somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন লিখি? কেন ছবি আঁকি? কেন গান গাই? একই প্রশ্ন?

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(লেখকরা কেন লিখেন? এ বিষয়ে বিনয় ঘোষের একটি চমৎকার লেখা পড়লাম লেখা পড়লাম। ভাল লাগল। শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ বইয়ের সংযোজন অংশ। তাই ব্লগার বন্ধুরাও কেন লিখেন তা যাতে তারা যাচাই করতে পারেন সে উদ্দেশ্যেই লেখাটি হুবহু তুলে দিলাম। লেখাটি মোটামুটি বড়। তাই কয়েকটা পর্বে ভাগ করে দিচ্ছি। আশা করি সবার ভাল লাগবে। আজ প্রথম অংশ লিখলাম। ধারাবাহিকভাবে পুরো লেখাটাই দেয়ার আশা রাখি।)

কেন লিখি? কেন ছবি আঁকি? কেন গান গাই? একই প্রশ্ন?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, যদি অবশ্য উত্তর ঠিকমতো দিতে হয়, অনেক কথা বলতে হয়। বেশী কথা একটি ছোট নিবন্ধের মধ্যে বলা সম্ভব হবে না, তাই অল্প কথায় বিষয়টা নিজে লেখক হিসেবে বুঝতে এবং অন্যদের পাঠক হিসেবে বোঝাতে চেষ্টা করব। চেষ্টা সফল হবার সম্ভাবনা কম কারণ অল্প কথায় গুরুবিষয় বলতে গেলে ভুল বুঝাবার সম্ভাবনা বেশি।
গত প্রায় চল্লিশ বছরের লেখক-জীবনে খুব কম করেও অর্ধশতাধিক লেখক চিত্রশিল্পী ও সুরশিল্পীদের সঙ্গে বিভিন্ন পরিবেশে এই বিষয়ে আলাপ-পরিচয় করে দেখেছি, একজনের উত্তরের সঙ্গে অন্যের উত্তরের বিশেষ মিল নেই। মিল না থাকলেও উত্তরগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একদল লেখক-শিল্পী মনে করেন যে সাহিত্য-শিল্পের চর্চা করে অর্থাৎ লিখে বা ছবি এঁকে বাইরের কোলাহল দায়-দায়িত্ব চিন্তাভাবনা ইত্যাদি থেকে বেশ পালিয়ে যাওয়া যায়। নিজের একটি নিভৃত নির্জন কোণ বেছে নিয়ে সেখানে বসে মনের মতো লেখা যায়, ছবি আঁকা যায়। আর একদল বলেন, না তা যায় না, নিভৃত নির্জন কোণ তৈরি করা যায় না। বাইরের কোলাহল থেকে পালিয়ে যাওয়া যায় না। বাইরের দায়দায়িত্ব চিন্তাভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। নির্জণ কোণে তারা হামলা করে। জেগে ঘুমাবার চেষ্টা করলে কেবল দুঃস্বপ্ন দেখতে হয়, আর বারংবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অতএব পালাবার চেষ্টা করে লাভ নেই। কোথায় পালাবো? এই এক হতে পারে যদি মানুষের কাছ থেকে, সমাজের কাছ থেকে, বহুদূরে এমন কোনো গভীর জঙ্গলে চলে যাই, যেখানে মানুষের বসবাস নেই, মানুষের সমাজ নেই, তাহলে নির্জন কোণে বসে লেখা যায়, ছবি আঁকা যায়। কিন্তু তখন আবার সমস্যা দেখা দেবে, কি লিখব, কাকে নিয়ে লিখব? বন মানুস? বুনো শুয়োর? বন্য ভাল্লুক? বানর-হনুমান? তাই এঁরা বলেন যে সমাজ থেকে, মানুষের কাছ থেকে পালাবার উপায় নেই। সমাজ ও মানুষের সামনে মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে এবং তার ঘাত প্রতিঘাতের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হবে। সংগ্রামে ক্ষত-বিক্ষত হলেও লক্ষ্য হবে জয়ী হওয়া।
এই দুই দলের বক্তব্যের উত্তরে প্রথমেই বলা যায়, পলায়ন যে কেবল গভীর জঙ্গলে অথবা হিমালয়ের পাদদেশে করা যায় তা নয়, পাগল হয়েও পালানো যায়, মৃত্যু বরণ করেও পালানো যায়। যারা সংগ্রামে ক্ষতবিক্ষত হয়ে জয়ী হবার কথা বলেন তারাও বিলক্ষণ জানেন যে অস্ত্রশস্ত্র্ ছাড়া সংগ্রাম করা যায় না এবং কলমকে যতই আমরা তলোয়ারের চেয়ে শক্তিশালী বলি না কেন, যখন কোনো সৈনিক তলোয়ার নিয়ে সেই শক্তিশালী লেখনী ধারককে শিরচ্ছেদ করতে আসে তখন কলম দিয়ে তা প্রতিরোধ করা যায় না, তলোয়ার দিয়ে করতে হয়।
