Book Review: Power of Habit-Part Two -Chapter Five: Starbucks and Habit of Success
সফলতার অভ্যাসঃ স্টারবাকস এর গল্প
ট্রাভিস লিচ (Travis Leach) এর ছোট থেকে বড় ওঠা এক দুঃস্বপ্নময় পরিবেশে, মা-বাবা দুজনেই ছিলেন মাদকাসক্ত, বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবেশীর/বাড়িওয়ালা তাদের বার বার এলাকা ছাড়া করেছেন। জীবনের প্রতি একসময় বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। ষোল বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেন, বাড়ী ছেড়ে চলে যান, চাকরি নেন একটি গাড়ির ওয়ার্কশপে। অবাধ্যতার জন্য সেই চাকরি চলে যায় দ্রুত। এর পরে চাকরি নেন ম্যাকডনাল্ডসে, সেখানেও চাকরি হারান গ্রাহকের সাথে দুর্ব্যবহার করে। হলিউডের জন্য ভিডিও তৈরির একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন, সেটাও হারাতে হয়। এরপর চাকরি যোগাড় হয় স্টারবাকসে। সাধারন ওয়েটার থেকে ৬ বছরের মাথায় দুটি অউটলেট এর ম্যানেজার হিসাবে দ্বায়িত্ব অর্জন করেন। স্টারবাকস তার জীবনকে বদলিয়ে দেয়।
স্টারবাকস আসলে কি করেছিল?
স্টারবাকস এর ট্রেনিং তার মধ্যে ইচ্ছা শক্তি (will power) জাগিয়ে তুলেছিল, শুধু তাই নয়, এটি তার ইচ্ছা শক্তিকে অভ্যাস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছিল। আর এই অভ্যাসটাই হচ্ছে সফলতার অভ্যাস। অন্তত এক ডজন গবেষনায় এটা দেখা গেছে যে ইচ্ছা শক্তি হচ্ছে একটি মুল অভ্যাস (keystone habit) যা একজন ব্যক্তির সফলতার পিছনে মুল ভুমিকা রাখে। গবেষনায় দেখা যায় যে সব ছাত্রদের ইচ্ছা শক্তি বেশী/ভালো, তারা ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করে, ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে, ক্লাশে অনুপস্থিতি কম থাকে, টেলিভিশন কম দেখে। অনেক সময় মনে হতে পারে এরা অন্যদের তুলনায় কম পরিশ্রম করছে কারন তারা এটা করে অভ্যাস থেকে, তাদের কাজগুলো (Routine) তথা ইচ্ছা শক্তির প্রয়োগে স্বয়ংক্রিয় ভাবে (অভ্যাসের কারনে) হয়। স্টারবাকস তার কর্মচারীদের ট্রেনিং এর ব্যাপারে আপোষহীন, তারা চায় চার ডলারের এক কাপ কফি সফল ভাবে বিক্রি করতে হলে কফির কাপের সাথে অন্য কিছু দিতে হবে। তাদের মতে আমরা মানুষ নিয়ে ব্যাবসা করি, কফি হচ্ছে একটা উপলক্ষ্য। কফির চেয়ে বেশী জরুরি হচ্ছে কফির বাড়তি আনন্দ দেয়া দরকার যা তাদের কাছে “value for money” নিশ্চিত করবে। কাজে যোগদানের শুরু থেকে পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে কর্মীদের এই প্রশিক্ষন চলতে থাকে।
ইচ্ছাশক্তি কিভাবে কাজ করে এটা নিয়ে বিভিন্না গবেষনা করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগন। ১৯৬০ এর দশকে স্টানফোর্ড এর একটা বিখ্যাত গবেষনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তারা চার বছরের কিছু বাচ্চা কে গবেষণার জন্য বাছাই করেন। তারপর তাদের একটা রুমে বসিয়ে টেবিলে একটি সুস্বাদু কেক পরিবেশন করা হয়। তাদের বলা হয় তারা চাইলে এখনি এটা খেতে পারে তবে ১৫ মিনিট পর খেলে দুইটা কেক দেয়া হবে। গবেষকগন লক্ষ্য করেন বেশিরভাগ বাচ্চাই সাথে সাথেই কেক খেয়ে ফেলে তবে শতকরা ত্রিশ জন বাচ্চা দুইটা