somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

The Way Back : টিকে থাকা, জয়ী হওয়া আর কিছু অসাধারণ অর্জনের গল্প (মুভি রিভিউ)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এস্কেপ মুভি গুলো সবসময় আমার আমার পছন্দের তালিকার একেবারে উপরের দিকে থাকে। এই মুভিগুলো জোগান দেয় সাহসের। সেই সাথে অবচেতনে দিয়ে যায় কখনো হার না মানার মন্ত্র। মানুষের চিরন্তন মুক্তিকামী সত্তাকে জাগিয়ে তোলে এই মুভিগুলো - সৃষ্টি করে অসম্ভব ভালোলাগার একটা ঘোর, যেটা রয়ে যায় বহুদিনের জন্য। পর্দায় দেখানো দুঃসাহসীক, অতিমানবীয় ঘটনাগুলোর শেষে কুশীলবরা সফলভাবে এস্কেপ করতে পারুক আর নাই পারুক, তাদের এই উদ্যোগ কিন্তু দর্শকদের নাড়া দেয় প্রচন্ডভাবে।

আমার আগের পোস্টে বলেছিলাম যে বেশ কিছু পোস্ট দেব শুধুমাত্র অসম্ভব ভালো লাগা মুভিগুলো নিয়ে। সে ধারায় আজকের মুভি The Way Back

শুরুতেই বলে নেই, এই মুভি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরী। Sławomir Rawicz নামে একজন পোলিশ আর্মি লেফটেন্যান্ট ১৯৪১ সালে সোভিয়েত গুলাগ(সাইবেরিয়ার প্রিজন ক্যাম্প) থেকে পালিয়ে ৪০০০ মাইল (প্রায় ৬৫০০ কি.মি) পাড়ি দিয়ে ভারতে আসেন। সেই স্মৃতি থেকে তিনি ১৯৫৫ সালে একটি বই লেখেন The Long Walk নামে। ঐ বইটার উপরে ভিত্তি করেই মুভিটা বানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে এই বইটার অনেক বর্ণনাই প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক বিশেষজ্ঞ সন্দেহ প্রকাশ করেন আসলেই Sławomir Rawicz এতটা পথ অতিক্রম করেছিলেন কিনা তা নিয়ে - অনেকে আবার বলেন তিনি ভারতে না এসে ইরান চলে গিয়েছিলেন। যাই হোক না কেন, এটা নিশ্চিত করে বলতে চাই, এসব বিতর্ক মুভিটার আবেদনে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারে নি। অনবদ্য এক মানবীয় অ্যাডভেঞ্চারের যে চিত্র মুভিটা ফুটিয়ে তুলেছে তাতে অনায়াসে এই মুভিকে কালোত্তীর্ণ বলা চলে।

অনেক বড় ভূমিকা হয়ে গেল। এবার মুভির স্টোরীলাইনে আলোকপাত করা যাক। Janusz
(জিম স্টুর্গেস)
একজন পোলিশ সামরিক অফিসার। ১৯৩৯ সালে রাশিয়া পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং ইয়ানুশ (Janusz) গ্রেপ্তার হয় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। যদিও সে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে, কিন্ত তার স্ত্রী সাক্ষ্য দেয় তার বিরুদ্ধে (সোভিয়েতরা তার স্ত্রীকে বাধ্য করে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে)। অতএব, ইয়ানুশকে পাঠিয়ে দেয়া হয় দুস্তর এবং ভয়ানক দুর্গম সাইবেরিয়ান প্রিজন ক্যাম্পে, যেগুলো গুলাগ বলে সারা দুনিয়ায় মশহুর। সেখানে বেশ কিছু বন্দীর সাথে তার পরিচয় হয়। তারা প্ল্যান করে পালাবার। তাদের এই গ্রুপটার মাঝে নানা জাতি আর শ্রেণীর মানুষের বিচিত্র সমাবেশ ঘটে। মিঃস্মিথ (এড হ্যারিস) একজন গম্ভীর মধ্যবয়স্ক আমেরিকান, ভালকা (কলিন ফ্যারেল) ভয়ানক রাশান অপরাধী, কিশোর কাজিক - যে কিনা রাতে চোখে দেখে না বললেই চলে। আরো আছে ভস, একজন লাটভিয়ান যাজক; টমাস যে কিনা আর্টিস্ট আর জোরান - একজন যুগোস্লাভিয়ান অ্যাকাউন্টেন্ট। তো সবাই তারা ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসলেও সবার একটাই লক্ষ্য, পালিয়া যাওয়া।

অতএব, প্রচন্ড এক ঝড়ের রাতে এই সাত জন পালিয়ে যায় বন্দীশিবির থেকে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য বৈকাল হ্রদ হয়ে মঙ্গোলিয়ায় প্রবেশ করা। শুরু হয় তাদের অতিমানবীয় ভ্রমণ। ভয়ানক শীত, জঘন্য জলাভূমি, খিদের জ্বালা, সুপেয় পানির অভাব, পোকামাকড়ের অত্যাচার আর রাশান পুলিশের ধাওয়া তো আছেই! ভয়াবহ বৈরী আবহাওয়া পদে পদে বাঁধার সৃষ্টি করে তাদের সামনে। পথে তাদের দেখা হয় ইরিনার সাথে, যে তাদের মতই পলাতক। ইরিনাও হয়ে ওঠে তাদের দলের একজন। অসম্ভব কষ্ট সহ্য করে পায়ে হেঁটে তারা যখন মঙ্গোলিয়ার পৌঁছে তখন দেখতে পায় যে সেটা এখন কম্যুনিস্ট দেশ - রুশীদের সাথে তাদের ব্যাপক দহরম মহরম! ওখানে গেলে তাদের নিশ্চিত তুলে দেওয়া হবে রাশানদের হাতে।