কিন্তু কেন লিখি তার উত্তর এর মধ্যে পাওয়া গেল না। পালিয়ে যাওয়া অথবা আত্মচিন্তায় বুঁদ হয়ে থেকে সেই ভাব প্রকাশ করা যদি লেখার উদ্দেশ্য হয় তাহলে LSD বা যে কোনো ট্র্যাঙ্কুলাইজার খেয়ে তা করা যেতে পারে। তার জন্য লিখতে হবে কেন? সংগ্রাম যদি করতে হয় তাহলে অস্ত্র নিয়ে তা করাই ভাল, লেখনীর প্রয়োজন কি? কাজেই আমরা লিখি অন্য কোনো কারণে। আমরা মানুষ, মানুষের মধ্যে বাস করি, মানুষ হিসেবে সামাজিক পরিপার্শ্ব থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করি, চোখে দেখি, কানে শুনি, বুদ্ধি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করি, হৃদয় দিয়ে অনুভব করি। যা কিছু এই ভাবে আমরা মানুষ হিসেবে মানুষের মধ্যে থেকে গ্রহণ-বর্জন করি, তারই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমরা লিখে প্রকাশ করতে চাই। মুখে প্রকাশ করলে কথক কবিয়াল বা আধুনিক বক্তা হতে হত। লিখে প্রকাশ করি বলেই আমরা লেখক। প্রকাশ করি এই জন্য যাতে পাঠকরা আমার মনের ভাবানুভাব, আমার অভিজ্ঞতা এবং সেই অভিজ্ঞতাকে বিচার রীতি ও ভঙ্গি ইত্যাদি জানতে পারে, অর্থাৎ Communicate করাই লেখকের উদ্দেশ্য। 'The writer is, par excellence, a mediator and his commitment is to mediation.' (Sartre). (চলবে)
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসলেই কি নির্বাচন হবে?

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২৩

আপনারা যদি নির্বাচনের পর সংস্কার সত্যি করতে পারবেন তাহলে ৫৩ বছর পারেননি কেনো?

- উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

এই যে কয়েকদিনের মধ্যে এই কথাগুলো উঠছে এর মানে হলো আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না ভাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

রংপুর জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে তৈরী মডেল মসজিদের ছবিটি উইকি থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশে ইসলামের নামে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও বাস্তবে তার অনেকগুলোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

AI-এর লগে গ্যাঁজাইলাম =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(স্ক্রিনসট)

সামহোয়্যার ইন ব্লগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালন সাঁইজির আধ্যাতিকতা,পরিচয় ও মানবতাবাদ

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

লালন সাঁই ছিলেন একজন বাউল সাধক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। তাঁর আধ্যাত্মিকতা মূলত গুরু-শিষ্য পরম্পরা, সাধনা ও অন্তর্জ্ঞানভিত্তিক। তিনি ধর্ম, জাতি, বর্ণভেদ মানতেন না এবং বিশ্বাস করতেন, "মানুষের ওপরে কিছু নাই।"... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ছোট কালের ঈদ।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫



ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।



আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×