কেক খাবার জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে। কয়েক বছর পর যখন তারা হাইস্কুলের ছাত্র তখন তারা এই বাচ্চাদের বিভিন্ন অর্জন পর্যবেক্ষন করেন। তারা দেখতে পান যে বাচ্চারা কেক খাবার সময় ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দিয়েছিল তাদের ক্লাসের রেজাল্ট ভালো, SAT স্কোর ভাল, অন্যদের মধ্যে তাদের গ্রহনযোগ্যতা বেশী, বন্ধুত্ব রক্ষার ক্ষমতা ভাল, তারা জনপ্রিয় এবং এদের মাঝে মাদকের প্রবণতা নাই বললেই চলে। বাচ্চাদের কিভাবে ইচ্ছাশক্তি বাড়ানো যায় এটা নিয়েও বিভিন্ন গবেষনা হয় এবং গবেষকরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন ইচ্ছা শক্তি একটি দক্ষতা যেটি বাচ্চাদের শিখানো যায় যেমন ভাবে তাদের অংক করা কিম্বা ধন্যবাদ বলা শিখানো হয়।
ইচ্ছা শক্তি কম বেশী হয় কেন বা কিভাবে এটাকে কমানো বা বাড়ান যায় এ্টা নিয়ে কেস ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিরে একদল মনোবিজ্ঞানী একটি গবেষনা করেন। তারা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নিয়োগ দেন। যাদেরকে বলা হয় খাবারের স্বাদ বিষয়ে তাদের নিয়ে একটি গবেষণা করা হবে (তাদেরকে গবেষণার আসল বিষয় তথা ইচ্ছাশক্তির পরীক্ষার বিষয়টি বলা হয়নি)। তাদের সবাইকে একই সাথে দুই ধরনের খাবার দেয়া হয়, একটা হচ্ছে সদ্য বানানো গরম বিস্কিট আর রান্না করা সবজি। অর্ধেক অংশগ্রহনকারীদের কুকি বাদ দিয়ে সবজি খেতে বলা হয় এবং বাকী অর্ধেককে সবজি বাদ দিয়ে কুকি খেতে বলা হয়। গবেষকরা আড়াল থেকে তাদের আচরন লক্ষ্য করেন। যাদের বিস্কিট খেতে বলা হয়েছিল তারা ছিল বেশ খুশী আর যাদের সবজি খেতে বলা হয়েছিল তারা ছিল বিরক্ত। তাদের কেউ কেউ বিস্কিট হাতে নেন, ঘ্রান নেন কেউ আবার বিস্কিটের গলিত চকলেট যেটা হাতে লেগেছিল সেটা চেটে খান। পনের মিনিট পর গবেষকরা আবার ঘরে আসেন এবং এবার তাদের কিছু জ্যামিতির ধাধা সমাধান করবার জন্য দেন যেটা সমাধান করার জন্য গভীর মনোযোগের দরকার ছিল। বিস্কিট খাওয়া দল অনেক মনোযোগ দিয়ে লম্বা সময় (প্রায় ৩০ মিনিট) ধাধা সমাধানের চেষ্টা করেন অন্যদিকে সবজি খাওয়া দল ছিল হতাশ , তারা সর্বোচ্চ ৮ মিনিটের মাথায় ধাধা সমাধানের চেষ্টা ছেড়ে দেন। কেউ টেবিলে মাথা এলিয়ে দিয়ে বিশ্রামে চলে যান। তারা সিদ্ধান্তে পৌছান সব্জি খাওয়া দলের বিস্কিট না খাবার জন্য যে ইচ্ছা শক্তি তাদের ব্যবহার করতে হয়েছে, তার ফলে ধাধা সমাধানের ইচ্ছাশক্তিতে ঘাটতি পড়েছে। এই পরীক্ষার সহ পরবর্তীতে আর অনেক গবেষণা থেকে সাধারন সিদ্ধান্তে আসা হয় যে ইচ্ছা শক্তি শুধু একটু দক্ষতা নয় এটা একধরনের মাংসপেশীর মত (আমাদের হাত/পায়ের মাসলের মত) একজন যদি কোন কাজে বেশী ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে, তবে পরের কোন কাজে তা ব্যবহার করার জন্য তার মজুদ কমে যাবে। ঠিক যেন শারীরিক কোন কাজ করলে ক্লান্তি আসে সেরকম। নিয়মিত ব্যায়াম করেন এরকম একজনও কিন্তু অফিসে কোন একদিন একটি ক্লান্তিময় দিন শেষে প্রতিদিনের রুটিন থাকা সত্বেও আর ব্যায়াম করতে যান না কারন যাবার মত ইচ্ছাশক্তি তার অবশিষ্ট থাকেনা।
ইচ্ছা শক্তিকে কিভাবে অভ্যাস হিসাবে গড়ে তোলা যায়?
