এ জীবনে একবারই আমি হারিয়ে ছিলাম, তোর চোখের মায়ায়। চুলের ভাঁজে। তোকে নিয়ে কাঁদবো বলে, একটা বর্ষা তুলে রেখেছি। বৃষ্টি জল কিছু ছুঁয়ে দেখিনি।
যেদিন দখলে ছিলাম, তোকেই ছুঁয়ে ছিল; আমার সমস্ত পৃথিবী। তখন তোর আঙ্গুল তানপুরায়-আমিই কেবল বেহাগ বসন্ত হয়েছি।
আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কত খেলাই না খেলতি।
এভাবে কেমন করে পারিস?
কি গভীর চোখে তাকিয়ে, অবলীলায় দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারিস-সে কেবল তুই। কামনায় ঘিরে ঘিরে ধীরে ধীরে আমাকে জল সেচে তুলেছিলি-তা কেবল এক প্রহরের জন্য। আবার সেই তো আমায় ডুবিয়েছিলি গহীন জলে।
এমন করে, কেমন করে করিস এসব? তুই কি তবে জলপরী? জাদুর মায়া? তোর দুচোখে গহীন মায়া। তোর দুচোখে সোনার কাঠি রুপোর কাঠি।
আমি তোকে চেয়েছিলাম, তখন তোর দুচোখে জুড়ে ছিল অগ্নিছায়া। পুড়িয়ে দিলি। তুই আমাকে ভাসিয়ে দিলি।
আগুন জলে ভেসেই গেলাম। এক একটা দিন, এক একটা রাত -প্রহর তো নয়; শীত-কুয়াশায় স্তব্ধ বছর। অনন্তকাল।
তুই কি আমায় দেখিস এখন? ভাবতে পারিস? যেমন করে আমি ভাবি।
দীর্ঘশ্বাসে নয়, রোজকার নিঃশ্বাসে তোর চুলের গন্ধ, চোখের কাজল, কৃষ্ণ কলি আঙ্গুল চুঁয়ে স্বপ্ন মায়া ছলকে ওঠে। উপচে পড়ে।
আমি কুড়িয়ে রাখি। নিত্যদিনই। কাক ডাকা ভোর, একলা দুপুর, উদাস বায়ে। মন খারাপের সন্ধ্যা বেলা। দীর্ঘ রাতে। আমি কেবল কুড়োই। কুড়িয়ে রাখি। তোরই মায়া। স্নিগ্ধ স্মৃতি।
ভেবেছিলাম, ভাববো আমি-মানুষ তো নস। এমন চোখে প্রাণ না থাকলে, প্রেম না থাকলে- সে কি আর মানুষ থাকে?
তুই তো একটা কাঠের পুতুল, পাথর হৃদয়। নিষ্ঠুর তুই। মানুষ তো নস।
উত্তরে তুই কিছুই বলিসনি। কেবল তাকিয়ে ছিলি। যেমন করে রোজ তাকাতিস।
তুই কেবল আমার দিকেই অম্নি তাকাস? না কি তোর চোখ দুটোইএমন, কেবল গভীর করে ছড়িয়ে থাকে। আর কোন যুবককে এ কথা জিজ্ঞাসা করবার এ সাহস আর কোনদিনই আমার হল না।
ধরে নিয়েছিলাম, তুই কেবল আমাকেই----
ওই চোখে তাকিয়ে আমি আজও তোকে আবিষ্কার করতে পারিনি।
আজও তোকে বলতে পারিনি, তুই না হয় কাঠের পুতুল কিন্তু আমি তো আর কাঠ রাজপুত্র নই।
তোর চোখে প্রেম ছিল? না শাপ ছিল? অথবা সন্তাপ?
আমায় কেন ভাসিয়ে দিলি? ফেললি ছুঁড়ে?
হতভাগী, তুই না হয় ইচ্ছেমতি। আমি মানুষ। খুব সাধারণ।
আমায় কেবল আমার হৃদয় ফিরিয়ে দে না? আয় দেখে যা- আমি এখন শূন্য হৃদয়, কাঠের মানুষ। কাঠের ঘোড়া কি খায় কি জল?
আমি অন্ধ পাহাড়। রূপকথার নিঝুম পুরী। ডাইনি পাতাল।
বলবি আমায়, কি দোষ আমার?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৪৯