প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রবাসীর লিখা :
রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহের এক বিকেল।
দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছি জ্যাকসন হাইটসের
থার্টি সেভেন অ্যাভিনিউ ধরে গরম
জিলাপি কিনব বলে। একপাশে কিছু জটলা।
মানুষজনের ছোটখাটো ভিড়। সেখানে
ফুটপাতে টেবিলে তসবি, টুপি, জায়নামাজ
ও হিজাবসহ ধর্মীয় বই বিক্রি করেন
বয়স্ক কিছু মানুষ। তাঁদেরই একজনকে
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। অন্যরা
আড়চোখে তা দেখছিলেন। খানিক
ভীতসন্ত্রস্ত। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি
এক চাচাকে। জানালেন, এত দিন নির্বিঘ্নে
ব্যবসা করলেও ইদানীং ফ্লোরিডার
অরল্যান্ডোতে নৈশক্লাবে মুসলমান
বন্দুকধারীর গুলিতে ৫০ জনের বেশি
প্রাণহানির ঘটনার পর থেকে পুলিশ আসে।
তারা জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করে।
আবার ফিরেও যায়।
জিজ্ঞেস করি কেনাবেচা কিংবা লাভ কেমন
এ ব্যবসায়। বললেন, পেটে ভাতে। অর্থাৎ
দিন আনে, দিন খায়। বিনয়ের সঙ্গে
জানালেন, তবুও ভালো আছেন এই বিদেশ
বিভুঁইয়ে। কারও ওপর নির্ভরশীল নন।
চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য নেই। নির্বিঘ্নে
কাজ করছেন, ঘরে ফিরছেন। কিছু ডলার
বাঁচিয়ে দেশে পরিবারের কাছে পাঠাচ্ছেন।
নিরাপদ একটি জীবন তো ন্যূনতম পক্ষে
যাপন করছেন! আমি ভাবি, পেটে ভাতের
জীবনেও কী ভীষণ তুষ্ট এই সুখী
মানুষগুলো! জীবনযুদ্ধে হারতে হারতে
ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত। তবুও সম্মানের
সঙ্গে টিকে আছেন এই শহরে।
ফেরার পথে মানি এক্সচেঞ্জের সামনে
দেখা পরিচিত এক খালার সঙ্গে। বেশ
কয়েক বছর বাদে দেখা। তাই দাঁড়িয়ে দুজন
দুজনের পরিবারের খবরাখবর নিচ্ছিলাম।
জানালেন, কেবলই দেশে ডলার পাঠালেন
ঈদ উপলক্ষে। দেশে তাঁর দুই যুবক ছেলে।
গাফিলতি করে পড়াশোনা শেষ করেনি
তারা। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক দেশে
পাঠানোর জন্য অনেক টাকা খরচ
করেছিলেন। ভুল মানুষের পাল্লায় পড়ে সব
খুইয়েছেন। অবশেষে দেশেই ছেলেদের
ছোটখাটো ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু সেখানেও বেশি সুবিধা করতে পারছে
না। এই বৃদ্ধ বয়সে বেবি সিটিং করে যা কিছু
আয় করেন, ছেলেদের জন্য পাঠিয়ে দেন।
তবুও কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ নেই।
বরং এই বয়সে নিজের আয়কৃত ডলার
সন্তানদের জন্য পাঠাতে পেরেই যেন তাঁর
সুখ ও স্বস্তি!
এই প্রবাসে চলার পথে প্রতিনিয়ত দেখা
হয়ে যায় এমন জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা
সাহসী মানুষগুলোর সঙ্গে।
অল্পতেই তুষ্ট ও সুখ সুখ অনুভবে বেঁচে
থাকা কিংবা জীবনের শেষ অবধি মাথা উঁচু
করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের গল্পগুলো
কখনো শেষ হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৭:১২