আশির্বাদে সবাই বলে, ভালো থাকো
কোথায় গেলে পাবো তারে, ছোট্ট মাথায় কিছু ধরে নাকো।
ভেবে-চিন্তে গেলাম তখন কুন্দু মশাইয়ের কাছে,
ভাঙাচুরা দোকানখানি, কিন্তু হাজারো জিনিস আছে।
সব বয়ামে লেবেল করা, করলাম পড়তে শুরু
ভালো, সুখ, দুঃখ পড়তে পড়তে কুঁচকে গেল ভুরু।
কুন্দু মশাই জিজ্ঞেস করে, কেমন আছিস? কি চাই?
এক পুরিয়া 'ভালো' দেও দেখিনি, বাড়ি নিয়ে যাই।
মশাই হেসে বলে, তুই তো এখনো অনেক ছোট,
এত জটিল ভাবিস কেন?
বড়রা এ নিয়ে মাথা ঘামায়,
জীবনটা আরো কঠিন হয় যেন।
এই নে কয়েক পুরিয়া 'ভালো', বাড়ি ফিরে যা,
হেসে-খেলে হৈ-হুল্লোড়ে দিনগুলো তোর কাটা।
বেশ ক'বছর কেটেছে এভাবে হাসি-খুশির রঙে,
হঠাৎ একদিন মাথার পোকার ঘুমটি গেল ভেঙে।
সুখ চাই, সুখ চাই করে চিৎকার দিলো জুড়ে,
আমি বললাম, চল তাহলে কুন্দুর দোকান আসি ঘুরে।
"ভালো ও সুখের কারখানায় ধর্মঘট, আউট অফ স্টক তাই,
দুঃখের বিরাট মুল্যহ্রাস চলছে, নিয়ে যান ভাই।"
এলাম সুখ কিনতে, এখন দুঃখ কিনতে হবে!
ঠিক আছে, কুন্দু মশাইকে জিজ্ঞেস করি তবে।
ব্যবসা মন্দা, মশাইয়ের প্রেসার হয়েছে হাই,
ভয় হলো কাছে যেতে যদি বড় ধোলাই খাই!
অবশেষে বয়ামশুদ্ধ দুঃখ কিনে এলাম ফিরে বাড়ি,
আজ মনে খুব ফুরফুরে ভাব, প্রজাপতির মত উড়ি।
এক পুরিয়া করে প্রতি প্রত্যুষে সপ্তাহ মাস খেলাম,
পরিবর্তন কিছু বুঝছি না ভাই, হতাশ বনে গেলাম।
কিন্তু হাল ছাড়তে চাই না আমি, কোর্সটা করলাম পুরো,
বছর কয়েক যেতে না যেতেই, হাত-পা শরীর করলো ফোলা শুরু।
ভাবি তখন, সুখের বদলে দুঃখ কিনে ভুল আমি করিনি,
জগতের সব সুখেরই পা পড়বে, আমার ঘরে আপনা-আপনি।
কিন্তু হঠাৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা, দেখা দিলো গন্ডগোল,
হাসপাতালের ডাক্তার বলে, পুরিয়া খেয়েছো ভুল।
আমি বলি, এখন উপায়? প্রতিকার আছে কি তার?
ডাক্তার বলে, ওরে বোকা তোর হয়েছে মগজ ক্যান্সার।
নিরাশ মনে বেঞ্চে বসে ভাবছি অতীত নিয়ে,
মিলতো যদি একটা সুযোগ, শুধরে নিতাম গিয়ে।
সেদিন সস্তায় পেয়ে দুঃখ কিনে, করেছি অনেক বড় ভুল,
দিনরাত আমি হাসপাতালে দিচ্ছি সেই ভুলেরই মাশুল।
© Copyright Stella Shima Gomes
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৩৬