সময় আনুমানিক ধরে নিলাম রাত ১১.০০ টা সর্বশেষ বাথরুমে যাবো। বাথরুমের আয়নায় নিজের মুখখানি দেখে কেমন জানি অন্য রকম একটা অনুভূতি মনে হবে। ঐদিন আর সাবান, ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার ইচ্ছে হবে না। কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকবো। অনুভূতিটা বুঝানোর মতো না, অসহ্য এক অশান্তি আমাকে ঘায়েল করবে। বের হয়ে নিজের বিছানায় বসে পড়বো, ইচ্ছে হবে মায়ের সাথে একটুখানি কথাবলি কিন্তু রাত তো অনেক হয়ে যাবে মা ও বোধহয় তখন ঘুমিয়ে পড়বে।
শুয়ে পড়বো, শুয়ে পড়ার আগে একটুখানি দোয়া দুরূদ পড়তে ইচ্ছে হবে, আমি প্রায়ই দোয়া দুরূদ পড়ে ঘুমোতে যাই। শুনতাম মায়ের কাছে নিজের ভিতরে অশান্তি লাগলে আয়াতুল কুরসী পড়ার জন্য, কিন্তু অধম আমি আয়াতুল কুরসীটা তো পুরোপুরি মুখস্থ পড়তে পারি না তাই হয়তো ঐদিন আয়াতুল কুরসী টা পড়তে পারবো না। কালেমা আর ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবো। এপাশ-ওপাশ করতে করতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়বো, কিন্তু এই ঘুমটা রজনী শেষে কিচিরমিচির পাখির ডাকে ভরা প্রভাত বেলার জন্য অপেক্ষা নয় চিরদিনের জন্য। পড়তে পারলাম না গত দিনের যোহর, আছর, মাগরিব এর নামাজ আর ঘুমোনোর আগেও পড়তে পারিনি এশার নামাজ। আর নামাজ পড়া হবে না, কারণ আমি তো আর পরদিন ফজরের সময় ওঠতে পারবো না নামাজ পড়ার জন্য। আমার ঘুমটা যে আর ভাঙ্গার নয়।
আগের দিন রাত থেকেই আমার মা একটা না বুঝানো যন্ত্রণা অনুভূত করবেন, কারণ সন্তানের কোন কিছু হলে মা’বুদ তায়ালা আগে মায়ের কাছে অজানা মাধ্যম বরাবর খবর পৌঁছে দেন। বাপ টাও রাতে শুইতে যাওয়ার সময় মায়ের সাথে আমাকে নিয়ে অনেক কথা শেয়ার করবেন, কেন জানি ঐ রাতটাই মা-বাপ এর আমার প্রতি মায়া টা বেড়ে গেলো বেড়ে গেলো ভাব। আামাকে নিয়ে নিজেদের স্বপ্নের কথা মা কে জানাবেন। আমাকে আগামী নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার মনোবাসনা। তারপর আমার Heaven Queen এর কথা ও আমার মা আর বাপ চিন্তা করবেন বিয়ে-শাদী করাবেন বলে কথা। উনাদের বড় ছেলের বিয়ে নিজেরা তো করাতে পারেন নি তাই আমাকে নিয়ে একটু বেশিই স্বপ্ন দেখে থাকেন। রাতে বড় বোন টাও আমাকে ফোন কল দিয়ে সর্বশেষ ঝাকুনি দিবে, আমার বোন টা প্রায়ই আমার সাথে রাগ করে। সকাল বেলা আমার মা শ্রদ্ধেয় পিতাজান কে বলবেন আমাকে ফোন দেওয়ার জন্য, মায়ের ক্ষমতা নাই কারন আমার মা মোবাইল-ফোন এর ব্যবহার টা কখনো করেন নি। সকাল গিয়ে প্রায় দুপুর হয় হয় সময়, আমার জীবনের সদ্য সাবেক হবু অর্ধাঙ্গীনির ফোন কল। বার বার ফোন দিতে দিতে এক সময় আমার উপর রেগে গিয়ে ঐ দিনের মতো ফোন করা বন্ধ করে দিবে। আমার উপর অভিমান করেছে বলে কথা, অভিমান টা তো আমারই ভাঙ্গাতে হবে কিন্তু এই অভিমানটা তো ভাঙ্গানোর জন্য করিনি সে। তারপর সে ঠিক অন্য দিনের মতোই নিজের মতো হাসবে, খেলবে আর অন্য প্রত্যেকটা দিনের মতোই অধ্যয়নে মনোযোগী হয়ে যাবে, একটু বেশিই মেধাবী তো তাই নিজের গুরুত্বটাই নিজের কাছে বেশি।
