somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোলাগা-ভালোবাসা-ছেড়ে যাওয়া-…

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দিনের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শেষে করিডোর দিয়ে হাঁটার সময় সদা হাস্যোজ্জ্বল একটা মেয়েকে দেখে থমকে যায় ছেলেটি। ওর হার্টবিট বাড়তে থাকে। ওরিয়েন্টেশনের সময় পাওয়া রজনীগন্ধার স্টিকটি হাতে নিয়ে আরেকটি মেয়ের সাথে গল্প করতে করতে চলে যায় মেয়েটি। ছেলেটি অবাক হয়ে অবলোকন করতে থাকে মেয়েটির পথচলা। পরের দিন ক্লাস শুরু। মেয়েটি এসে বসে ছেলেটির ঠিক পাশের চেয়ারে। কিভাবে কথা শুরু করবে ভেবে পায় না ছেলেটি। একমসয় ভাবতে ভাবতে হুট করে মেয়েটির কাছে নাম জানতে চায়।এভাবে শুরু পরিচয় পর্ব।ধীরে ধীরে ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব জমে ওঠে। বন্ধুত্ব থেকে একসময় সেটি প্রেমে রুপ নেয়। ওরা দু’জন হয়ে ওঠে ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জুটি। সারাটি দিন ধরে চলে দুজনের অবাধ মিতালি। ক্লাসরুম থেকে ক্যাফেটেরিয়া, ছোট চায়ের দোকান থেকে বড় মার্কেট সময় পেলেই দুজনে বেরিয়ে পড়ে। এর সাথে ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম থাকলেই দুজন হাজির। সন্ধ্যার আগে মেয়েটিকে হলে পৌঁছে দিয়ে ছেলেটি ছোটে টিউশনিতে। টিউশনি শেষে রাত দশটায় হলে ফেরে। হলে তখন খাবার থাকে না। তাই বাইরে থেকে খেয়ে আসে। হলে ফিরে দেখে মোবাইলে অনেকগুলো মিসড কল। ফ্রেশ হওয়ার পর ছেলেটি মোবাইল নিয়ে কথা বলতে বসে। অনেকক্ষণ কথা বলার পর ওর ঘুম জড়িয়ে আসতে থাকে। ঘুম থেকে উঠেই সকালে আবার ক্লাসে দৌড়। ক্লাসে যাওয়ার আগে দুজনে একসাথে নাস্তাটা সেরে নেয়। এভাবে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে ওদের একেকটা দিন। এত মধুর সময়ের মাঝ থেকে ছেলেটি একাডেমিক পড়ার বাইরে খুব একটা চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার সময় পায় না। ফাইনাল ইয়ার এগিয়ে আসতে থাকে। হাতে আর বেশি সময় নেই। তখন ছেলেটির মাঝে একটু একটু করে ক্যারিয়ার নিয়ে টেনশন বাড়তে থাকে। ইতমধ্যে মেয়েটির বাড়ি থেকে পাত্র দেখা শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটি তার বাবা-মায়ের অত্যন্ত আদরের। বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সে তার এতদিনের প্রেমকে বিদায় জানাতে বাধ্য হয়। হঠাৎ রাত ১০ টায় ছেলেটির মোবাইলে এসএমএস আসে। আমার কিছু করার ছিল না, বাবা-মা পাত্র পছন্দ করেছে, ওরা আমাকে দেখে গেছে আগামি অমুক তারিখে আমার বিয়ে। তুমি ভালো থেকো তোমার নিজের প্রতি যত্ন নিও। ছেলেটির চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। সে কিছু ভেবে পায় না। এক অদ্ভূত শুন্যতা ছেলেটিকে এসে গ্রাস করে। ছেলেটি মেয়েটির সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু মেয়েটি আর ফোন রিসিভ করে না। ছেলেটি উদভ্রান্তের মতো হয়ে যায়। প্রতিদিনের অভ্যেস ছেলেটিকে যন্ত্রনা দিতে থাকে। মাঝে মাঝে ছেলেটি মোবাইল চেক করে ওর ফোন এসেছে কিনা। ছেলেটি ধীরে ধীরে কেমন যেন অন্য মানুষ হয়ে যায়। ওর শরীর খারাপ হতে থাকে, মন মেজাজ খিটখিটে হতে থাকে। এভাবে ওর চেনা সময়গুলো বদলে যেতে থাকে। ছেলেটি যখন নিঃসঙ্গতার ঘোরটোপে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে তখন অন্য বন্ধুরা জব প্রিপারেশন নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেটির এসব বই দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ও ভাবে চাকরি করবে না, অন্য কিছু করবে। আসলে ওর আর কিছুই ভালো লাগে না। অন্য বন্ধুরা একে একে চাকরি পেতে থাকে, আর ছেলেটি আরো নিঃসঙ্গ হতে থাকে। শেষে ও নতুন উদ্যমে চাকরির পড়া শুরু করে। কিন্তু সেই দম আর পায় না। শেষমেষ ছোটখাট একটা চাকরি নিয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। ও আর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখে না।নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হয়। ক্লাসে ও যাদেরকে পাত্তা দিত না তারা আজ বড় বড় পোস্টে চাকরি করে আর ও কিনা বসে আছে...

এটা একটা গল্প। এরকম সমস্যায় জর্জরিত হাজারো তরুণ। কিন্তু এর বাইরেও গল্প আছে। আরেকটি ছেলে ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে। কিন্তু ও প্রেমিকা হারানোর শোক ভুলতে মাত্র এক সপ্তাহ সময় নেয়। দ্বিতীয় সপ্তাহে বই মার্কেট থেকে চাকরির সব বই একবারে কিনে আনে। ও বুঝে গেছে জীবন মানে কি। একটা প্রেমের ব্যর্থতা ওকে জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়। ও বুঝে যায় জীবন হলো বহতা নদীর মতো। ওর তখন একটায় ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার।দিনরাত বইয়ে মুখ গুঁজে থাকে, প্রাকটিস করতে করতে নিজেকে পারফেকশানের কাছাকাছি নিয়ে যেতে থাকে। ঐ সময় ওর বাবা-মায়ের মুখ খুব মনে পড়ে। দুটো মানুষ ওর দিকে চেয়ে আছে। কারণ তাদের সকল স্বপ্ন জড়িয়ে আছে ওকে ঘিরে। ঐ দুটি মানুষ তাদের রক্ত পানি করে ওকে মানুষ করছে।ও ভাবতে থাকে কিভাবে বাড়িতে থাকা বাবা-মায়ের ক্লান্ত মুখে হাসির আভা এনে দেয়া যায় সেটি নিয়ে। বাবা-মায়ের হাসিমাখা ছবিটা ওকে লড়াইয়ের নতুন প্রেরণা এনে দেয়। ওর চেষ্টা বৃথা যায় না। ও শোককে শক্তিতে পরিণত করে আজ ঠিকই পৌঁছে গেছে ওর কাঙ্খিত জায়গায়। অফিসে বৃষ্টিমাখা এক উদাস দুপুরে ওর হঠাৎ করে সেই বিষন্ন দিনটির কথা মনে পড়ে যায়। প্রথমে স্মৃতিগুলো ওকে কেমন যেন এলোমেলো করে দিতে চায় কিন্তু পরক্ষণেই ওর ভেতর থেকে কে যেন ঐ পরিস্থিতিকে ধন্যবাদ দিতে চায়। কারন ঐ পরিস্থিতি ওকে নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছিল বলেই ও আজ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৪১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×