somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থেকো অপেক্ষমান … অজস্র অশ্রু জলাধারের ওপাশে …

০৬ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভালোবাসা ছিলো আকাশের গায়ে কিছু মেঘেদের নাম…



যদিও আজ মঙ্গলবার তবুও যূথী আজ শ্রাবণকে চিঠি দেবে না । প্রতি মঙ্গলবার যূথী শ্রাবণকে চিঠি লিখে ওর বালিশের নীচে রাখে । শ্রাবণ অফিস থেকে এসেই সোজা বালিশের নীচে হাত ঢুকিয়ে দেয় চিঠির খোঁজে । শ্রাবনের অবশ্য এমন নির্দিস্ট কোনও জায়গা নেই । ও ঘরে আসার কিছুক্ষণ পর থেকেই যূথীকে খুঁজতে শুরু করতে হয় কোথায় চিঠিটা ওর রেখেছে । কোনোদিন প্যান্টের পকেটে পাওয়া যায়, কোনোদিন হয়তো রুমালের ফাঁকে । যূথী কতবার এটা নিয়ে বকেছে ওকে , রাগ করেছে, বলেছে, এরপরে আর খুঁজবেই না চিঠি । শ্রাবণ মুচকি মুচকি হাসবে, বলবে আর করবে না , কিন্তু পরের সপ্তাহে আবার তাই করবে । যূথী প্রতিবারই ঠিক করে এই শেষ, আর খোঁজাখুঁজি করার মধ্যে নেই ও । কিন্তু কোথাও কোথাও ওর ভালোও লাগে, চিঠি পড়ার আগে চিঠি খুঁজে বের করার রোমাঞ্চ ওকে ভালোই টানে । তাই শেষমেশ আবার খোঁজাখুঁজিতে লেগে যায় । ও অবশ্য শ্রাবণের মতো চিঠি পেয়েই হুড়মুড় করে করে পড়ে ফেলে না । রেখে দেয় । বারবার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে । গন্ধ নেয় । এতোদিন হয়ে গেছে, এতোবার চিঠি বিনিময় হয়ে গেছে অথচ এখনও প্রথমবার চিঠি পেয়ে যেমন দুরুদুরু করেছিলো বুকের ভিতরে তেমন করেই বুক দুরুদুরু করে । অবশ্য প্রথমবার অমন বুক কাঁপার যথেষ্ট কারণ ছিলো । শ্রাবণ আর যূথীর বিয়েটা ঠিক হয়েছিলো পারিবারিকভাবেই । প্রথমদিন শ্রাবণকে দেখে যূথীর মনে হয়েছিলো, এই লোকের বিয়ে করার ইচ্ছে নেই । তাকে জোর করে ধরে বেঁধে নিয়ে আসা হয়েছে। কথাটা মিথ্যে ছিলো না । শ্রাবণের ইচ্ছে ছিলো না মেয়ে দেখতে আসার । এরপরের ঘটনা শ্রাবণের ভাষায়, তোমাকে দেখার পরই মাথাটা গোলমাল হয়ে গেলো । যূথী অবশ্য বলে, মোটেও না । তুমি আমার দিকে ঠিক করে তাকাওওনি । বারবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলে, মনে হচ্ছিলো একটা সাপ দেখছো । শ্রাবণ এই শুনে আপ্রান বোঝাবার চেষ্টা করে, না ও আসলে মুগ্ধই হয়েছিলো । যূথীও তাই জানে, কারও মুগ্ধ চোখের দৃষ্টি ওর না চেনার কথা না । কিন্তু সেটা সে শ্রাবণকে জানতে দেয়না । সব কথা ছেলেদের জানতে নেই । দেখে যাওয়ার রাতেই যূথীকে ফোন দিয়েছিলো শ্রাবণ, পারিবারিকভাবে জানানোর আগেই শ্রাবণ বলেছিলো তার মুগ্ধতার কথা । সারারাত সে কথা বলছিলো একাই । কি সব হাবিজাবি । তারপর যখন ভোর হলো, বোকার মতো শ্রাবণ বলে, আরে আজ এতো তাড়াতাড়ি ভোর হয়ে গেলো । শুনে যূথী হাসি আটকে রাখতে পারেনি । বোধহয় সেই মুহুর্তটাতেই প্রেমে পড়া । এরপরে তাদের ঘনিষ্ঠতা হতে সময় লাগেনি । কিন্তু তাদের মতো করে তাদের পরিবারে ঘনিষ্ঠতা হলো না । দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে দুই পরিবারই বেঁকে বসলো , বিয়ে ভেঙ্গে গেলো সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও । যূথী খুব কষ্ট পেলেও নিজে থেকে কিছু বলা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না । কিন্তু শ্রাবণ হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না । সে নানাভাবে চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু বিয়ের সময়ে কেনও জানি সবার ইগোই বড় হয়ে ওঠে । যে মানুষটার কথার দাম পরিবারে কেউই কোনোদিন দেয় নেই এমনকি তার কথাও হয়ে ওঠে মহা গুরুত্বপূর্ণ । শ্রাবণের একার পক্ষে এতোদিক সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল না, তাই দুই পরিবারকেও আর এক করা হয়নি তার । যখন যূথী তার ভাগ্যকে মেনেই নিয়েছে প্রায় এমন সময় একদিন চিঠি আসলো শ্রাবণের । প্রচণ্ড ভয় আর আর নার্ভাস লাগছিলো যূথীর , কি লিখা আছে চিঠিতে । তারপর অনেক সাহস যোগাড় করে একসময় যূথী চিঠিটা খুলল , একবার নয় দুইবার নয় পুরো সাতবার পড়লো সে চিঠিটা । তারপরই সে সিদ্ধান্ত নেয়, যা হবার হবে সে শ্রাবণকেই বিয়ে করবে । বাসর রাতে শ্রাবণ জিজ্ঞেস করেছিলো, কেনও তুমি পরিবারের মতামতের বাহিরে গিয়ে আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে ?? যূথী শ্রাবনের চিঠিটা বের করে ওর হাতে দেয় । শ্রাবণ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, এই চিঠির জন্য ??
- হু । আর এখন এটা তুমি আমাকে পড়ে শোনাবে ।
- পড়ে শোনাবো ??
- হু শোনাবে
শ্রাবণ ওর নিজের লিখা চিঠিটা পড়তে থাকে । ওর বোধহয় খানিক লজ্জাও লাগে । চিঠি শেষ করে ও যূথীর দিকে তাকায় । আবছা অন্ধকারে ও বুঝতে পারে না, যূথীর চোখ অশ্রুতে টলমল করছে ।

