) যেখানে একজন "সঞ্জু" শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সনদের কারনে একটি বিভাগের "ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর" হয় সেখানে একজন "সন্তোষ" সেই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয় শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সনদ না থাকার কারনেই! অথচ দক্ষতা বা মেশিন অপারেট করার দিক থেকে! "সঞ্জুদের" চেয়ে "সন্তোষরা" অনেক বেশী অভিজ্ঞ এবং পারদর্শী! কিন্তু পারিশ্রমিকের বেলায় "সঞ্জুরা" পায় ২০০০০ টাকা বা তারচেয়েও বেশী আর "সন্তোষরা" পায় ৪০০০ টাকা বা তারচেয়েও কম(!)
.
কিন্তু কেন? কিসের এই বৈষম্য? একটা কাগুজে প্রাতিষ্ঠানিক সনদের কি এমন শক্তি আছে যে, মানুষকে বিভক্ত করে দেয়! আমরা কি শুধু সামাজিকতা রক্ষার্থেই বলবো যে, মানুষ মানুষের জন্য" "প্রতিটা মানুষেরই সমান অধিকার আছে...!" নাকি শুধু বইয়ের মধ্যেই এই বাক্যগুলো সীমাবদ্ধ থাকবে!
আর নাকি সমস্ত "সন্তোষরা" শুধু কঠোর পরিশ্রম করেই যাবে আর সেই ফল ভোগ করবে সমস্ত "সঞ্জুরা"! আর সেই গল্পগুলোর অভিজ্ঞাত পরখ করবে শুধুই "সাজিদুরা" আর সেগুলোকে শুধুই "তাসরিফরা" লিপিবদ্ধ করবে!
এটাই কি হওয়ার কথা ছিল?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