সময়টা সন্ধ্যার পর পর।
সবাই চা খাচ্ছিলো, আর আড্ডা দিচ্ছিলো।
মিসি চা খায় না।
বিস্কুট খেতে খেতে টিভি দেখছিলো, ওর খুব পছন্দের একটা গানের ভিডিও দেখাচ্ছিলো... "তেরা মেরা পেয়ার সানাম... Click This Link বোম্বে ভাইকিংস এর এই গানটা শুনলেই মিসি অনেক নস্টালজিক হয়ে যায়... প্রথম প্রেমের মতো সুন্দর একটা গান!
টিটিটিটিড... টিটিটিটিড...
ফোনের রিং বাজছিলো, মিসির সেদিকে খেয়ালই ছিলো না! মা চিৎকার করে বললো, "ফোনটা ধর তো!"
: হ্যালো!
: হ্যালো!
: জ্বী, কে বলছেন?
: হ্যারী পটার!
: সরি! কে?
: হ্যারী পটার!
: কাকে চাচ্ছেন?
: আপনাকে...
মিসি বুঝতে পারছিলো এটা একটা ফালতু কল, তবুও কথাটা শুনে হেসে ফেলেছিলো...
হাসি হ্যারী পটারকে আরো উসকে দিলো...
: আপনার হাসি সুন্দর!
: জানি!
তখনই মা চলে এসাছিলো...
: কে ফোন করসে রে?
: জানি না, রং নাম্বার!
: রং নাম্বার তো কথা বলতেসিশ কেন?
মিসি ততক্ষনে ফোন রেখে দিয়েছিলো।
এর পরও অনেক দিন মনে ছিলো হ্যারী পটারের কথা। অদ্ভুত সুন্দর একটা ভয়েজ ছিলো...
অথবা মিসির বয়স কম ছিলো!
মিসির প্রিয় ফ্যান্টাসী ছিলো হ্যারী পটারের ফোনকল। কতদিন একা একা ফোনের পাশে বসে থেকেছে চুপচাপ, অপেক্ষায়...
বিড়বিড় করেছে পূর্ণেন্দু পত্রী একা একাই, "যে টেলিফোন আসার কথা সচরাচর আসে না..."
কখনো মিসি একটা সিম্পল ফোনকলের জন্য এতোটা ভাবেনি... অথবা, ওকে ভাবায়নি!
কতদিন ধরে ভেবেছে, আবার যদি ফোন করে? কি বলবে ও? কি কি বলবে? কতকিছু বলার আছে!!! হোপলেস রোমান্টিক মিসি!
এরপর অনেকদিন। মিসিরা বাসা বদলালো, ল্যান্ডফোন নাম্বারও চেইন্জ হলো...
পাক্কা পাঁচ বছর পর...
সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ আগেই। মিসি সবার সাথে বসে চা খাচ্ছিলো, আর আড্ডা দিচ্ছিলো। মিসি আজকাল খুব চা খায়। আর কবিতা লেখে, আঁতলামিও করতে চায়, ঠিক ঠাক মতো জমে না...
হঠাৎ ফোন।
টিটিটিটিড.... টিটিটিটিড!
মিসির মা চিৎকার করে বললো, "ফোনটা ধর তো!"
মিসি ফোন ধরতেই ঐপাশের ভয়েজ শুনে ওর হার্ট কিছুটা জোরে বিট করলো...
: হ্যালো!
: চিনতে পারছো?
: জ্বী, কে বলছেন?
: চিনতে পারছো না?
কিছুটা কনফিউজড মিসি। অনেকদিনের চেনা কোন আওয়াজ মনে হয়!
: বনি?
: হুমমম।
: হ্যা দোস্ত বল। ল্যান্ড ফোনে ফোন করলি যে?
: আমি বনি না।
: হ্যালো, কে?
: হ্যারী পটার!
: কে?
: হ্যারী পটার!
মিসি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ! হ্যারী পটার!!!! এতোদিন পর! তার মানে হ্যারী পটার কোন ইমাজিনেশান না! সত্যি!
তবুও খামখেয়ালী মিসি....
: কাকে চাচ্ছেন?
: নিজেকে খুঁজছি!
: কাকে?
: নিজেকে!
তখনই মা... "কে রে?"
: রং নাম্বার!
: তো কথা বলতেসিশ কেন?
কিছুটা সাহসী মিসি, ফোন রাখে না...
: হ্যালো, আপনি কে?
: বললাম না, হ্যারী পটার?
: এইটা তো অনেক পুরানো গল্প!
: হ্যারী পটার?
: না, হ্যারী পটারের ফোনকল! আমি তো প্রায়ই শুনি, অনেকের কাছেই হ্যারী পটারের ফোনকল যায়! (একটু মিথ্যুক মিসি!)
তখন মা চিল্লাচিল্লি শুরু করে... "কার সাথে এতো কথা বলতেসিশ?"
মিসি ফোন রেখে দেয়। মায়ের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ তব্দা লাগা অবস্থায় থাকে! হঠাৎ কি মনে করে দৌড়ে ড্রয়িংরুমের ফোনের কাছে যায়। ঐ সেটটা কলার আইডি। মনেই ছিলো না! দ্রুত নাম্বার বের করে ডায়াল করে...
: হ্যালো, উপশম।
: উপশম?
: জ্বী, কাকে চাইছেন?
: একটু আগেই এই নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে ফোন এসেছিলো।
: ওহ! রিয়েলি সো সরি! ফোনটা কি হ্যারী পটার করেছিলো?
: হ্যাঁ, হ্যারী পটার!
: সরি ম্যা'ম! হ্যারী পটার আমাদের অনেক পুরানি পেশেন্ট। উপশম একটা মানসিক হাসপাতাল। হ্যারী পটারের আসল নাম জায়েদ। সে প্রায় পাঁচ বছর আগে এখানে ভর্তি হয়। এমনিতে চুপচাপ, শান্ত, অন্য পেশেন্টদের মতো ভায়োলেন্ট না, শুধু একটাই সমস্যা, টেলিফোনের আশে পাশে কাওকে না দেখলেই উলটা পালটা নাম্বার ডায়াল করতে থাকে! আর কোন ঝামেলা করে না দেখে তাকে ঠিক ঐভাবে আটকে রাখাও হয় না।
: ওহ! কি, সমস্যা কি তার?
: সেই পুরানো কাহিনী। প্রেম। ছ্যাঁকা খেয়ে এই অবস্থা। তাও সারা বছর না। এমনিতে সে তার বাড়ীতেই থাকে। শুধু মার্চ এপ্রিলেই তার এই অবস্থা হয়। গরমে মাথায় গোলমাল দেখা দেয়। তাছাড়া, এরকমই একটা সময়ে নাকি তার এ্যাকসিডেন্টটা হয়।
: এখন কোথায় সে?
: তার রুমে, ট্রান্কুইলাইজার দেয়া হয়েছে। আপনাকে ফোন করার পর থেকেই খুব অস্থির হয়ে ছিলো, ডক্টর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে দেখে এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
মিসি কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো। সে কিছুটা খামখেয়ালী এখনো আছে তাই খেয়ালই করেনি, সে যে আসলে কাঁদতে শুরু করেছে! আর যখন খেয়াল করলো, তখন বুঝতেই পারলো না কেন আসলে ও কাঁদছে!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১১:২০