তো এখন কি করা? কোথায় যাওয়া যায়?? চীনে? নাকি ভারতে? চীনে তখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা - কোন পক্ষে যে এরা আছে তা বোঝা বড় দায়! তাছাড়া মতাদর্শ কিছুটা ভিন্ন হলেও চীন কম্যুনিস্ট দেশ। চীন যে তাদের রাশিয়ার হাতে তুলে দিবে না এর গ্যারান্টি কোথায়?? সুতরাং, ভারত চল। কিন্তু বললেই কি যাওয়া যায়? পাড়ি দিতে হবে দুস্তর গোবী মরুভুমি! তাই সই - স্বাধীনতা আর শৃঙ্খলের মাঝে একটা মরুভূমির বাধাই তো??!

শুরু হয় তাদের অবিশ্বাস্য পলায়ন প্রচেষ্টার দ্বিতীয় অংশ। নির্দয় মরুভূমি যেখানে তাদের দেখিয়ে দেয় তার বন্ধুর রূপের সবটুকু। এই ভয়ানক মরু পার হয়ে তারা কীভাবে ভারতে পৌঁছল - আদৌ পৌঁছতে পারল কিনা বা কয়জন শেষ পর্যন্ত টিকে থাকল, তা জানার জন্য মুভিটা দেখে ফেলুন দেখি!!

উপরে আমি যে স্টোরীলাইন দিলাম সেটা মুভি সম্পর্কে শুধুই একটা ধারণা দেবার জন্য। সবটা এখানেই বলে দিলে তো মজাই শেষ হয়ে গেল, তাই না?!

এবার আসুন দেখা যাক, কেন এই মুভিটা এতটা হৃদয়গ্রাহী। প্রথমেই যেটা বলব সেটা হচ্ছে প্রতিটি চরিত্রের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অতীত, বিভিন্ন ভাবে যেটা তুলে ধরা হয়েছে মুভিতে। তারা যেন শুধু বন্দীশিবির থেকেই পালাচ্ছে না, পালিয়ে চলছে তাদের অতীত থেকেও। প্রতিটা চরিত্রের অনন্যসাধারণ বৈচিত্র আমাদের সেঁটে রাখে স্ক্রিনে। একজন মিঃ স্মিথ যখন তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে খুঁজে পায় পলাতকদের কারো মাঝে অথবা একজন ভালকা যখন তার মাতৃভূমির জন্য দেখায় অবিশ্বাস্য ভালোবাসা, তখন দর্শক অবশ্যই হারিয়ে যাবেন মুভির মধ্যে। মুভিটা তুলে ধরেছে ভালবাসার চিরন্তন শক্তি, যা যুগে যুগে মানুষকে টিকিয়ে রেখেছে শত প্রতিকূলতার মাঝে। মমতা আর ভালোবাসা যে চিরঞ্জীব সেটা আরো একবার তীব্রভাবে আপনাকে নাড়া দিয়ে যাবে এই মুভির বিভিন্ন দৃশ্যে, যেখানে আপনাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া মনুষ্যত্বের নতুন রূপ। মুভির শেষটা আপনার সারাজীবন মনে থাকেবে, একথা জোর দিয়ে বলা যায়।

অসম্ভব ভালো অভিনয় করেছেন সবাই। বিশেষ করে জিম স্টুর্গেস, কলিন ফ্যারেল, এড হ্যারিস আর ইরিনার চরিত্রে রুপায়ন করা Saoirse Ronan হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয় করেছেন। মুভি দেখার সময় আপনি নিশ্চিত মিশে যাবেন চরিত্রের সাথে - হয়ত ভুলেই যাবেন যে আপনি মুভি দেখছেন!

এক কথায় এই মুভি একটা মাস্টারপিস। শুধু এস্কেপ মুভির মাঝেই না, সব ধরনের মুভির হিসেবে এটা মাস্ট সি!
তো দেখেই ফেলেন মুভিটা তাহলে - আর জানিয়ে যান আপনার ফিডব্যাক!

নোটঃ সাইবেরিয়ান গুলাগ থেকে পালিয়ে মঙ্গোলিয়া হয়ে ভারতে আসার রুট ম্যাপের মাধ্যেমে দেখানো হল নিচে -
১)


২)


৩)

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:২৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

AI-এর লগে গ্যাঁজাইলাম =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(স্ক্রিনসট)

সামহোয়্যার ইন ব্লগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালন সাঁইজির আধ্যাতিকতা,পরিচয় ও মানবতাবাদ

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

লালন সাঁই ছিলেন একজন বাউল সাধক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। তাঁর আধ্যাত্মিকতা মূলত গুরু-শিষ্য পরম্পরা, সাধনা ও অন্তর্জ্ঞানভিত্তিক। তিনি ধর্ম, জাতি, বর্ণভেদ মানতেন না এবং বিশ্বাস করতেন, "মানুষের ওপরে কিছু নাই।"... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ছোট কালের ঈদ।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫



ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।



আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটার প্যান সিনড্রোম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪২


প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও দায়িত্ব নিতে না চাওয়া, বাস্তবতা এড়িয়ে চলা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকের মাঝেই দেখা যায়। তারা শৈশবের মতো স্বাধীন, নিরুদ্বেগ জীবন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি কি ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে না?

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২২

ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপির আচরণ কেমন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত ভাবে দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা কারো আচরণ কেমন হতে পারে সেটা তার অতীত থেকে খানিকটা আন্দান করতে পারি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×