somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবনার বাড়াবাড়ি

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় আমার পুকুঘাটে যাওয়ার উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা ছিল। সাঁতার জানতাম না একটা কারণ, অন্য কারণ ছিল কিছু গ্রাম্য কু-সংস্কার। মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান হলে তাকে নাকি পুকুর বেশি টানে (!), এই টানাটানির কবলে পড়ে আমি ততদিন পর্যন্ত পুকুরে নামার সাহস পাইনি যতদিনে আমার অনেক ছোট পাড়াতো ভাইয়েরা পুকুরের এপাড়-ওপাড় সাঁতরে বেড়াত।

আমার সাঁতার না জানা দিনের ঘটনা, বাড়ির সামনের রাস্তায় ফুটবল খেলছিলাম। বলে গোবর লাগায় সেটা ধুতে গিয়েছি আমাদের পুকুর ঘাটে। বর্ষার ভরা পুকুর, ঘাটের তাকে গাছের পাতার পানি পড়ে পড়ে শ্যাওলা জমেছে অনেক জায়গায়। আস্তে আস্তে নামছিলাম। হঠাৎ ঘাটের পাশে পানিতে আমাদের পাশের বাড়ির এক বুড়ির লাঠি। আমি উনার লাঠি পানিতে পড়ে গেছে মনে করে লাঠি উঠাতে সেটা ধরে টানতেই দেখি সাথে বুড়িও উঠে আসছেন! উনার হাতে ঘাট নাগাল পাওয়ার সাথে সাথে বুড়ি পানি থেকে মাথা তুলে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঘাটে উঠে সটান শুয়ে পড়েন। চোখ লাল আর বুড়ির নাক-মুখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। এতক্ষণ বুঝতে পারিনি আমি কি করেছি, বুড়ি শোয়া অবস্থায় আমার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আঁই মরি গেইলাম, তুই আঁরে বাঁচাইওস"। এরপর বুড়ি অনেক দোয়া করলেন, এমন আন্তরিকভাবে কেউ কাউকে দোয়া করতে জীবনে দেখিনি!

কিছুদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম বাসার সবাই। আসার সময় গাড়িতে সবার জায়গা হবেনা জেনে আমার আব্বু, ছোট দুই ভাই আর এক কাজিনকে বাসায় ছেড়ে আসার জন্য বেরিয়েছি, বাইরে তুমুল বৃষ্টি। ভাই মোবাইল ফেলে আসাতে সেটা আনতে যাওয়ার আমরা পথে অপেক্ষা করছিলাম। বৃষ্টি, গাড়িতে এসি চলছিল, আমরাও বিভিন্ন গল্প করছিলাম। এর মাঝে মৃদু একটা হর্ন বা হুইসেলের শব্দ শুনি যা অন্যরা খেয়ালই করেনি। ভাই গাড়িতে ফিরে আসলে আমরা রওনা হই। এর দু'শো মিটার সামনে ছিল একটা রেল ক্রসিং। রেল লাইন পার হওয়ার আগে আমি দাঁড়াই, এবারও দাঁড়িয়েছি। ডানে দেখলাম, অল ক্লিয়ার। বামে দেখলাম, রেল লাইনের সমান্তরালে যে রাস্তাটা সেটা একটা বিয়ে উপলক্ষে এমনভাবে সাজিয়েছে বামে রেল লাইন পুরোটাই অন্ধকারে, কিছুই দেখা যায় না, তার উপর তুমুল বৃষ্টি। আমি দাঁড়িয়ে আছি এক মিনিটের বেশি, আমার আব্বু বলেন, 'যাও দাঁড়িয়ে আছ কেন?' আমি হিসেব মিলাতে থাকি, ওটা ট্রাকের হর্ন হলে ভালো কথা। যদি ট্রেনের হুইসেল হয় তবে ঐ হর্ন বাজিয়েছে আমিন জুটমিল এর আগে বা পরে, তাহলে ওখান থেকে ট্রেন আসতে মিনিট দুই বা তার বেশিও লাগতে পারে। নাহ! ট্রেন আসার কোন লক্ষণ নাই। এবার যাওয়া যায়।
আলোকসজ্জা পেরিয়ে আমার গাড়ি রেললাইনে উঠবে এমন সময় বড়জোর ৫০ মিটার বামে দেখি ট্রেনের হেডলাইট। সেকন্ড এর ভগ্নাংশে সব ইন্দ্রিয় সচল হয়ে উঠে। কি হবে- আমি কি পেট্রল দিয়ে রেললাইন পেরিয়ে যেতে পারব? গাড়ি কি তেলে চলছে নাকি গ্যাসে? যদি মাঝপথে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়? হাতটা গিয়ারে আগেই প্রস্তুত ছিল, ড্রাইভ থেকে রিভার্সে রেখেই জোরসে পেট্রোল করি। গাড়ি রেললাইন থেকে, ধাবমান কোচের থেকে দূরে সরে যায়!

উপসংহারে কি লিখা যায় ভাবছি। আদৌ কি উপসংহার শেষ করা হবে। যেখানে প্রকৃতির প্রত্যেকটা সৃষ্টি প্রতি মুহূর্তেই শেষ হয়ে যেতে পারে প্রকৃতির খেয়ালে সেখানে প্রকৃতিই তাদের বড় রক্ষাকর্তা। উপাসনালয়ের আর্তনাদ থাকেনা, থাকে উপাসনাকারীর মিনতি, প্রকৃতি তার উপাদান রক্ষা করে। উপাসনালয় সে তো প্রকৃতির উপাদানের উপাদান!

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এক ঝাঁক শূন্যতা=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৩


আপনজনেরা অপেক্ষার প্রহর গুনে
কার্ডিয়াক হাসপাতালের চেয়ারে বসে,
সব থেকেও যেন কী নেই
এক ঝাঁক শূন্যতা বুকে মানুষগুলো কী উদাস।

কেউ বা সিসিইউতে, কেউ আইসিইউয়ে
হাতে গাঁথা সেলাইনের মালা,
সাদা চাদর গায়ে শুয়ে অপেক্ষায় অনন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×