somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যারী পটারের ফোনকল! (সত্যিকারের ছোট গল্প)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা সন্ধ্যার পর পর।
সবাই চা খাচ্ছিলো, আর আড্ডা দিচ্ছিলো।
মিসি চা খায় না।
বিস্কুট খেতে খেতে টিভি দেখছিলো, ওর খুব পছন্দের একটা গানের ভিডিও দেখাচ্ছিলো... "তেরা মেরা পেয়ার সানাম... Click This Link বোম্বে ভাইকিংস এর এই গানটা শুনলেই মিসি অনেক নস্টালজিক হয়ে যায়... প্রথম প্রেমের মতো সুন্দর একটা গান!
টিটিটিটিড... টিটিটিটিড...
ফোনের রিং বাজছিলো, মিসির সেদিকে খেয়ালই ছিলো না! মা চিৎকার করে বললো, "ফোনটা ধর তো!"
: হ্যালো!
: হ্যালো!
: জ্বী, কে বলছেন?
: হ্যারী পটার!
: সরি! কে?
: হ্যারী পটার!
: কাকে চাচ্ছেন?
: আপনাকে...
মিসি বুঝতে পারছিলো এটা একটা ফালতু কল, তবুও কথাটা শুনে হেসে ফেলেছিলো...
হাসি হ্যারী পটারকে আরো উসকে দিলো...
: আপনার হাসি সুন্দর!
: জানি!
তখনই মা চলে এসাছিলো...
: কে ফোন করসে রে?
: জানি না, রং নাম্বার!
: রং নাম্বার তো কথা বলতেসিশ কেন?
মিসি ততক্ষনে ফোন রেখে দিয়েছিলো।

এর পরও অনেক দিন মনে ছিলো হ্যারী পটারের কথা। অদ্ভুত সুন্দর একটা ভয়েজ ছিলো...
অথবা মিসির বয়স কম ছিলো!
মিসির প্রিয় ফ্যান্টাসী ছিলো হ্যারী পটারের ফোনকল। কতদিন একা একা ফোনের পাশে বসে থেকেছে চুপচাপ, অপেক্ষায়...
বিড়বিড় করেছে পূর্ণেন্দু পত্রী একা একাই, "যে টেলিফোন আসার কথা সচরাচর আসে না..."
কখনো মিসি একটা সিম্পল ফোনকলের জন্য এতোটা ভাবেনি... অথবা, ওকে ভাবায়নি!
কতদিন ধরে ভেবেছে, আবার যদি ফোন করে? কি বলবে ও? কি কি বলবে? কতকিছু বলার আছে!!! হোপলেস রোমান্টিক মিসি!

এরপর অনেকদিন। মিসিরা বাসা বদলালো, ল্যান্ডফোন নাম্বারও চেইন্জ হলো...

পাক্কা পাঁচ বছর পর...

সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ আগেই। মিসি সবার সাথে বসে চা খাচ্ছিলো, আর আড্ডা দিচ্ছিলো। মিসি আজকাল খুব চা খায়। আর কবিতা লেখে, আঁতলামিও করতে চায়, ঠিক ঠাক মতো জমে না...
হঠাৎ ফোন।
টিটিটিটিড.... টিটিটিটিড!
মিসির মা চিৎকার করে বললো, "ফোনটা ধর তো!"
মিসি ফোন ধরতেই ঐপাশের ভয়েজ শুনে ওর হার্ট কিছুটা জোরে বিট করলো...
: হ্যালো!
: চিনতে পারছো?
: জ্বী, কে বলছেন?
: চিনতে পারছো না?
কিছুটা কনফিউজড মিসি। অনেকদিনের চেনা কোন আওয়াজ মনে হয়!
: বনি?
: হুমমম।
: হ্যা দোস্ত বল। ল্যান্ড ফোনে ফোন করলি যে?
: আমি বনি না।
: হ্যালো, কে?
: হ্যারী পটার!
: কে?
: হ্যারী পটার!
মিসি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ! হ্যারী পটার!!!! এতোদিন পর! তার মানে হ্যারী পটার কোন ইমাজিনেশান না! সত্যি!
তবুও খামখেয়ালী মিসি....
: কাকে চাচ্ছেন?
: নিজেকে খুঁজছি!
: কাকে?
: নিজেকে!
তখনই মা... "কে রে?"
: রং নাম্বার!
: তো কথা বলতেসিশ কেন?
কিছুটা সাহসী মিসি, ফোন রাখে না...
: হ্যালো, আপনি কে?
: বললাম না, হ্যারী পটার?
: এইটা তো অনেক পুরানো গল্প!
: হ্যারী পটার?
: না, হ্যারী পটারের ফোনকল! আমি তো প্রায়ই শুনি, অনেকের কাছেই হ্যারী পটারের ফোনকল যায়! (একটু মিথ্যুক মিসি!)
তখন মা চিল্লাচিল্লি শুরু করে... "কার সাথে এতো কথা বলতেসিশ?"

