দবিরউদ্দিন আজ খুব খুশী, তার ছেলে আজ
ইন্টার্ভিউ দিতে গেছে! অবশ্যই
সুসংবাদ পাবে এই আশায় বারান্দায়য় বসে আছেন
তিনি ! যাক এইবার
অন্তত অভাবের সংসারে কিছুটা সুখ
আসবে! পত্রিকাওয়ালা প্রতিদিনকার
মতো আজো পত্রিকা দিয়ে
গেছে,পড়তেই মন চায় না এখন খবরগুলো
;চারদিকে শুধুই দুরনিতি, খুন আরোও কত
কি! গত দুই বছর ধরে নিয়ম মেনেই
পত্রিকা পড়েন তিনি, কারন পঁচিশ
বছরের চাকুরী জীবনতো আর কম না! এক
পৌরসভার আদায়কারী ছিলেন তিনি,
ঘুষতো দুরের কথা তেমন কোন কাজ
করেননি যাতে মানুস তাকে নিয়ে
কানাঘুষো করবে!
দবিরউদ্দিনের একছেলে, নাম দিপু! সে
এম.এ করেছে সমাজকর্মে! আর মেয়েটা
ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে
পড়ছে! সহধর্মিণী আয়েশা আক্তার খুবই
আদর্শ নারী সারাক্ষণ পরিবারবর্গ
নিয়েই চিন্তিত থাকেন! দবিরউদ্দিন
দেখলেন দিপু আসছে, কিরে দিপু কি
হলো ইন্টার্ভিউতে?
দিপু : হয়নি বাবা!
কি হয়নি?
দিপু: কি আর চাকুরী হয়নি!
কেন?
একশজনের মদ্ধে প্রথম তিনজনের মাঝে
টিকেছি,তারপরেও হলো না!
কেন হলো না?
দিপু : আব্বা ওরা টাকা চায়!
কেন তুইনা টিকেছিস?
দিপু: তাতে কিছুই যায় আসেননা
আব্বা!
তুই বলিসনি যে তুই মুক্তিযোদ্ধার
সন্তান?
দিপু: বলেছিলাম উনারা
সার্টিফিকেট চায় আব্বা!
এতো কিছু করলে তোমরা কি পেলে
আব্বা?
কিছু পাওয়ার জন্যতো দেশ স্বাধিন
করিনাইরে!
দিপু: তাইলে এই যে টাকা চায়
পরিক্ষায় টিকার পরেও টাকা চায়
কিছুই বলোনা কেন?সাহস নেই
তোমার? বলতে পারোনা অনেক
হয়েছে, এইবার এইসব ছাড়েন?
আব্বা এ কেমন মুক্তিযোদ্ধা তুমি?
এলাকায় কেউ তোমারে আচার
অনুসঠানে ডাকেনা! কোন প্রভাব নেই,
কেন?
দবিরউদ্দিন বেশ মন খারাপ করে মাথা
নিচু কিরে উত্তর দিলেন,
বাবারে,দেশের প্রয়োজনে গিয়েছি!
সার্টিফিকেট এর জন্যতো যুদ্ধে
যাইনি! চিন্তাও করিনি যে লাগবে,
তাছাড়া মনেও নেই কোন বয়স
হয়েছেতো! নিজের অধিকার
ছিনিয়ে আনতে গিয়েছি, মুখের
ভাষার জন্য গিয়েছি শুধুমাত্র আমি
এতোটুকুই জানি! আমি তোদের মতো এত
কিছুই বুঝিনা, শুধু বুঝি সময় হলে দেশের
জন্য প্রান দিমু! এটাই আমার চেতনারে
বাপ! হাতের মুঠোয় ছিলো মৃত্যু, চোখে
স্বপ্ন নিয়ে মধ্যবিত আমি গিয়েছিলাম
ছিলো দল বেধে
নিম্ন মধ্যবিত্ত, নারী,
বৃদ্ধ আরোও অনেকেই এমন কি অনেক
শিশুও !
না ডাকুক কেউ আমারে আচার
অনুসঠানে,আমিতো প্রভাবশালী না
যে আমারে তোয়াজ করবে ওরা! হ্যা
তুই ঠিক বলেছিস, আমিও বলতে
চাই,আমাদের বাঁচতে দিন!
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দৌড়ে
গিয়েছিলাম জানতাম একজন মহান
নেতা আছেন,আমি মারা গেলে
যিনি পাশে দাঁড়াবেন! তিনি এখন
নেই তাই আর বলতেও সাহস পাইনা!
তোদের কে দেখবে বল? তোদের জন্য খুব
চিন্তা হয়! থাক বাবা চিন্তা করিস
না,আমাদের যে জমিটা আছে যেটা
বিক্রি করে কিছু টাকা আসবে তা
দিয়ে তোর বোনের বিয়ে হয়েও
তোকে বিদেশে পাঠাতে খুব একটা
সমস্যা হবেনা! কস্ট কেবল একটাই, দেশ
স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু দেশ প্রেম এখন
কোথাও নেই,দুর্নিবার সাহসও নেই কথা
বলার! দুরনিতি সেটাও কমবে না আর
স্বপ্ন, সেটাও দেখতে ভুলে গেছে
মানুষ! স্বার্থ সংক্রমিত হয়ে গেছে সবাই!
দেশ কে ভালোবাসতে হবে স্বার্থহীন হয়ে!
অর্থ পুজায় বিশ্বাসীদের নিয়ে ভেবে লাভ নেই!
অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন, তুই চিন্তা
করিস না বাবা, আমি আছিনা.....
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:১৪