ব্রিটিশ মনবিজ্ঞানীদের একটি দল স্কটল্যান্ডের একটি হাসপাতালে হাটু অপারেশন করিয়েছেন এমন কিছু লোকের উপর একটি গবেষনা করেন যাদের বয়স ৬৮ বছরের বেশি। হাটুর অপারেশনের পর পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া একটি জটিল এবং কষ্টসাধ্য, লম্বা সময় তাদের নির্দিষ্ট ব্যায়ামের মধ্যে যেতে হয়। এই বয়সের অনেক মানুষই এই পর্যায়ে এই কষ্টকর প্রক্রিয়ায় যেতে চায়না, যার ফলে তাদের পুরোপুরি সুস্থ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষকরা দেখতে চাইলেন তারা ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার করতে পারে কিনা। গবেষকগণ তাদের একটা ছোট ডায়েরি দিলেন এবং নির্দেশনা দিলেন তারা যেন প্রতি সপ্তাহে কি করবেন তা আগে থেকেই লিখে রাখে এবং সেভাবে [পরিকল্পনা মাফিক ব্যায়াম/কাজ করেন। কয়েক সপ্তাহ পর তিনি দেখেন যারা বিস্তারিত লিখেছেন, তাদের উন্নতি যারা কিছু লিখেন নি তাদের তুলনায় অনেক বেশি। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে যারা বিস্তারিত লিখেছেন তারা আসলে অভ্যাস চক্রের ইঙ্গিত (CUE) গুলি নির্দিষ্ট করে ফেলেন আগেই এবং ঐ ইংগিতে কি কাজ করবেন (routine) তাও নির্ধারন করে ফেলেন যাতে কোন একটা পুরস্কার (Reward) পাওয়া যায়। যেমন একজনের একটা ইঙ্গিত ছিল প্রতিদিন বিকাল ৩ টা, কাজ হচ্ছে রিহ্যাব সেন্টার থেকে বের হয় বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত হেটে যাওয়া আর পুরস্কার হচ্ছে স্ত্রীর সাথে সাক্ষাত। এভাবে তারা পুনর্বাসনের প্রতিটি কাজ কে অভ্যাস চক্রের মাধ্যে অভ্যাসে পরিনত করেছিলেন। তারা তার সাফল্য পেয়েছেন।
স্টারবাকস আসলে এই একই কাজ করে থাকে তাদের প্রশিক্ষনে। একজন কর্মচারিকে সম্ভাব্য পরিস্থিতিগুলোর বিপরীতে কিভাবে কি আচরন করবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারন করা থেকে এবং সেটা অভিনয় (রোল প্লে)/প্রাক্টিসের মাধ্যমে সেটাকে তারা অভ্যাসে পরিনত করে ফেলে। অভ্যাস চক্রের মাধ্যমে তারা সম্ভাব্য খারাপ অবস্থাকে ইচ্ছাশক্তি দিয়ে মোকাবেলা করার অভ্যাস হিসাবে গড়ে তুলেন। ইচ্ছা শক্তি কে অভ্যাস হিসাবে তৈরির জন্য প্রয়োজন আগে থেকেই সম্ভাব্য পরিস্থিতি ধারনা করা, সে পরিস্থিতিতে কি কাজ করতে হবে সেটা নির্ধারন করা।
পরের অধ্যায়ে আমরা দেখব প্রাতিষ্ঠানিক অভ্যাসের কোন ধরণের ফাকফোকর থেকে ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে এবং ক্রাইসিস থেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠানের অভ্যাস বদলিয়ে সফলতার অভ্যাস গড়ে তোলেন সফল নেতারা।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