মিসি ফোন রেখে দেয়। মায়ের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ তব্দা লাগা অবস্থায় থাকে! হঠাৎ কি মনে করে দৌড়ে ড্রয়িংরুমের ফোনের কাছে যায়। ঐ সেটটা কলার আইডি। মনেই ছিলো না! দ্রুত নাম্বার বের করে ডায়াল করে...
: হ্যালো, উপশম।
: উপশম?
: জ্বী, কাকে চাইছেন?
: একটু আগেই এই নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে ফোন এসেছিলো।
: ওহ! রিয়েলি সো সরি! ফোনটা কি হ্যারী পটার করেছিলো?
: হ্যাঁ, হ্যারী পটার!
: সরি ম্যা'ম! হ্যারী পটার আমাদের অনেক পুরানি পেশেন্ট। উপশম একটা মানসিক হাসপাতাল। হ্যারী পটারের আসল নাম জায়েদ। সে প্রায় পাঁচ বছর আগে এখানে ভর্তি হয়। এমনিতে চুপচাপ, শান্ত, অন্য পেশেন্টদের মতো ভায়োলেন্ট না, শুধু একটাই সমস্যা, টেলিফোনের আশে পাশে কাওকে না দেখলেই উলটা পালটা নাম্বার ডায়াল করতে থাকে! আর কোন ঝামেলা করে না দেখে তাকে ঠিক ঐভাবে আটকে রাখাও হয় না।
: ওহ! কি, সমস্যা কি তার?
: সেই পুরানো কাহিনী। প্রেম। ছ্যাঁকা খেয়ে এই অবস্থা। তাও সারা বছর না। এমনিতে সে তার বাড়ীতেই থাকে। শুধু মার্চ এপ্রিলেই তার এই অবস্থা হয়। গরমে মাথায় গোলমাল দেখা দেয়। তাছাড়া, এরকমই একটা সময়ে নাকি তার এ্যাকসিডেন্টটা হয়।
: এখন কোথায় সে?
: তার রুমে, ট্রান্কুইলাইজার দেয়া হয়েছে। আপনাকে ফোন করার পর থেকেই খুব অস্থির হয়ে ছিলো, ডক্টর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে দেখে এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

মিসি কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো। সে কিছুটা খামখেয়ালী এখনো আছে তাই খেয়ালই করেনি, সে যে আসলে কাঁদতে শুরু করেছে! আর যখন খেয়াল করলো, তখন বুঝতেই পারলো না কেন আসলে ও কাঁদছে!!!

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১১:২০
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:২৩


সিরাজদিখানের মাহফুজুর রহমান সাহেবের কান্ড দেখে মনে হলো, তিনি ব্রিটিশ আমলের একটা গল্প খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। গল্পটা পুরনো, কিন্তু ঘুষখোরদের মধ্যে এখনো জনপ্রিয়। এক ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বাংলায় দুর্বল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ার রক্তচোখ: ক্রোধের নগর

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫২


ষড়ঋপু সিরিজের দ্বিতীয় কাহিনী ”ক্রোধ”

রাত্রি নেমেছে শহরের উপর, কিন্তু তিমির কেবল আকাশে নয়—সে বসেছে মানুষের শিরায়, দৃষ্টিতে, শ্বাসে। পুরনো শহরের এক প্রান্তে, যেখানে ইট ভেঙে পড়ে আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২



প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নববর্ষের শোভাযাত্রা নাম বদল করছি না, পুরোনো নাম–ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি: ঢাবি উপাচার্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৪



পয়লা বৈশাখে ফি বছর চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

'৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এখন সময়ের দাবী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫


বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×