ভাই সুলভ আমার প্রিয় বন্ধু টা আমাকে ফোন দিবে আমি রিসিভ করবো না, বার বার ফোন দিবে তারপরও রিসিভ করবো না রাগে, অভিমানে আমাকে অনেক গালাগালি করবে। বলবে, সালা হারামি তোর সাথে আর কথা হবে না আমার। তারপরও আমার উত্তর নেই, সত্যিই রে দোস্ত তোর মতো আরেকটা দোস্ত কি পাবো পরকালে? তুই তো আমার সর্ব সুখ, দুঃখের বন্ধু তুই আমাকে বুঝস তাহলে কেনো তুই আজ আমার সাথে অভিমান করলে। বুঝস না তোরা তোদের জন্য মা-বাপ ছেড়ে চলে আসতাম। এক সাথে এক ছাদের নিচে যখন আড্ডা দিতাম আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না। তারপরও আমার উপর অভিমান করবি তোরা?
স্বজনদের একটার পর একটা ফোন কল কারও ফোন ধরে উত্তর দেওয়ার মতো ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা নিয়ে যাবেন ঐ রাতেই। অনেকেই বলবে, শিব্বির আগে এরকম ছিলো না খারাপ হয়ে গেছে। আমি খারাপ হয়নি উচ্চারণ করবো না, কারণ ভালো খারাপ মানুষের বিচার্য আমার নিজের না, আমি নিজেকে নিদোর্ষ বললেই আমাকে কেউ নিদোর্ষ মানবে না।
অত:পর প্রায় বিকাল হয়ে যাবে কেউ জানবে না আমার মরার খবর, আমার আত্না খুবই পীড়াতে থাকবে। কারন মরা মানুষের লাশ দুনিয়াতে বেশিক্ষণ থাকতে নেই যত তাড়াতাড়ি পারা যায় দাফন করা উত্তম। আমার আত্নাটা আমার খুব কাছের মানুষ গুলোর কাছে গিয়ে হাতজোড় নিবেদন করবে দাফন কার্য সম্পন্ন করার জন্য। কেউ শুনবে না আমার কন্ঠের প্রতিধ্বনি। আমার লাশটা ইট কোঠার দেয়ালে আটকা পড়ে থাকবে।
পাশ দিয়ে কিছু পিঁপড়া লাইন ধরে যাতায়াত করবে। শুনেছি মরা লাশের পাশে নাকি পিঁপড়া দেখতে পাওয়া যায় বেশি। আমি পিঁপড়া গুলোকে কিচ্ছু করতে পারবো না, যেই আমি কি না কত ধরনের প্রাণিদের হত্যাযজ্ঞ করেছি সেই আমি পিঁপড়াদের কাছেও অসহায় হয়ে যাবো। পৃথিবীর বুকে আমার লাশটা’ ই থাকবে সব থেকে বেশি অসহায়।
অনেক খোঁজাখুজির পর আমার প্রিয় বন্ধু কামরান আমার রুমের দরজায় কড়ানাড়বে আমাকে কিন্তু ঐ দিন পৃথিবীর কোন আওয়াজ আমার কানে যাবে না। নিস্তব্দ লাশ হয়ে ঘরটিতে শুয়ে থাকবো। এক সময় দরজা ভাঙ্গবে, খুব কাছের বন্ধু তো, তাই আমার কন্ঠের আওয়াজ শুনার জন্য বিভোর মুহুর্ত কাটিয়ে আমাকে আলিঙ্গন করতে আসবে। কিন্তু আমি তো আর তখন এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছি। আমাকে একটু খানি কথা বলানোর জন্য, একটু খানি হাসানোর জন্য আমার বন্ধুটি নানান রকম রং ঢং আামার সামনে উপস্থাপন করবে। যখন দেখবে আমি আর এ ওদের সাথে একসাথে বসে আড্ডা দিবার ক্ষমতা হাড়িয়ে ফেলেছি, একসাথে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার ক্ষমতা হাড়িয়ে ফেলেছি, যখন ওর মন খারাপ থাকবে আমি নানা রকম বচন ভঙ্গিতে ওরে হাসানোর ক্ষমতা হাড়িয়ে ফেলেছি, চিৎকার মারবে আমার ভাই সুলভ বন্ধুটি। বুক ফাটা এক আর্তনাদ, একটি চিৎকার এর পর আরেকটা চিৎকার দিতে থাকবে