১ম পর্ব: উল্লুকের মুল্লুকে হন্টন!
লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চললে ট্রেকিং শেষে রাজ্যের ক্ষিধে নিয়ে আবারো বাসে শ্রীমঙ্গল স্টেসনের কাছে আসি পেটপুজো করব বলে। ভাত-ডাল-সবজি-গোশত এসবই ছিল মেন্যুতে, ক্ষিধের চোটে সাধারন রান্নাকেও অসাধারণ লেগেছিল সেদিন। এরপর শেষ বিকেলে মাধবপুর চা বাগানের উদ্দ্যেশ্যে আবারো লোকাল বাসে চেপে বসি। মাধবপুর পৌঁছুতে পৌঁছুতে সন্ধ্যা পার, সেখান থেকে সবাই টর্চের আলো ফেলে হেঁটে পৌঁছি মাধবপুর চা বাগানে লেগের ধারে।
পৌঁছেই সবাই তাড়াহুড়ো করে মাধবপুর লেকের ধারেই আমাদের তাঁবু ফেলি, বাগানের কেয়ারটেকারকে আমাদের রাতের খাবার রান্নার দায়িত্ব দেয়া হয়। সবাই মোটামোটি ক্লান্ত, কেউ কেউ এতটাই যে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার তোড়জোড় করতে লেগে গিয়েছিল। রাত প্রায় এগারোটার সময় নিরাপত্তার অজুহাতে বাগান কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমাদের ক্যাম্প গুটিতে নিতে নয়। শেষে কারখানার একটা শেডে আমাদের তাঁবু ফেলার অনুমতি দেয়া হয়। আবারো তাঁবু খাটানো, এরপর আমাদের রাতের খাবার আসে, খেয়ে সবাই স্লিপিং ব্যাগের ভেতর ঢুকে পড়ি.... আহ! কি শান্তির ঘুম!
সকালে কারখানার সাইরেনের শব্দে ঘুম ভাংগে, সূর্য তখন মাত্র পূব আকাশে উঁকি দিচ্ছিল। রথ দেখা আর কলা বেচার মত আমাদের ফ্রেশ হওয়া আর লেক দর্শন দুইটাই একসাথে করতে হয় কারন আধ মাইল দূরের লেকের পাড়ের টয়লেটই ছিল আমাদের জন্য বরাদ্ধ, ফ্রিতে এরচে ভালো কিছু আশা করাটাই বোকামি। সাত সকালে লেকের পাড়ে কি অপার্থিব দৃশ্য অপেক্ষা করছিল আমাদের কারো কল্পনাতেও ছিলনা। পানির উপরের স্তর থেকে ধোঁয়ার মত করে বাষ্প উড়ছিল, লেকের জলে ভাসছিল টকটকে লাল শাপলা। চারপাশের পাহাড়, চা বাগান আর তাতে সূর্যের প্রথম কিরণ, সত্যিই অসাধারণ সে দৃশ্য!
সকালের নাস্তা করে আমি আর চন্দন ভাই শ্রীমঙ্গল ফেরার জন্য সিএনজি ভাড়া করে ফেলি, দলের অন্যদের রেফহে আমরা ফিরতি গাড়িতে উঠি কারণ আমাদের বেলা বারোটার ট্রেন ধরার তাড়া ছিল। এবার মেইন রোডে না গিয়ে আমাদের গাড়ি চলে আঁকা বাঁকা টিলার মাঝে তৈরী রাস্তায়। চা বাগান, লেবু বাগান, আনারস বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা শ্রীমঙ্গল ফিরে আসি। একরাশ ভালোলাগা আর সফল ভ্রমণের আনন্দ নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে ট্রেনে চাপি।