বাসর রাতেই ওরা ঠিক করে প্রতি মঙ্গলবার তারা পরস্পরের কাছে চিঠি লিখবে, শ্রাবণ প্রথম চিঠিটা মঙ্গলবার লিখেছিলো তাই । শ্রাবনের কেমন লাগে জানে না কিন্তু যূথীর রোমাঞ্চ এখনও কাটেনি চিঠি নিয়ে । এতদিন হয়ে গেলো অথচ শ্রাবনের চিঠি ওর প্রতিটা শিরা উপশিরায় আনন্দের পরশ বুলিয়ে দেয় । সেটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার জন্যই ও চিঠিটা পড়ে অনেক রাতে । যখন শ্রাবণ সারাদিনের ক্লান্তিতে গভীর ঘুমে বিভোর । ওর পাশে শুয়ে প্রতিটা শব্দ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে যূথী । চিঠিতে, হয়তো নিজের অজান্তেই শ্রাবণ এমন একটা লাইন লিখে ফেলে, যেটা বারবার পড়তে ইচ্ছে করে । পড়তে পড়তে একসময় চোখ ভিজে আসে । সে তখন চিঠিটা রেখে শ্রাবনের বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে । ঘুমের মধ্যেই শ্রাবণ জড়িয়ে নেয় ওকে । আবার চোখ ভিজে আসতে চায় ওর । কিন্তু ও খুব সাবধান থাকে । ভেজা স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে শ্রাবণ ওর চোখ দেখুক ও চায় না । সবকিছু সবাইকে যে দেখাতে নেই । তবে আজকের খুশিটা খুব দেখাতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু যূথী ঠিক করেছে চট করে সেটা দেখানো যাবে না । যাবে না বলে যূথী খুব আয়োজন করছে রাগিয়ে শ্রাবণকে রাগিয়ে দেওয়ার । পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে চিঠি লিখবে না বলে ঠিক করেছে । এমন একটা ভাব করবে যেনও মনেই নেই । শ্রাবণ নিশ্চয়ই হতভম্ব হয়ে যাবে, মনে মনে রেগেও যাবে । কিন্তু কিছু বলবে না । তারপর খাবার টেবিলে বসে ওর মুখটা কেমন হবে ভাবতেই হেসে ফেলল যূথী । কাঁকরোল ভাজি আর ঝিংগা পটল দিয়ে রুই মাছ । সায়ানের সবচেয়ে অপছন্দের তরকারি । এরপরে ও আর চুপ থাকতে পারবে না । নিশ্চয়ই হইচই শুরু করবে । তখনই সুযোগ বুঝে একটা খোঁচা দিতে হবে, ব্যাস কেল্লা ফতে । বাবু মশাই রেগে লাল হয়ে যাবে । রাত একটু গভীর হলে বিছানায় আসবে যূথী । শ্রাবণ তখন ঘুমের ভান করে মটকা মেরে পড়ে থাকবে । যূথী জানে খুব রেগে গেলে শ্রাবণ ঘুমায় না, ঘুমের ভাব ধরে পড়ে থাকে । আর তখনই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে যূথী বলবে গোপন কথাটি , যার জন্য এতো আয়োজন । এরপরে কি হবে যূথী আর ভাবতে চায়না । যেটাই হোক কল্পনা করে সেটা সে নষ্ট করতে চায় না । যূথী গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করে শ্রাবনের অফিস থেকে ফেরার ।