কিন্তু আমাকে ফিরানোর জন্য কিছুই করতে পারবে না ও। তার পর আমার পরিবার বর্গকে আমার ইন্তেকালের সংবাদ পৌঁছে দিবে আমার বন্ধুটি। আমার শ্রদ্ধেয় পিতাজান সংবাদটি শুনার পর এক শব্দে চিৎকার মেরে বলবেন আমার বাবা শিব্বির!! কি করবেন কিছুই বুঝতে পারবেন না। কিছুতেই মানতে পারবেন না মৃত্যুর সংবাদটি সত্য। পিতার আগে তো আর পুত্রের মৃত্যু কোন পিতার কাছে গ্রহনীয় না। ততক্ষনেও আমার লাশ দাফনের কোন ব্যবস্থা হবে না। সংবাদটি আমার পিতা আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দৌড়ে যাবেন কিন্তু কিভাবে বলবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না। বয়স তো আর বেশিও হয়নি কোন প্রকার রোগ বালাই এ ও আক্রান্ত হই নি আমি তাহলে আমার আকস্মিক মৃত্যুটা কিভাবে মানতে যাবেন আমার বাপ। তারপরও আমার গর্ভধারনী মায়ের কাছে খবর টা পৌঁছে দিবেন, শুনার পরক্ষণেই আমার মা বুকফাটা একচিৎকার দিয়ে পাগল হয়ে যাবেন আমার কাছে আসার জন্য। কিন্তু আমার যে কষ্টে হচ্ছে এই দুনিয়াতে থাকতে। আমার তো আর জায়গা নাই পৃথিবীর বুকে কেউ তো আর বলবে না তুই আজ আমার সাথে থাকবি কেউ তো আর আমার নাম ধরেও ডাকবে না সবাই আমাকে লাশ বলে সম্বোধন করবে। যেই আমি এক দিন আগে সবার হাসি খুশির প্রাণকেন্দ্র ছিলাম সেই আমি সময়ের পরিবর্তনে লাশ নাম ধারন করবো। এর মধ্যে আমার ছোট ভাই বোন সহ বড় বোন এবং অন্যান্য আত্নীয় স্বজনেরা আমার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে যাবেন। আমার মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র বড় বোনটি পর পর দু’বার জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলবেন। ভাইদের মধ্যে আমি’ই যে ওর খুব আদরের ভাইটি। সবাই আমার বড় বোন টির কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন কিন্তু আমার বোনটি একটি বারের মতোও কান্না থামাতে পারবে না। ছুটে চলে আসতে চাইবে আমার কাছে। আমি যে ওর খুবই আদরের ভাই। আর আমার হবু অর্ধাঙ্গীনির কানে যখন পৌঁছবে আমার মৃত্যুর সংবাদটি তখন ও খুবই হাসি-খুশির আড্ডায় ব্যস্ত। একবার কান পর্যন্ত পৌঁছা মাত্র বুকফাটা কান্না করবে, দাড়ানো অবস্থা থেকে জ্ঞান হাড়িয়ে মাটিতে শুয়ে পড়বে কিছুতেই মানতে পারবে না আমার মরার খবর। পৃথিবীতে মা-বাপ এর পরে তো আমিই ওর সব থেকে শুভাকাঙ্খী, সকল স্বার্থের উর্ধ্বে। পাথর হয়ে যাবে আমার Heaven Queen কারও সাথে কথা বলার ক্ষমতা হাড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু ততক্ষণেও আমার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হবে না। আমার বন্ধুটি আমার লাশ গ্রামে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করবে পৌঁছে নিয়ে যাবে আমার সর্ব শেষ ঠিকানায় যেখানে থাকবে না আমার সাথে আড্ডা দেওয়ার কেউ, থাকবে না আমার ভূল, আমার কষ্ট, অনুভূতি গুলো শুনার মতো বন্ধু, কোন দিন দিতে হবে না কাউকে কোন উপদেশ, করবো না কারও সাথে কোন বেয়াদবি। শুধুই আমার