প্রতিটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত হল যখন তার কোলজুড়ে ফুটফুটে একটা সন্তান আসে। সেইসব দেবশিশুদের মুখে আধো আধো বুলিতে যখন আব্বু আম্মু ডাকটি শুনে তখন খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়। যে কেউই তাদের সন্তানের জন্য নিজের খুশিকে বিসর্জন দিতে দ্বিধাবোধ করে না। নিজের সকল কষ্ট সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে থাকতে পারে।
প্রথমে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই আমি প্রতিদিন দুবেলা পেট ভরে খেতে পারি বলে। আমার এবং আমাদের মত কপাল অনেকেরই নেই। কিছু শিশুদের দূর্ভাগ্য বলবো কিনা জানিনা যারা রাস্তায় জন্মগ্রহন করে। যাদের আমরা পথ শিশু বলেই সম্বোধন করি। যারা দুবেলা পেট ভরে খেতে পায় না। পুষ্টিকর খাবারতো তাদের কাছে আকাশের চাঁদ বলতে পারেন। আমাদের মধ্যে অনেকেরই ইচ্ছে করে পথ শিশুদের জন্য কিছু করার। আমরা এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারি। প্রতিদিন আমরা কত টাকা নষ্ট করি কতভাবে। কেউ সিগারেট খেয়ে শতটাকা ছাই বানিয়ে ফেলি। সামনে ঈদ আসছে। ঈদ নিয়ে আমাদের কত পরিকল্পনা। নতুন পোষাক নিয়ে কতশত ভাবনা। আমরা চাইলে ঈদের বাজেট থেকে সামান্য পরিমান টাকা বাঁচিয়ে ওদের জন্য একদিনের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে পারি। আপনারা হয়তো বলবেন একদিনে কি হয়? এর বেশী সামর্থ্য যে আমাদের নেই। আজকে আমরা একদিনের খাবার নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু করাও সম্ভব আমাদের।
সাহায্য করাটা আমাদের যাদের প্রধান উদ্দেশ্য আর তাই আমরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করতে পারি। আমরা সকলেই জানি বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়। সবাই যদি ১০০/২০০ টাকা করেও দেই তাহলেও অনেক টাকার যোগান দেয়া সম্ভব।
এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে সাহায্য করবেন। ঠিক! হয়ত আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ফার্মগেটের ঐ ফুটপাথে ঘুমন্ত শিশুগুলোর জন্য একটা জায়গা করে দেয়া। হয়ত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরো ২০ বছর পরেও ঐ ফুটপাথে, ডিভাইডারের ওপরই ঘুমিয়ে থাকবে। ওদের এই অবস্থার পরিবর্তন করা হয়ত একবারেই আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মৌলিক পাঁচটি চাহিদা আমরা হয়ত কখনোই একবারের প্রচেষ্টায় পূরণ করতে পারব না। কিন্তু একটু একটু করে সেই লক্ষ্যে হাঁটতে দোষ কী?
আমার পরিচিত কয়েকজন ভলান্টিয়ার এইভাবে হাঁটতে শুরু করেছে Community Action (CA) নামক Volunteer Organization এর একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে আরো ২ বছর আগে থেকে। । আজ থেকে দুই বছর আগে তারা শুরু করে ‘Action: Piyaju-Beguni’ নামক ইভেন্টটি। এই ইভেন্টের আওতায় ২০০৯ সালে মাত্র ১৫ দিনে তারা ইফতারি করেছেন ১০০০ এরও বেশি পথশিশুদের সঙ্গে। ২০১০ সালে মাত্র ১৮ দিনে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৩০০ এর উপরে। আর এই বছর মাত্র ১০ দিনেই ২৫০০ এরও বেশি পথশিশুদের সাথে ইফতারি করেছেন। তাদের এই ক্ষুদে পায়ে হাঁটাহাঁটি এখনো চলছে। চলবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত।
Action: Piyaju-Beguni 2011
ঢাকা, চটগ্রাম ও সিলেটে তাদের এ বছরের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। একেক দিন একেকটা জায়গায় ইফতারি বিতরণ করেন। যেমনঃ আজ ধানমন্ডি তো কাল মহাখালী, আর পরশু আজিমপুর। এভাবে পুরো ঢাকার সবগুলো জায়গাই একে একে ঘুরে ঘুরে চলছে তাদের পথচলা। চাইলে যে কেউ তাদের এই পথচলায় সাথী হতে পারেন। আপনার সুবিধাজনক একটি জায়গা বেছে নিয়ে সেই জায়গার এরিয়া লিডারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে অংশ নিতে পারেন এই ক্ষুদে শিশুদের অনন্য হাসিমুখ দেখবার প্রক্রিয়ায়। চাইলে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারেন। ফটোগ্রাফার হয়ে থাকলে ছবি তুলে, ব্লগার বা সাংবাদিক হলে লেখার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারেন সচেতনতা। অথবা ছোট্ট এক টুকরো প্রার্থনা বা শুভকামনা-এই বা কম কী?
আপনারা কেউ চাইলে সরাসরি নিচের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে সাহায্য পাঠাতে পারবেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে সাহায্যের জন্য অর্থ প্রেরন করতে পারেন অথবা আপনার আশেপাশের বন্ধুদের কাছ থেকেও যদি পারেন কিছু অর্থ সংগ্রহ করে এই উদ্যোগের সাথে যারা জড়িত তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের হাতে অর্থ পৌছে দিতে পারেন। এতটুকু কষ্ট করতে হবে আপনাদের। কি পারবেন না পথ শিশুদের জন্য জন্য হাসিমুখে এতটুকু কষ্ট করতে? অন্তত একদিনের জন্য তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিতে? খুব বেশী কি কষ্ট হবে আপনাদের?
নাম: হাসান মাহমুদ তুষার
ডাচবাংলা ব্যাংক
শন্তিনগর শাখা।
এ্যাকাউন্ট নাম্বার: ১০৮.১০১.৩৮৯৮৩১
আপনারা চাইলে কোন ধরনের জিজ্ঞাসার জন্য ই-মেইলেও যোগাযোগ করতে পারেন। ।
[email protected]
পথশিশুদের নিয়ে "শিরোনামহীন" ব্যান্ডের করা "চিঠি" গানটা চাইলে শুনতে পারেন। এই গানটা শুনে আমি আমার অশ্রু সংবরন করতে পারিনি। জানিনা আপনাদের কাছে কেমন লাগবে।সবাই ভালো থাকবেন। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১১