অনেক দিন হল ব্লগে পোষ্ট দেওয়া হয় না। পাঠকের পরচিতিটাও এমন ভালো করে ধরে রাখতে পারিনি ব্যস্ততার মাঝে। ঘুরে এলাম নিজ জেলায় মোগল স্পাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শক বজরা শাহী মসজিদ থেকে।
নোয়াখালী মাইজদী প্রধান শহর হতে প্রায় ১৫ কিঃমিঃ উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরানামক স্থানে প্রধান সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে বিখ্যাত এই বজরা শাহী জামে মসজিদ অবস্থিত। নোয়াখালীসহ সমগ্র বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে রয়েছে এর ঐতিহাসিক অবদান। দিল্লীর মোগল সম্রাটগণ অবিভক্ত ভারতবর্ষে ৩০০ বছরের অধিকাল রাজত্ব করেন। এদীর্ঘ সময়কালে মোগল সম্রাটগণ এবং তাদের উচ্চপদস্থ আমলারা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ইমারত, মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজো স্থাপত্য শিল্পের বিরল ও উজ্জ্বলনির্দশন হিসেবে বিরাজমান। এগুলোর মধ্যে আগ্রার তাজমহল, সেকেন্দ্রা, দেওয়ানে আম, আগ্রার দূর্গ, দিল্লীর লাল কেল্লা ও দিল্লির শাহী জামে মসজিদ অন্যতম। দিল্লীরবিখ্যাত জামে মসজিদের অনুকরণে মোগল জমিদার আমান উল্লাহ খান ১১৫৪ হিজরিসাল, ১১৩৯ বাংলা মোতাবেক ১৭৪১ সালে অর্থাৎ প্রায় তিনশত বছর পূর্বে বজরাশাহী মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজও মোগল স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে।
নোয়াখালী জেলায় থাকা শর্তেও প্রাচীন অনন্য নিদর্শন মসজিদটি দেখতে আমার বড্ড দেরি হয়ে গেল। আজও যেতে পারতাম না যদি, তারানা সাঁয় না দিত। তারানার বাড়ী একই উপজেলায় হওয়ায় তাকে বাড়ীতে এগিয়ে দিয়ে আসতে মসজিদটিতে আচরের নামায পড়ার সৌভাগ্য হল।
মসজিদের পাশ্ববর্তী গ্রামে আমার এক স্কুল বন্ধু ছিল হায়দার। তার সাথে গত দুই মাস পূর্বে দেখা হয়ে কৈশর সম্পর্কটি আরো জোড়ালো হল। বিদেশে ফেরত বন্ধু হায়দারের নাম্বারটি তখনি সংগ্রহ করা হল। তারানাকে নামিয়ে দিয়ে মসজিদের কাছাকাছি এসে হায়দারকে ফোন করি। আমি ওদের এলাকাতে আসছি শুনে সে সত্যি বিস্মিত হল। মসজিদের কাছা-কাছি স্থানে আছি বলা মাত্রই আমাকে দশ মিনিট দাঁড়াতে বলল। দশ মিনিট বললেও সাত মিনিটের মাথায় সে চলে আসলো। তখন আচরের নামাযের আযান দেয়। বললাম চল আজ তোদের প্রাচীন মসজিদেই নামাজ পড়ি সেও রাজি হল। নামাজ শেষ করে নিজ হ্যান্ড সেটেই প্রাচীন অনণ্য নিদর্শন মসজিদটি ও মসজিদের আশে পাশের কিছু ছবি তুললাম যা মোটেও ভালো হয়নি তাও দিলাম
মসজিদে প্রবশের প্রধান দরজা
মসজিদের প্রবেশ পথের উপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ
৩টি ধনুকাকৃতি দরজার মধ্যে ১টি
দিঘীর একাংশতে ঘাট মুসল্লিদের জন্য ওযু ও গোসলের ঘাট
ফসলের মাঠ হলেও এটি কিন্তু দিঘী যা বর্ষা মৌসুমে প্রকাশ পায়
বাহির থেকে মসজিদের একাংশ
সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে সূর্যি মামা নিভু নিভু অবস্থায় আরো একটি ছবি।
মসজিদ থেকে নামায শেষ করে ছবি তোলার পাশাপাশি নামাজ পড়তে আগত মুসল্লিদের উক্ত মসজিদটি নিয়ে কথা তুলি কিছু জানার চেষ্টা করি, তাদের ভাস্য মতে, এ মসজিদে কিছু মানত করলে তাতে শুভ ফল পাওয়া যায়। তাই দেখা যায় যে, দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি পাওয়ার আশায় অগণিত মহিলা ও পুরুষ প্রতিদিন এ মসজিদে টাকা পয়সা সিন্নি দান করেন। এছাড়া বহু দূর- দূরান্ত থেকে মানুষ এসে এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ ঐতিহাসিক মসজিদখানার ঐতিহ্য রক্ষার্থে এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, দিল্লীর বিখ্যাত জামে মসজিদের অনুকরণে মোগল জমিদার আমান উল্লাহ খান
১৭৪১ সালে অর্থাৎ প্রায় তিনশত বছর পূর্বে বজরাশাহী মসজিদ নির্মাণ করেন। জমিদার আমান উল্যাহ্ তাঁর বাড়ীর সম্মুখে ৩০ একর জমির উপর উঁচু পাড় যুক্ত একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। এ দিঘীর পশ্চিম পাড়ে মনোরম পরিবেশে আকর্ষণীয় তোরণ বিশিষ্ট প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট এ ঐতিহাসিক মসজিদ খানা নির্মাণ করেন। এ মসজিদকে মজবুত করার জন্য মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভীত তৈরী করা হয়। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর দ্বারা গম্বুজগুলো সুশোভিত করা হয়। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৩টি ধনুকাকৃতি দরজা। মসজিদের প্রবেশ পথের উপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেওয়ালে ৩টি কারুকার্য খচিত মিহরাব আছে।
মোগলসম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরীফের বাসিন্দাতৎকালীন অন্যতম বুজুর্গ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী এ ঐতিহাসিকমসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োজিত হন। তাঁর বংশধরগণ যোগ্যতা অনুসারে আজো এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে প্রথম ইমাম সাহেবের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিকী উক্ত মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
ব্লগার রাজিব নুর তার ব্লগে প্রায় লোকাল বাস সম্পর্কে বলেন, আমি তারানাকে নিয়ে বাসে যেতে এই রকম একটি অভিজ্ঞতা হয়। যা অন্য একদিন বলব বলে আশা রাখি।
কিভাবে যাওয়া যায়:
নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যে কোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সাযোগে বজরা হাসপাতালের সম্মুখে নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছা যাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৫