গতকালের একটি লেখার সূত্রে এই পোস্টটি দেয়া। গতকাল রাতে একজন ব্লগার মেয়েদের রূপচর্চার বিলাসীতা প্রসঙ্গে একটি লেখা পোস্ট করেন। তিনি মোটামুটি অংক কষে দেখিয়েছেন মেয়েদের রূপচর্চার পেছনে বছরে কি পরিমান অর্থ ব্যয় হচ্ছে এবং অনেকটা ইউনুসীয় কায়দায় ক্ষুধার্থ শিশু, দারিদ্র বিমোচন এসব বিষয় টেনে এনে মেয়েদেরকে চরম বিলাসী, অপব্যয়ী, দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে উপস্থান করার একটা চেস্টা চালিয়েছেন।
আমিও কমেন্টে একটি হিসাব দেখিয়েছিলাম, আমার পরিচিত অনেক ছেলেই দৈনিক ১০০ টাকার উপর সিগারেট খায়। মাসিক হিশেবে ৩০০০ টাকা। এবং বাৎসরিক হিশাব টানলে মেয়েদের রূপচর্চার খরচের বহুগুন উপরে। লেখকের জবাবটা দেখার আগ্রহ ছিল। কারেন্ট চলে যাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। ১ ঘন্টা পরে লগ ইন করে দেখি তিনি ইতোমধ্যেই লেখা সরিয়ে ফেলেছেন।
সবকিছুতেই নারীকে দোষারোপ করা আমদের একটা অতি সাধারণ প্রবনতা। একই কাজ পুরষের জন্য কৃত্বিতের নারীর জন্য অপরাধ। ইংরেজদের কাছ থেকে শার্ট-প্যান্ট পরা শিখলাম, খুবই চমত্কার। কিন্তু মেয়েরা ইংলিশ মেমদের পোষাক পরলেই সমাজ, সংস্কৃতি, মুল্যবোধ হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে... গেল গেল সব গেল।
বেশ কিছুদিন আগে পত্রিকায় একটা চিঠি পড়েছিলাম। এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক মেয়ে তার ছেলেবন্ধুর বাসায় যাবার কারণে মার কাছে বকুনী খায়। মার কথা – ছেলেদের বাসায় যায় বাজে মেয়েরা। কিন্তু মজার ব্যাপার দু’দিন পর ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, বাসায় মেয়ে-বন্ধুরা আসে নিয়ম করে। মা এখন খুশি মনে চা পরিবেশন করেন তার ভাষায় ঐ বাজে মেয়েদেরকে (!!)।
যাই হোক, ঐ লেখা প্রসংগে আসি, মেয়েদের মুখে এক খন্ড শশা কিম্বা ডাবের পানি বনাম ক্ষুধার্থ শীশুর মুখ... এধরনের কথায় চোখের কোনায় একটু আধটু হয়ত পানি আসবে, কিন্তু আমি নিশ্চত বলতে পারি মেয়েদের কাছ থেকে শশা কিম্বা ডাবের পানি কেড়ে নিলেও ক্ষুধার্থ শীশুর মুখে অতিরিক্ত এক টুকরো রুটি জুটবে না। চাপাচাপি করে দু পয়সা বাচালেও, মাল্টিন্যাশ্নাল কোম্পানীর একাউন্টই সেই পয়সার শেষ গন্তব্য।
মেয়েদের রূপচর্চার কারনে ধনী গরীব সৃষ্টি হয় নি। শ্রেণী সমস্যাগুলো নারীর ঘাড়ে চাপানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। ব্যক্তিগত ভাবে আমি এসব বিলাসীতার পক্ষে নই। কিন্তু যা কিছু হারায় গিন্নী বলে কেষ্ট বেটাই চোর—এরকম একজনের ঘাড়ে দোষ চাপানো পক্ষেও আমি নই। বিলাসীতা বর্জন করা উচিত। মেয়েদের মুখ থেকে শশা কিম্বা ডাবের পানি কেড়ে নেবার থেকে বছরে দু’বার করে মোবাইল সেট পরিবর্তন, মাসে হাজার খানেক টাকার সিগারেট, কিম্বা বারে গিয়ে একটু- আধটু গলা ভেজানো অভ্যাসটা বর্জন করা মনে হয় আরো যুক্তিসংগত হবে।