রক্তচোষার আত্মকথন

আমি একজন পেশাদার খুনি, এই কথা বললেই আপনাদের চোখে যে ছবিটা ভেসে উঠবে আমি তেমন নই । পেশাদার খুনি বলতে আপনারা যাদের চেনেন তারা আসলে বই বা সিনেমায় দেখা । কিন্তু বই বা সিনেমায় যারা খুনিদের দেখায় তারা কি কেউ কখনও একজন খুনিকে কাছে থেকে দেখেছে ?? খুনিদের কাছে থেকে দেখে একমাত্র পুলিশেরা । কিন্তু পুলিশেরা তো বই লিখে না । তাই লেখকরা কল্পনার আশ্রয়ে খুনি বানান । সেটাও হয় দুই প্রকার । এক, যারা উপায় না দেখে জীবনে মার খেতে খেতে খুনি অপরাধী হয়ে যায়, যাদের দেখে আপনাদের সহানুভূতি হয় । দুই এক ফোঁটা চোখের পানি পড়াও বিচিত্র না । আর দুই নাম্বার হলো, জাত খুনি যারা কোনও কারণ ছাড়াই খুন করে । এদেরকে আপনারা খুব ঘৃণা করেন । আরেকদল খুনি থাকে যারা দুর্ঘটনার বশে খুন করে বসে যাদের প্রতি আপনাদের দয়াও থাকতে পারে ঘৃণাও থাকতে পারে । সত্যিকথা বলতে কি, আমি এদের মধ্যে কোনওটাই না । আমি মানুষ খুন করি টাকা আর ক্ষমতার জন্য তা নয় । খুন করে আমি আমার লালসা চিরতার্থ করতে চাই বিষয়টা আসলে এমনও না । আবার খুন করেই আমি জীবিকা নির্বাহ করি এটাও সত্যি , সত্যি এটাও যে খুন করতে আমার খারাপ লাগে না। খুনিদের সম্পর্কে আপনাদের আরও ভুল ধারণা আছে । লেখকদের হাতের জাদুতে খুনিদের সাথে একজন মেয়ে থাকবে যে খুনির না রক্ষিতা না বান্ধবী হবে । আমার ক্ষেত্রে এমন কেউ নেই । দুই একজনকে ভালবাসতে ইচ্ছে করেছে , সত্যি বলতে কি তাদের হয়তো আমি ভালোওবাসি, কিন্তু তারা এই জগতের বাসিন্দা হবার মতো নয় । তাদেরকে জোর করে টেনে নিয়ে আনারও প্রয়োজনবোধ করিনি । আর জগতের যারা তারা সিনেমার নায়িকাদের মতো এমন কোনও সুন্দরী না যে তাকে নিয়ে আমার ঘুরতে হবে । জৈবিক তাড়না অনেক বেশি হয়ে উঠলে একটা হোটেলে ঠাণ্ডা করে নিয়ে আসাই ভালো সমাধান । আপনাদের হয়তো ধারণা, খুনি মানেই আগে পিছে লোকজন । আসলে তাও না । আমার মতো পেশাদাররা একাই চলতে পছন্দ করে , যত একা থাকা যায় ততই নিশ্চিন্ত । জানেনই তো এই জগতে খুনিরা ধরা পড়ে সবচেয়ে কাছের মানুষটির কারনে । তাই একটা খুন করলাম তারপর সঙ্গী সাথিদের নিয়ে মদের আসর বসালাম সেটিও সত্য না । বরং সেই সময়েই আমাদের সবচেয়ে সতর্ক থাকতে হয় কারণ খুন করার কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের ধরা পড়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি থাকে । আর এতো টাকা পয়সায় বা কোথায় যে মদ নারী জুয়ার পিছে উড়াবো । পুলিশ আর লুকিয়ে থাকার পেছনে তো আর কম খরচ হয়না । তবে আমি ভালো খেতে পছন্দ করি । খুন করতে যাওয়ার আগে আমি বাসায় নান্নার বিরিয়ানি এনে রাখি । খুনের আগে যে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ বয়ে বেড়াই সেটা পূরণ করার জন্য আমি বিরিয়ানি খাই । হয়তো বিষয়টা হাস্যকর লাগছে, কারণ একটা খুনি খুন করে এসে নান্নার বিরিয়ানি খাচ্ছে বিষয়টা কল্পনা করা অস্বাভাবিক, কিন্তু একেকজনের ভাবধারা একেকরকম । আপনাদের সাহিত্যিকরা খুন করার অনুভুতি সম্পর্কে কি লেখে?? সিনেমায় দেখা যায়, পেশাদাররা অনুভুতি ছাড়াই একেকটা খুন করে যাচ্ছে । বিষয়টা আসলে তাই । একটা সময় খুন, রক্ত এসবে অভ্যস্ত হয়ে যায় বলে হয়তো প্রথমদিকের মতো রোমাঞ্চিত করে না। এসব নিয়ে কেউ ভাবেও না। আমার কিন্তু এখনও রক্তের গন্ধ নেশার মতো লাগে । প্রথম বুলেটটা ঢোকার পর রক্তে কাপড় ভেজার মাঝে যে কিছুক্ষণের বিরতি থাকে ওই সেকেন্ডের উত্তেজনার তুলনা কোনও কিছুর সাথে হয়না। তবে শিকার তীব্র যন্ত্রণায় খাবি খাচ্ছে এই দৃশ্যটাও আমার দেখতে ভালো লাগে না । আমি মুহূর্তে প্রানবায়ু উড়িয়ে দিয়ে আনন্দ পাই । এই কারনে আমি কখনও পেছন ফিরে তাকাই না। অবশ্য কোনও খুনিই তাকায় না, বিবেকবোধের ভয়ে । কি আশ্চর্য । পরিহাস হলেও সত্য যে বিবেকবোধ জেগে উঠবে এর চেয়ে বড় ভয় আর কোনও কিছুতে নেই । আচ্ছা, আমি কি আমার চরিত্রটা ঠিকঠাক বোঝাতে পারলাম?? না পারলেও অবশ্য কিছু করার নেই । আমি খুনি। কবি না । নানা রংচং দিয়ে গল্প শুনাতে আমি আসিনি । আমার এতো সময়ও নেই । আমি বলতে এসেছি, খানিক পরে আমি একটা খুন করতে যাচ্ছি । কন্ট্রাক্টটা গতকালই পেয়েছি । এক বড় কোম্পানির থলথলে শরীরের সিইও । এই ধরনের লোকদের আমার সবসময়ই বিরক্ত লাগে । দেখলেই ইচ্ছে করে আরামপ্রিয় থলথলে চর্বিতে কষে একটা লাথি লাগাই । শ্রেণি বিদ্বেষ বলেন আর অন্যকিছু বলেন, খুনটা করতে আমার ভালো লাগবে সন্দেহ নেই । আমি এখন নান্নার বিরিয়ানির অপেক্ষা করছি । বিরিয়ানি আসলেই আমি বেরিয়ে পড়বো ।


