চাকরির জন্য খামে করে স্ট্যাম্পে আঠা লাগিয়ে আবেদনপত্র পাঠানোর দিন যে শেষ তা আর বলা লাগে না। এখন আমাদের দেশের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করতে হয় অনলাইনে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর নানা সীমাবদ্ধতার এই দেশে বলা যায়, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে কতজন যে উপকৃত হয়েছে আর কত সময় ও সম্পদের সাশ্রয় হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
আমাদের দেশে অনলাইনে ইলেকট্রনিক ফরম পূরণ করে সিভি জমা দেওয়া পদ্ধতিটির ব্যবহার শুরু হয় প্রায় ২ দশক আগে। তার পরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা কি এই প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য হতে পেরেছি? নানা সীমাবদ্ধতার জন্য দ্রুত কার্যকর পদ্ধতিটি এখনও অনেক ক্ষেত্রে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার কারণ হয়ে রয়েছে।
দেশের শিক্ষিত বেকারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না নিজে-নিজে আবেদন করার। ফলে তাদের অন্য কারও সাহায্য নিয়ে বা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে টাকা দিয়ে আবেদন করিয়ে নিতে হয়। যাদের দিয়ে আবেদন করানো হয়, তাদের এ বিষয়ে ধারণার অভাব থাকলে আবেদনপত্রে ভুল থেকে যায় এবং তা বাতিল হয়ে যায়। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ধরনা দেওয়া তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাও কম নয়।
এরপর দেখা যাক, ইন্টারনেট ব্যবস্থার দিকে। দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হলেও কচ্ছপগতির জন্য ইন্টারনেট এক ভোগান্তির নাম। দ্রুতগতির ইন্টারনেট-সংযোগ থ্রি-জি ও ওয়াইম্যাক্স সেবা কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া ইন্টারনেটের বিল একজন চাকরিপ্রার্থী বেকারের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও যে এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হয়েছে বলা যায় না। প্রায়ই দেখা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও ওয়েবসাইট হালনাগাদ হয়নি। এ ছাড়া সাইটের টেকনিক্যাল সমস্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ভুক্তভোগীদের কাছে।
এরপরও বলা যায়, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে এই অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পদ্ধতিটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর। এখন এই অসঙ্গতিগুলো দূর করার জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা, না হলে আমরা দিনকে দিন শুধু পিছিয়েই পড়ব।