লিলিথ, আমি এক ভবঘুরে।
তোমার শহরের শেষ ট্রেনটা মিস করেছি। বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চিতে বসে সিগারেটের ছাই ফেলতে ফেলতে বুঝলাম, আমার আর কোথাও ফেরার নেই। ক্যাম্পাসের দিনগুলো ফুরিয়েছে, সেমিস্টার পরীক্ষার রাতজাগা, করিডোরের তর্কবিতর্ক, আড্ডার নীল ধোঁয়া—সবই পেছনে ফেলে এসেছি। অথচ তুমি এখনো আমার ভেতর বহমান, ঠিক যেন মাল্টিভার্সের অন্য কোনো মাত্রায় আটকে থাকা কোনো পুরোনো ঢেউ।
আমি প্রেমিক, অথচ আমাকে ছোঁয়া বারণ। আমার প্রেম রেলস্টেশনের বাইরে থাকা হকারের বাদামের মতো- কেনার আগেই ট্রেন ছেড়ে যায় পরিচিত প্ল্যাটফর্ম। আমি জানি লিলিথ, তুমি আমার জন্য করুণা ছুঁড়ে দিচ্ছো, যেমন ল্যাম্পোস্টের আলো রাস্তার ফকিরের গায়ে পড়ে, কিন্তু উষ্ণতা দেয় না। তুমি পৌরাণিক দেবী, গ্রীক কিংবা নর্ডিকের কোনো হারানো চরিত্র, যার হৃদয়ে প্রেম এসিডের মতো জ্বালাময়ী, অথচ রহমতের মতো মোড়ানো আলো।
আমাদের গল্প সর্বনাশের। প্রেমে আমরা পুড়িনি, বরং ধীরে ধীরে ক্ষয়ে গেছি। আমার হৃদয় মহাকাশের কৃষ্ণগহ্বর, যেখানে ঢুকে গেছে পুরোনো স্বপ্ন, ফেলে আসা রাত, করিডোরে হেঁটে যাওয়া তোমার নীল শাড়ির আচল। আমি জানি, তুমি থেকে যাবে, শহরের আলোয় মিশে যাবে, আর আমি? আমি হয়তো কোনো ভবঘুরে, মাঝরাতে ফাঁকা রাস্তায় নিজের ছায়ার সঙ্গে কথা বলবো।
তুমি কি ভাবো, আমি দূরে সরে যাবার অজুহাত খুঁজছি? না, লিলিথ। আমি শুধু বাস্তব আর কল্পনার সীমানা মুছে ফেলেছি। সময়ের এক ডাইমেনশনে আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলাম, অন্য ডাইমেনশনে হয়তো দুজনেই নামহীন পথিক।
তুমি কি আমাকে মুক্তি দিলে? কী অদ্ভুত! হাওয়ায় একটুকরো শীতলতা টের পাচ্ছি, যেন মৃত্যুর দুয়ারের ওপাশে নতুন কোনো মহাবিশ্ব অপেক্ষা করছে। আজ আমি আসি, লিলিথ। হয়তো অন্য কোনো এক মাল্টিভার্সে আবার দেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