থেকো অপেক্ষমান … অজস্র অশ্রু জলাধারের ওপাশে …

শ্রাবনের খুবই বিরক্ত লাগছে । সে অফিসে মনে মনে গর্ববোধ করতো তার স্যার কখনই তাকে পার্সোনাল কাজে যন্ত্রণা দেন না । আজ সে গর্ব ধুলোয় মিশে গেছে । অফিস ছুটির এক ঘণ্টা আগে থেকে সে তার স্যারের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এখন ঢুকেছে শপিং মলে । শ্রাবণের মনে হচ্ছে, তার বস পুরো শপিং মলটাই কিনে নিবে । অন্যের কাপড়চোপড় কেনা দেখা কি যে বিরক্তিকর । তার উপরে আজ মঙ্গলবার । চিঠি দিবস । কখন বাসায় যাবে কখন চিঠিটা পড়বে এই ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠছে ও । যূথীর শরীরটাও খারাপ । অস্থিরতা কেবল বাড়তে থাকে । স্যার ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার মনে হয় দেরি হয়ে যাচ্ছে । শ্রাবণ হাসির মতো মুখ করে বলল, না না স্যার ঠিকাছে । আর মনে মনে কষে একটা চড় লাগালো বসের গালে । ব্যাটা উজবুক, আজাইরা ঘুরছিস আর বলিস দেরি করে দিলাম । মানব জাতির সমস্যা হলো, তারা যা চায় তা বেশিরভাগ সময়েই করতে পারে না । তাই যখন বস বললেন, চলুন বের হই তখন শ্রাবণের মনে হলো এমন মধুর কথা সে বহুদিন শোনেনি । বলতে গেলে লাফিয়ে লাফিয়েই বের হয়ে এলো শ্রাবণ । কিন্তু শপিং মলের দরজায় দাঁড়াতেই তার কেমন খারাপ লেগে উঠলো । শ্রাবণ ঠিক বোঝাতে পারবে না অনুভূতিটা , কেমন জানি বুকের ভিতরে ফাঁকা আর মুখের ভিতরে তিতা একটা ব্যাপার, কেনও এমন লাগলো তাও বুঝলো না, কিন্তু কেমন জানি থমকে গেলো সে । পরের মুহূর্তে চোখের সামনে সানগ্লাস পড়া যুবকটাকে কোমরে হাত দিতে দেখেই মাথার ভিতরে কে যেনও বলে উঠলো, বিপদ ! বিপদ !





থলথলে চর্বির মাঝবয়সী লোকটাকে চিনতে কষ্ট হলো না । ঠেলেঠুলে বের করে আনলো শরীরটা শপিং মলের দরজা দিয়ে । আমি কোমর থেকে পিস্তলটা বের করেই গুলি করে দিলাম । তারপর সেই রোমাঞ্চকর অপেক্ষা । বুকের মাঝখানটা লাল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে । আমার শরীরে পরম আবেশে পুলকিত হয় । এইবার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরেকবার পিস্তল তুললাম । হঠাৎ পাশের একটা ছেলে চিৎকার দিয়ে উঠলো, “স্যারররররর” । চমকে গিয়ে আমার লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো । পরের গুলিটা চলে গেলো পাশের ছেলেটার গলা ভেদ করে । আসেপাশের লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে । চারপাশে ভীত মানুষের হুড়োহুড়ি । আর দেরি করা যায়না । আমি দ্রুত মোটাটার দিকে আরেকটা গুলি করলাম । তারপর লাফিয়ে বাইকে উঠলাম । কেনও যেনও পাশের ছেলেটার কথা মনে হলো । পাশের ছেলেটা কি বেঁচে আছে ?? বেঁচে না থাকলেই আমার সুবিধা, যদিও তাকে গুলি লাগাটা পুরোটাই দুর্ঘটনা, আমার ভুল, তবুও মনে হলো, কেনও যে এইসব আবেগি ছাগলেরা বোকার মতো কাজ করে! এই প্রথমবারের মতো খুন করার পর আমার পেছনে তাকাতে ইচ্ছে হলো । আমি ইচ্ছেটাকে পাত্তা দিলাম না । একজন অপরাধীর যেদিন বিবেকের পুনর্জন্ম হয় সেদিনই তার মৃত্যুদণ্ড লিখা হয়ে যায় । আমি বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম ।







