somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা তীব্রতর হচ্ছে

১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পহেলা বৈশাখ এগিয়ে আসছে আর আমার মাঝে অপেক্ষা তীব্রতর হচ্ছে, কখন পার্লিয়াকে নিয়ে রমনার ভোরে গাইবো, কখন মঙ্গলশোভাযাত্রায় হাত ধরে হাঁটবো। দু’বার রমনার অশ্বথমূলে থাকলেও, এখনও পর্যন্ত মঙ্গলশোভাযাত্রায় আমরা একসঙ্গে হাঁটিনি। তবে, আমার মনে হয়, আজ হতে বহু বছর আগে, এই শোভাযাত্রাতেই তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। কিন্তু অনেক বছর পর সেই স্মৃতি থেকে পরষ্পরকে চেনা ছিল আমাদের জন্যে প্রায় অসম্ভব।
কারণ, প্রথমত অত্যন্ত স্বল্পসময়ের জন্যে হয়তো আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম।
দ্বিতীয়ত আমি তখন চশমা পরতাম না, গোঁফও ছিল না, আর পার্লিয়া ছিল হালকা পাতলা গড়নের ছিপছিপে এক মেয়ে।

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কী দ্বিতীয় বর্ষে মনে নেই; গিয়েছিলাম মঙ্গলশোভাযাত্রায়, একাকী। ছিলাম ফুটপাথের দিকে, মধ্যরাস্তায় পা রাখার মতো জায়গা ছিল না, এতোটাই ভিড়। সেইসঙ্গে মানুষের উত্তেজিত স্বর, সপ্তমে চড়ে থাকা বাঁশি, ঘামের ভরযুক্ত বাতাস আর ক্রমশ চড়তে থাকা রোদ- সব মিলিয়ে উল্লসিত হলেও কিছুটা বিপর্যস্ত।
মূলযাত্রা একমুখী হলেও ভেতরে ভেতরে জনতার চোরাস্রোত বিভিন্ন দিকে ছুটে যাচ্ছিল। এর গতিপথ ব্যাখ্যা করার মতো নয়। হঠাৎ এমনই এক স্রোতজাত ঢেউ আমাকে ফুটপাথলগ্ন রাস্তা থেকে, ঠেলে ফুটপাথের ওপর তুলে দিলো। পরবর্তী ঢেউ এসে পুরোপুরি ঠেসে ধরলো দেয়ালের সঙ্গে।
পেছন থেকে এক নারী আমার পাশে চলে এসেছিল প্রথম ঢেউয়ের পর। দ্বিতীয়বারে সে কোনক্রমে তাল রেখে আমার ছোঁয়াচ বাঁচালো ঠিকই, কিন্তু তার স্যান্ডেলের হিল আমার প্রায় নগ্ন পায়ের পাতায় একরকম বসে গেল। এমন ঘটনা আমি প্রেমের উপন্যাসে পেয়েছি।
আমি কোন যন্ত্রণার শব্দ করলাম না, পুরো ব্যথাটাই গিলে ফেললাম। সে নারী হস্তিনী ছিল না, বরং ছিল যথার্থ পদ্মিনী। অনুভূতিহীনভাবে ভিড়ে মিশে না গিয়ে, ফিরে আমাকে ছোট্ট করে বললো, স্যরি।
দেখলাম, খুব ফর্সা, কিন্তু রোদের কারণে কিছুটা রক্তবর্ণ হয়ে থাকা এক মেয়ে। ছিপছিপে, চোখে চশমা। আরও দেখলাম, আমার দিকে ফেরানো তার ডান চিবুকে স্পষ্ট কালো তিল।
কোনরকম পূর্বসংকেত ছাড়াই তার পাশের ভিড় হঠাৎ হালকা হয়ে গেল, আরও একটি মুখ হঠাৎ কোথা থেকে এসে তার হাত ধরে ভিড়ের ভেতর টেনে নিয়ে গেল।
অনেক রঙের মাঝে তারা মিশে গেলো । রোদ পড়ে চুল লাল হয়ে থাকা মাথাটাকে কিছুক্ষণ চোখে চোখে রেখেছিলাম। হঠাৎ হারিয়ে ফেললাম। টিএসসির দিকে যেতে যেতে ভাবলাম, পেয়ে যাবো। কিন্তু আর পেলাম না।

সে ঘটনার পর প্রায় চার বছর গড়ালো। আমার পরিচয় হলো পার্লিয়ার সঙ্গে। গত পরশুদিন, তার সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রা একবারও যাওয়া হয়নি- এমনটা ভাবতেই হঠাৎ সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। ততদিনে আমাদের ভালোবাসার না ভোলা দিনগুলোর লৌকিক হিসেব পৌনে তিন বছর পেরিয়ে গেছে; আমরা শুভ পরিণয়ের খুব কাছে চলে এসেছি।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি কখনও মঙ্গলশোভাযাত্রায় ছিলে?
সে বললো, ছিলাম তো।
আমি বললাম, কবেকার কথা হতে পারে সেটা?
দুহাজার সাতের দিকে হবে হয়তো।
সঙ্গে কে ছিল, মনে আছে?
হুম, নাহার ছিল সঙ্গে।
আচ্ছা, ভিড়ের চাপে রাস্তা থেকে ফুটপাথে উঠে গেছো, এমন কিছু মনে আছে?
ফুটপাথেই ছিলাম, তারপর ভিড় সইতে না পেরে চারুকলায় ঢুকে গেছি।
কোন ছেলের পা কি মাড়িয়ে দিয়েছিলে?
পার্লিয়া চুপ করে রইলো। মনে করার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ উৎফুল্ল কণ্ঠে কলকল করে উঠলো। ওর কণ্ঠই বলে দিলো, মনে পড়েনি, বরং ভেবেছে আমি বরাবরের মত সেই খেলাটা খেলছি : যেন দূর শৈশব থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়, বহু বহুবার আমাদের দেখা হয়েছিল। বললো, আরে হ্যাঁ! তুমিই তো!
পার্লিয়া আমার কথাকে ‘খেলা’ ভাবলেও, এ রাত গভীরে আমার ভাবতে ভালো লাগছে : সেদিনের ঐ মেয়েটা পার্লিয়াই ছিল।

পহেলা বৈশাখের অপেক্ষায়-
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজায় গণহত্যা : মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকার নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


গাজার প্রতিটি বিস্ফোরণে কেবল ধ্বংস হয় না —প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রশ্ন: মুসলিম বিশ্ব কোথায় ? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির আয়নায় এই প্রশ্নটি এক খণ্ড অন্ধকার, যা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যর্থতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লেখকের প্রাপ্তি ও সন্তুষ্টি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০০

একজন লেখক যখন কোন কিছু লিখেন, তিনি কিছু বলতে চান বলেই লিখেন। বলাটা সব সময় সহজ হয় না, আবার একই কথা জনে জনে বলাও যায় না। তাই লেখক কাগজ কলমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওয়াকফ: আল্লাহর আমানত নাকি রাজনীতির হাতিয়ার?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯


"একদিকে আমানতের আলো, অন্যদিকে লোভের অন্ধকার—ওয়াকফ কি এখনও পবিত্র আছে?"

আমি ইকবাল হোসেন। ভোপালে বাস করি। আমার বয়স প্রায় পঁইত্রিশ। জন্ম থেকে এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই আমাদের চার পুরুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×