নিথর দেহখানি পড়ে থাকবে সাদা কাপড়ের স্বত্তাধিকারী হয়ে একটি অন্ধকার মাটির ঘরে। খুব ভয় করবে আমার। একা একা থেকেছি অনেক কিন্তু কোন আলো ছাড়া অন্ধকার ঘরে কি করে থাকবো আমি...? কিন্তু কারও তো কিছুই করার থাকবে তখন। লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসার পর আমার ছোট-বড় আতœীয় স্বজনেরা আমাকে একবারের মতো মুখখানি দেখতে আসবে। আমার বাড়ির সামনে ভিড় জমাবে। অবশ্যি তখন তো আমার কোন বাড়ী থাকবে না এই নিষ্ঠুর ধরনীতে। আমার লাশের পাশে আমার ছোট ভাইটা বসে করুন সূরে কান্না করবে আর লোকজনদের আমার মুখখানি দেখাবে। মুখখানি দেখে কেউ আমার প্রশংসা করবে আবার কেউ আমাকে বলবে মরে গিয়ে ভালো হয়েছে হয়তো পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে আরও পাপের অংশীদার হতো। পাশের ঘরটাতে আমার ছোট বোন, বড় বোন আরও আতœীয়-স্বজনেরা কান্নার সুরে কোরআন তেলাওয়াত করবে আমার মাগফিরাত কামনার জন্য। এদিকে আমার ছোট চাচা আমাকে দাফন করার জন্য কবর খনন করা শুরু করবে। কি নিষ্ঠুর লোকটা জীবনে কখনও আদর করেনি আর আজ আমাকে অন্ধকার কবরে একা একা রেখে আসার জন্য পাগল হয়ে গেছে। যেন বিন্দু মাত্র দরদ নিয়ে দুনিয়াতে আসে নি লোকটা। পরক্ষণেই খবর পাবে আমার আরেক শুভাকাঙ্খী আমার ছোট মামী, যিনি আমাকে উনার ছেলে দাবী করতেন। ছোট বেলা থেকেই উনার কাছে বড় হয়েছি তো তাই ছেলের মতো দাবী কাটাতেন। কাঁদবেন কি না জানি না তবে আমাকে দেখার জন্য ছুটে আসবেন আর চিৎকার করে বলবেন শিব্বির তুমি তো আমার বড় ছেলেই ছিলা, কোনও দিন তো আমাকে না বলে কোথাও যাও নি, আজ এত দূরে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছো কিন্তু একটি বারের মতো আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলে না..? কিছু করার থাকবে না আমার এই মায়ের জন্যও। তারপর কেউ আর কান্না থামাতে পারবেন না আমার এই মায়ের। ততক্ষণে আমার শেষ গোসল করানোর জন্য বরই পাতা আর গরম জল প্রস্তুত হয়ে যাবে। পৃথিবীর মানুষ গুলো নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুর রূপ নিবে। আমার উপর থেকে সরিয়ে ফেলবে তাদের দেয়া রঙ্গিন কারু কার্য করা মোলায়েম কাপড়। নিয়ে যাবে গোসল খানায় এই গোসল খানা টা অন্য পাঁচটা হাই ওয়েল্ডিং এর বাথরুমের মতো নয়। একটা পুরনো কাঠ, কাঠের চার পাশে রাখা আগরবাতি আর মশারি দিয়ে ঢাকা। আজ আর গোসলটা আমি করছি না আমাকে গোসলটা করিয়ে দিচ্ছে, ছোট বেলায় যেমন মা খুব আদর করে আমাকে গোসল করিয়ে দিতেন সেই রকম তবে আজ আর মা গোসল করাবেন না, কারণ বিধাতা সর্বশেষ গোসল টা বাপ কে দিয়ে করাতে চাচ্ছেন।