শ্রাবণ আসছে না কেনও?? যূথীর দুশ্চিন্তা কেবলই বাড়তে থাকে । ও তো কখনই এতো রাত করে না । ফোনও ধরছে না । যূথী বারান্দায় দাঁড়িয়ে টানা অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে , যেনও ও তাকিয়ে থাকলেই আঁধার ফুঁড়ে বের হয়ে আসবে শ্রাবণ । যূথী তখনও জানে না আরও কিছুক্ষণের মধ্যে ওর বাড়ি পুলিশ আর সাংবাদিকে ভরে উঠবে । ও জানে না, ওর কান্নাভেজা মুখ উঁচু করে দিবে টিভি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনের দাম । ওর শব্দহীন ছবিটা বাড়িয়ে দিবে দৈনিক কাগজের কাটতি । প্রতিযোগিতা হবে কে কত আবেগমথিতভাবে যূথী আর শ্রাবনের গল্প বলতে পারে । পাঠক, দর্শকের আবেগে টোকা দিতে পারলেই ব্যবসা । প্রতিযোগিতা হবে আশ্বাসের , প্রতিশ্রুতির । সেখানে যোগ দিবে মন্ত্রি সমাজ থেকে শুরু করে সবচেয়ে দূরের আত্মীয় পর্যন্ত । শেষমেশ সব প্রতিশ্রুতিই আবেগ ফুরালেই ভেসে যাবে । পুলিশ ছুটবে নতুন অপরাধের পেছনে, সাংবাদিকরা আবার পাবে কোনও আবেগে দলিত গল্প, আবার কিছু আশ্বাসের বন্যা ধেয়ে আসবে যেখানে যতদিন স্বার্থ টিকে থাকবে । এমন নিত্য ছুটে চলা অফুরান গল্পের ভিড়ে কেউ যূথীকে খুঁজবে না । জানবে না মঙ্গলবারগুলো কিভাবে কাটে যূথীর । কেউ জানবে না খুব রাতে একা লাগলে গুটিসুটি মেরে না ঘুমানোর হাহাকার । বছর ঘুরলে কেউ ফলোআপ করবে হয়তো । করলেও একই ব্যাপার, না করলেও তাই । যে দীর্ঘ লড়াই যূথীকে করতে হবে , সেটা তার একার নিঃসঙ্গ যুদ্ধ । তার জয় পরাজয়ের খোঁজ আমরা রাখবো না, আমাদের রাখার প্রয়োজনও নেই । কিন্তু এসবের কিছুই জানে না যূথী । সে জোর করে সব আজেবাজে ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখতে চায় । ভাববে না ভাববে না করেও সে কল্পনা করে, কি করবে শ্রাবন যখন যূথী তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলবে, এই যে বাবু সাহেব, আপনি যে নিজেই একটা বাবুর আব্বু হচ্ছেন তা কি জানেন ?? জানেন কি কেউ আপনার ভালবাসায় ভাগ বসাতে আসছে ?? হুমমম??





জীবনের গল্পগুলো কল্পনার মতো সুন্দর হয়না কেনও কে জানে !


( উৎসর্গ ঃ সম্পূর্ণ অকারনে যাদের বয়ে বেড়াতে হয় অসংখ্য অশ্রুর ক্ষত চিহ্ন তারা আবার স্বপ্ন দেখুক, ভালো থাকুক ভালো থাকার মতো )

১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×