সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছে, আপাত ঘুর্নায়মান সূর্যদেব পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে ডুব দিয়েছেন পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে আলোর মিছিল নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য। আকাশের তারাগুলি আলো ছড়াতে শুরু করেছে। একফালি রুপোলি চাঁদ পশ্চিম আকাশে উঁকি দিচ্ছে। ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে দখিনা বাতাস। ছাদে থাকা টবের গাছগুলোর সাথে এক অলিখিত মিতালি গড়ে উঠেছে। গোলাপ তার সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে হাজির হয়েছে। সদ্য ফোটা বেলি ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মনটা এক অজানা আনন্দে দোল খাচ্ছে। কামিনি ফুল তখন ডেকে বলছে শুধু বেলি ফুলের গন্ধ সুধা উপভোগ করলে চলবে? আমিও এসে গেছি আমার দিকে একটু ফিরে তাকাও। অভিমানী কামিনির দিকে এগিয়ে যেতেই টগর বলছে, এই আলো আঁধারিতে আমি কতটা শ্বেতশুভ্র ভাবে নিজেকে মেলে ধরেছি সেটি দেখবে না! টগরের দিকে ফিরতে না ফিরতেই ক্যাকটাস বলে উঠল, ‘আমার গায়ে কাটা আছে বলে কি তুমি আমাকে অবহেলা করে চলে যাবে?’ এগিয়ে যেতে থাকলাম ক্যাকটাসের কন্টকময় সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য। ক্যাকটাসের পাশেই দেখি চুপটি করে বসে গন্ধরাজ আমাকে দেখে মুচকি হেসে বলছে, ‘তুমি এই রাজার সান্নিধ্যে থেকে তার গন্ধ সুধা উপভোগ না করে কাদের কাছে ঘুরে ফিরছ?’ কি উত্তর দেব ভাবতে না ভাবতেই জবা বলছে, আমি কেবল কড়ি হয়ে আছি, এখনো প্রস্ফুটিত হইনি বলে তুমি আমাকে এতটা অবজ্ঞা করলে? কি যে বলি। ওদিক থেকে ছোট বটগাছটা বলছে, আমি কি দোষ করলাম বাপু, আমার না হয় ফুল ফোটানোর সামর্থ নেই, তাই বলে কি আমার পাতার অনাবিল সৌন্দর্য তুমি উপভোগ করবে না? কি যন্ত্রনা! গেলাম বুড়ো বটগাছটার কাছে। ওর সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে না কাটাতেই ঘাসফুল অনুযোগের সুরে বলে উঠল, আমি ঘাসফুল, যেখানে সেখানে ফুটে থাকি বলে কি আমি একেবারে অচ্ছ্যুৎ হয়ে পড়লাম, আমার সৌন্দর্যের কি কোনো মূল্য নেই! আমি বলি তুমিই তো সবচেয়ে বেশি মূল্যবান, কারণ চলতে ফিরতে তোমার দেখা মেলে আমাদের। আমার কথা শুনে ঘাসফুল মহাখুশি। শেষে বাদ থেকে গেল চাইনিজ টগর। সে বলে উঠল তুমি সবার কাছে গেলে, আমি চাইনিজ, আমি বিদেশি বলে আমাকে এতটা অবহেলা! চাইনিজ টগরের রাগ ভাঙাতে আশ্রয় নিলাম রবি ঠাকুরের কাছে। হেড়ে গলায় গেয়ে উঠলাম,
আমি চিনি গো চিনি তোমায় ওগো বিদেশিনী
তুমি থাকো সিন্ধু পারে ওগো বিদেশিনী।
হাসি ফুটে উঠল চাইনিজ টগরের মুখে। আমি প্রশান্তি নিয়ে ছাদ থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি এসময় বেজে উঠল মোবাইলের রিংটোন। মোবাইল ফোন রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভেসে এল একটা সুমিষ্ট কন্ঠস্বর। দুষ্টুমি হাসি হেসে বলে, তুমি এখন কি করছ? আমিও দুষ্টুমি করে বলে ফেলি, ‘আমি এখন হাওয়ায় উড়ছি!’