গোসল শেষে পৃথিবীর সব থেকে কাছের মানুষ গুলো আমাকে মোলায়েম কাপড়ের পরিবর্তে একটি সাদা কাপড় পড়িয়ে দিবেন আর সমস্ত শরীরে আতর মাখিয়ে দিবেন। আমার মায়ের কান্না টা আরও বেড়ে গেলো আমার বিদায় ঘন্টা যে খুবই সন্নিকটে। আমার ভাই-বোন, চাচা-চাচী, ফুফা-ফুফি সবাই অবাক নয়নে আমাকে শেষ দেখা দেখতে আসবে আর অঝর নয়নে পানি ঝড়াবে। এর মধ্যে আমার মা কয়েক বার অসুস্থ হয়ে যাবে কান্না করতে করতে। পাগলের মতো আমার চলে যাওয়া কে আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। আজ আর আমার আব্বাকেও কেউ বুঝাতে পারছে না আমার আব্বাও অবুঝ হয়ে গেলো। আমার বিদায় বেলাটা সবার কাছে অলৌকিক মনে হবে। কেনো পরিবার সমাজ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি আমার উপর থেকে মায়া ওঠিয়ে নিলো..?
আমার অর্ধাঙ্গীনি আমাকে শেষ দেখার জন্য আসবে। দেখবে, দেখার পর ভাষা হাড়িয়ে ফেলবে ওর সাথে সব সময় যেমন হাসি-খুশি কথা বলতাম ঠিক সেই রকম হাস্যময় ভঙ্গিতে আছি, কিন্তু চাহনি টা নেই। ওর চোখে চোখ রেখে সর্বশেষ কথা বলা আর বুঝি হলো না।
অত:পর মাইকের শব্দ, সবাই কে অবগত করা হচ্ছে আমার যানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য সবাই যানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য অযু করে প্রস্তুতি নিবে। আর ঘর থেকে আমার লাশ বের করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। সকল নিকট আতœীয়দের কান্নার আওয়াজ বেড়ে যাবে। কালেমা শাহাদাৎ পড়তে পড়তে আমার বড় ভাই, ছোট ভাই আমার লাশটাকে কাঁধে তুলে নিবে। পরপর কয়েক বার কাঁধ পরিবত্র্ন করবে। আমার বড় ভাইটা আমাকে খুব’ই আদর করতো আমার মৃত্যুটা একটু অস্বাভাবিকই মনে হবে আমার ভাই টার কাছে। তারপর আমার লাশটাকে সামনে রেখে আমার আব্বা অথবা আমার ভাই সকল মুরব্বিদের কাছে আমার জন্য মাফ চেয়ে নিবেন আর আমার আমার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে নিবেন। কিন্তু দোয়া চাওয়ার মুহুর্তেও আমার ভাই অথবা আমার আব্বা কান্নার জন্য ঠিক মতো কথা বলতে পারবেন না। ততক্ষণে আমার লাশের অবস্থাটা খুবই অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যাবে। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় দাফন কার্য সম্পন্ন করাটাই উত্তম হবে। পরক্ষণেই হুজুর এসে যানাজা পড়ার নিয়ম সবাইকে জানিয়ে দিবেন। আর যানাজার ডাক দিয়ে দিবেন। আর আমার রুহু সবার সাথে কথা বলতে চাইবে, বারবার আমার মায়ের কাছে যাবে, আমার বোনের কাছে, আমার ভাই গুলোর কাছে আমার বন্ধুদের কাছে যাবে আর আমার Heaven Queen’ টার কাছে যাবে। কেউ শুনবে না আমার কথা সবাই কান্নায় ব্যস্ত। যানাজা শেষে আমার আমার নিথর দেহখানি কাধে তুলে নিবে। নিয়ে যাবে আমার সর্বশেষ ঠিকানায় অন্ধকার কবরের কাছে। আমার লাশ টি খুবই যতনে মাটির এই ছ্্োট্ট পিঞ্জিরাতে রেখে দিবে আর চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিবে পিঞ্জিরাটার দরজা।
আমি মরে গেলাম সবাই যে যার মতো আমাকে একা রেখে চলে আসলো, কারও একটু মায়া হলো আমার সাথে থাকার জন্য আমার ঘুম ভাঙ্গার পর আমার সাথে একটু খানি কথা বলবে, একটু খানি আড্ডা দিবে। সবাই খুব নিষ্ঠুর, খুব খারাপ। আমি এই পৃথিবীতে কি কারও জন্য কিছু করিনি? তাহলে একটু কৃজ্ঞতাও কি কেউ আমার জন্য করবে না?
