২০১০ সালে লিখেছিলাম ব্লগে। আজা আবারো দিলাম।
একটু উন্নত মানের বাস সেবা দেয়া কি সরকারের জন্য খুবই দূরহ??
বুঝিনা!!
ঢাকার পাবলিক বাস মানেই ফিটনেসহীন লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি, নোংরা অরুচিকর পরিবেশ, কন্ট্রাকটরের দুর্ব্যাবহার, অদক্ষ ড্রাইভার, যেখানে সেখানে দাড়ায়ে লোক ওঠানো, গাদাগাদি পাসেঞ্জার তারপরও বেশী যাত্রী নেবার জন্য অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ রেশারেশি। ফলাফল যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি, বাড়তি ট্রাফিক জ্যাম, পকেটমারদের দৌরাত্ম আর মাঝে মধ্যে রাস্তায় মানুষ খুন।
ক’ দিন আগে বাসের ধাক্কায় এবার নিহত হলেন এক দম্পতি, সাথে তাদের অনাগত গর্ভস্থ সন্তান। গত ১২ জুন, ২০১০, শনিবার মগবাজারের খালি রাস্তায় প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে একটি বাস ধাক্কা দেয় মটর সাইকেল কে, যার ফলে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এর আগে বুয়েট ছাত্র সম্রাট, তার আগে স্কুল ছাত্র শিশু হামিম, তারো আগে......।এভাবে হিসাব করলে কত নাম আসবে তার সঠিক হিসাব কে দিবে?
কোটি মানুষের বাসস্তান একটি হবু ডিজিটাল দেশের রাজধানী শহরে মুড়ীর টিন খ্যাত বাস সার্ভিসের পরিবর্তে আরেকটু ভাল মানের গণ-পরিবহন কি আশা করা যায়না?
কেমন হতে পারে ঢাকার বাস পরিবহন ব্যাবস্থাঃ
সমগ্র ঢাকা শহর কে স্বল্প/নির্দিষ্ট সংখ্যক পথে (রুট) ভাগ করা যেতে পারে। প্রতিটি পথে বাস স্টেশন নির্ধারন করা থাকবে।
বাস সার্ভিস দেয়ার জন্য চার-পাঁচ টি কোম্পানী কে লাইসেন্স/অনুমতি দেয়া যেতে পারে। কোন কোম্পানী শুধু তার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক রুটে চলাচলের অনুমতি পাবে।
কোম্পানী ওই পথে যাত্রী অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উন্নতমানের বাস নামাবে। বাস গুলি বড়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং আধুনিক হবে। ফুটপাথ দখল করে টিকেট কাউন্টার না করে বাসের ভিতরেই টিকেট কাটার ব্যাবস্থা থাকবে। নিয়মিত যাত্রীদের সুবিধার্থে দৈনিক/মাসিক টিকেটের ব্যাবস্থা থাকবে।
ড্রাইভার সহ সকল স্টাফ হবে প্রশিক্ষিত এবং পেশাদার যারা যাত্রীদের সাথে খরিদ্দার সুলভ (কাস্টমার ইজ দি কিং- মনোভাব নিয়ে)ব্যাবহার করবে।
জনসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রন রাখার সুবিধার্থে এই ধরনের কোম্পানীতে সরকারের একটি ছোট অংশের মালিকানা থাকতে পারে। প্রয়োজনে পুজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রাহের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। এসব কোম্পানী কে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া যেতে পারে।
বাসগুলো দুই শ্রেণির সেবা দিবে। একটি ভুর্তকিবিহীন বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। অপরটি কম খরচে চলার জন্যে ইকনোমি সেবা। সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ভাড়া সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্য এই সেবা-দান কারী বাসের জন্যে গ্রহণযোগ্য পন্থায় ভুর্তকি দেয়া যেতে পারে।
দুই প্রকার বাসের ভাড়া অবশ্যই সরকার কতৃক অনুমোদিত হতে হবে।
যেখানে সম্ভব বাসগুলিকে রাস্তার আলাদা লেনে চলতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে যাতে বাসে যাত্রীরা তুলনামুলক ভাবে কম জ্যাম পায়। যাতে কিছু গাড়িওয়ালা মানুষ কোন কোন সময় নিজেদের গাড়ি না নিয়ে বাসে চড়ার অভ্যেস গড়ে তুলে। তাতে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হবে, জ্যাম ব্যাবস্থারও কিছুটা লাঘব হবে।
বিড়ালের গলায় ঘন্টা কে বাধবে?
সরকারের অনেক এজেন্ডা। দ্বায়িত্বশিল ব্যাক্তিবর্গের অনেক কাজ। জনস্বার্থে ভুমিকা রাখার জন্য খুব বেশী সময় উনাদের নাই। যে দু-চার টা কথা/বক্তব্য শুনা যায় তার আবার বাস্তবায়ন হয় না। জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনীতি করা যায় কিন্তু সমাধান করার দায় যেন কারো নয়। বরং আমরা বাস ড্রাইভার-মালিকদের ক্রীড়ানক হয়েই থেকে যাব আর পরিবর্তনের আশায় ভোট দিয়ে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকব।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৯