somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথ শিশুর শীত উদযাপনে দারিদ্র্যতা ও ধনী, গরীব বৈষম্য!

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দারিদ্র্যতা হলো একটি বিশেষ আর্থসামাজিক অবস্থার নাম। এ অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন, যখন সমাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে। শত মুখে এদেশের উন্নয়নশীলতার কথা শুনলেও অন্তরে ঠাই দেয়ার মতো আত্নবিশ্বাস হয়ে ওঠেনি যে, আমার সোনার বাংলা উন্নয়নের এক মহারাজ্য।

সম-সাময়িক বিশ্বে দারিদ্র্য একটি বহুল আলোচিত বিষয় যা মানবতার প্রতি একটি বড় অভিশাপ। স্ব-চোখে দেখা এই অভিশাপের গল্প বলছি, ফুটপাতের পাশে শরীফ নামের ৭-৮ বছর বয়সী পথ শিশুর গল্প এটি। প্রায়’ই সিলেটের জিন্দাবাজার মোড়ে দেখা যায়। তীব্র শীতেও ছেড়া একটি পুরনো শার্ট আর হাফ প্যান্ট পড়ে আছে। ১০’ই জানুয়ারি প্রায় সন্ধ্যা পরবর্তী সময়ে এক ভদ্রলোকের কাছে দুই টাকার ভিক্ষার জন্য আবদার করে। লোকটি বেশ শীতের ভয়ে শীত উদ্যাপনে ভারি জামা-কাপড় পড়েছেন। কিন্তু এ শরীফ নামের ছেলেটি যখন দুই টাকা চেয়েছিল না দিয়ে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে, ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আমি পাশেই দাড়িয়ে ছিলাম, বন্ধুর জন্য অপেক্ষায়। ঈশারায় ডেকে নিয়ে ৫ টাকার একটা কয়েন দিয়ে বললাম, নাম কি রে তোর? উত্তরে বলল, শরীফ। আর কিছু বলে নি, অন্য কারও খুঁজে দারিদ্র্যের অভাব পূরণে শীতের শত প্রকোপ উপেক্ষা করে জীবিকার সন্ধ্যান করছে। সত্যিই মানুষ কত বিচিত্র।

আধুনিক মানবতা বিকাশে দারিদ্র একটি মারাত্নক অন্তরায়। আর বাংলাদেশের অনুন্নয়নের একমাত্র অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্যতা। বস্তুত দারিদ্র ব্যাপারটি একান্তই আপেক্ষিক। কেননা যে কেউ অন্য কারও তুলনায় দারিদ্র্য বা ধনী হতে পারে। আমরা সাধারণত বলি, শরীফের মতো পরিবারের যে লোকগুলো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে অক্ষম তারাই দারিদ্র্য। দারিদ্রের কোন সংজ্ঞা হয়তো নেই। ইংরেজীতে একটি কথা আছে “A country is poor, because it is poor” মানুষে মানুষে তারতম্য আছে। সমাজে কথিত এসব ভদ্র লোকদের মধ্যে তারতম্যের জন্যই অভাব-অনটনের সীমা থাকে না। তবে, শরীফের মতো মানুষদের দেখলে ষ্পষ্টত বুঝা যায়, “দারিদ্র্য মানে মৌলিক সামর্থ্যের অভাব” অর্থাৎ মানুষ যখন তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতির অভাববোধ করে তখন সে দারিদ্র্যের আওতায় পড়ে। ধনী ব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই নিজেদের দারিদ্র্যতাকে দূর করে ফেলেছে। কিন্তু সমগ্র মানবজাতিকে দারিদ্র্যতা মুক্ত করার প্রচেষ্টা গুলো সব-সময়ই ব্যর্থ হয়েছে। কেন? কারণ ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত চায় না যে, কেউ বা কোনো কিছু তাদের সম্পদে ও পদমর্যাদায় হস্তক্ষেপ করুক।

প্রাচীন ইসরায়েলের রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “দেখ, উপদ্রুত লোকদের অশ্রুপাত হইতেছে কিন্তু তাহাদের সান্ত্বনাকারী লোকদের কেহ নাই, উপদ্রব্য লোকদের হস্তে বল আছে”। ঊনবিংশ শতাব্দীতে, একদিকে যখন অল্প কিছু দেশ বাণিজ্যে ও শিল্প দ্বারা প্রচুর সম্পদ সংগ্রহ করেছিল, তখন অন্যদিকে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি গুরুত্বের সঙ্গে দারিদ্র্যতার প্রতি মনোযোগ দিয়েছিল। পৃথিবীর সম্পদ গুলোকে কেউ কি আর সমান ভাবে বন্টন করতে পারে? কেউ কেউ চিন্তা করেছিল যে, সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ শ্রেণীবৈষম্যহীন এমন এক আন্তর্জাতিক সমাজ নিয়ে আসতে পারবে যাদের মধ্যে সমান ভাবে সম্পদ বন্টন করা হবে। কিছু ধনী দেশ সমাজতন্ত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করেছিল যে, সমস্ত নাগরিকের “জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত” যত্ন নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল। পক্ষান্তরে, এ সমাজ ব্যবস্থায় উচিত শ্রম দিয়ে কাজ করেও সঠিক সময়ে বেতন পাওয়া যায় না। দারিদ্র্যতা মোচন হবে কি দিয়ে? চরম দারিদ্র্যতা তখনই দেখা দেয় যখন দেশগুলো, সরকারগুলো ও ব্যক্তি বিশেষরা কেবল নিজের স্বার্থকে তুলে ধরে ও সেটাকে বজায় রাখার জন্য কাজ করে।

উদাহরণস্বরূপ, ধনী দেশের সরকারগুলো পৃথিবী ব্যাপী দারিদ্র্যতাকে দূর করার বিষয়টাকে ততটা প্রাধান্য দেয় না। কারণ তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকে এবং তারা ভোটারদের খুশি করতে চায়। তাই তারা দারিদ্র দেশগুলোর কৃষকদের ধনী দেশগুলোতে তাদের ফসল বিক্রি করতে বাধা দেয়। যাতে ধনী দেশগুলোর কৃষকরা তাদের ব্যবসা না হারায়।

ষ্পষ্টতই, দারিদ্রতা লোকদের ও সরকারের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার প্রবণতা হল মানুষের নিজেদের সমস্যা তৈরি করা। বাইবেল লেখন শলোমন বলেছিলেন- “একজন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্তৃত্ব করে”। তাহলে কি দারিদ্রতা দূর হওয়ার কোন প্রত্যাশা রয়েছে? কোনো সরকার কি এই মনুষ্য প্রবৃত্তিকে পাল্টাতে পারবে? জানি না কার দ্বারা পরিবর্তিত হবে “আমার সোনার বাংলা” তবে শরীফের মতো পথ শিশু বালকদের জন্য সমাজের সর্বজন স্বীকৃত সুশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শীত উদযাপনে এদের মতো পথ শিশুদের ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে না দিয়ে স্বল্প কিছু দিয়ে সাহায্য করুন। এদের মুখে এক চিলতে হাসির জন্য কাজ করুন। আপনারা ভারি মোলায়েম কাপড় পড়ে শীত উদযাপন করতে পারবেন তবে, এদের কি শীত উদযাপনের অধিকার টুকু নাই। আসুন দল,মত, শ্রেণী-বর্ণ নির্বিশেষে এদের শীত উদ্যাপনে সহায়তা করি।



লেখক: শিব্বির আহমদ
শিক্ষার্থী
ইতিহাস বিভাগ (তয় বর্ষ)
এম.সি কলেজ, সিলেট।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×