দাফন শেষে আমার সবাই বাড়িতে আসবে, আসার পর দেখবে জনম দুঃখিনী আমার আমার মা জননী এখনো কান্না করছে, ততক্ষণে সবারই প্রায় কান্না শেষের দিকে আমার বড় বোনটা কান্না বন্ধ করে কোরআন তেলাওয়াত এর জন্য প্রস্তুতি নিবে আর ছোট বোনটিকে আমার চাচি অথবা আমার ছোট ফুফু বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিবে পাক-পবিত্র হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করার জন্য ভাইয়ের রুহের মাগফেরাত কামনা করার জন্য। আমার ছোট ভাই গুলো তখনো নাক টেনে টেনে কান্না করছে। ছোট ভাই টাকে শহরে নিয়ে এসে উচ্চশিক্ষিত কর আর হলো না শিব্বিরের।
তিন দিন পর আমার মাকে বুঝিয়ে অল্প কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছে সবাই। সবাই আবার আগের মতো হয়ে গেলো। প্রথম দুই দিন মাগফেরাত কামনার জন্য সবাই নামাজ কালাম পড়েছিলো এখন সবাই আবার নামাজ ছেড়ে দিয়েছে। সবাই আবার পৃথিবীর মায়ায় ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমার মা’কে কেউ বুঝাতে পারছে না যে শিব্বির আর দুনিয়াতে নাই আর কখনো আসবেও না।
তিন মাস পর সবাই আমাকে ভূলে গেলো। আমার Heaven Queen এর জন্য কোন এক সমভ্রান্ত পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসলো , কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো আমার Heaven Queen কিন্তু কান্না করে তো আর লাভ হবে না, কারণ আমিও তো আর পৃথিবীতে নাই। তার পর ওর বিয়ে হয়ে যাবে, যখন আমার করা কোন ব্যবহার এর সাথে মিলে যাবে কারও ব্যবহার, তখন আমার কথা মনে পড়বে ওর আমাকে ভেবে নিরবে কান্না করবে। আর এই তিন মাসের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত লোক জন আমার কথা ভূলে যাবে। শুধু আমার মা আমাকে ভেবে ভেবে কান্না করবে আর রাস্তা ঘাটে কোন ছেলে কে দেখে বলবে এই ছেলেটা আমার শিব্বিরের মতো।
আর আমি মরে যাবো, রেখে যাবো সবি...! কেউ আমার সঙ্গের সাথী হবে না, হবে না আমার Heaven Queen ও। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবাই ভূলে যাবে আমাকে। ছিলাম তো সব সময় তোমাদের কাছাকাছি, তোমরা কেউ আমায় চিনতে পারনি, জানতে দেইনি, তবু দিয়ে গেছি অগচরে কিছু আনন্দ, বেদনা, হাসি গান। তোমাদের তো আমি একদিনও ভুলে থাকিনি। আমার ইচ্ছে হয়নি তোমাদের ছেড়ে যেতে, তবু যেতে হচ্ছে, হয়তো অনেক না ঘুমানো সে ঘুমেরা আমায় ডাকছে।
----শিব্বির।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১৯