আল্লাহপাক ব্যবসাকে হালাল করেছেন। আর আমরা সেই ব্যবসার সাথে যুক্ত করেছি হারামকে। সবই ফাঁদ আর সবই মায়া। এই যেমন আমি। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা শিখিয়ে আসছেন ভালো ছেলে হতে হবে। ভালোই ছিলাম। ক্লাশ এইট পর্যন্ত বেশ ভালো ছিলাম। খারাপ কাজ বলতে কৈশোরের প্রথম প্রেমে পাগলপারা হয়ে একটি কিশোরীর মুখ সর্বক্ষণ মনে এঁকে রাখতাম, এই। ফলাফল পড়াশোনা চাঙে এবং পরীক্ষার ফল একদম ভূমিতে। কোনরকমে বৃত্তির দেখা পেলেও পা হড়কালাম ক্লাশ নাইনে।
কোন এক শুভক্ষণে আমার নজর পড়লো এক অশুভ বইয়ের ওপর। এতকাল খারাপ বই বলতে বুঝতাম ক্লাশ সেভেনে পড়ার সময় লুকিয়ে পড়া রাশিয়ান লেখক ভ্লাদিমির নভোকভের 'সম্রাট সুন্দরী ও ক্রীতদাস'। কিন্তু এবার যে রচনার স্বাদ পেলাম তাতে আমার ট্যারা চোখ সোজা হয়ে যাবার যোগাড়। গল্পের সাথে আবার রঙ্গীন ছবি। আহা, মধু! মধু!
আমি পড়ে গেলাম সেই মধুর ফাঁদে। সহপাঠীদের মনের বয়স আমার চাইতে অনেক আগেই বেড়ে গেছে। তারা তখন অনেকেই মধুব্যবসায়ী। ঐযে বলেছিলাম সবই ফাঁদ আর সবই মায়া। মায়ায় জড়িয়ে পড়লাম আমিও।
সেই আমলে আট আনায় আইসক্রিম, আচার আর এক টাকায় এক প্লেট চটপটি আর ফুচকা পাওয়া যেত। তাই মধুর সন্ধানে পাঁচটাকার বিনিময়ে ‘চটি বই’ ভাড়া নেওয়া বেশ বাড়াবাড়ির মতই ছিল। অনেকে যখন সরাসরি ডিপোতে গিয়ে ২৫ টাকা দিয়ে ‘চটি বই’ এর মালিকানা লাভ করছে তখন আমি তা ভাড়া নেওয়ার রসদ খুঁজছি। হায়রে বিধি!
ভালো ছেলে হিসেবে সুনাম ছিল তাই দুদিনের জন্য বিনা ভাড়ায় ব্যক্তিগত সংগ্রহে ‘চটি বই’ নিয়ে তার পাঠক হতে আমায় বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। সে এক অন্য জগৎ। কিন্তু কথায় আছেনা- লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। পাপবোধ না ছুঁলেও পাপ ছুঁয়ে গেল আমায়।
একদিন ক্লাশে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্লাশটিচারের অভিযানে ধরা পড়লো চটি ব্যবসায়ীরা। রাঘব-বোয়ালরা সব পাড় পেয়ে গেলেও আমাদের মত কিছু চুনোপুটি হলাম ষড়যন্ত্রের শিকার। অবৈধ কার্যক্রমের প্রতিবাদ কেন করলামনা এই অভিযোগে পৃষ্ঠদেশে এক বিশাল দাগ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। গোসলের সময় পানির ছোঁয়া পেতেই যে জ্বলুনি শুরু হলো তাতে ‘চটি বই’ এর নাম মগজ থেকে বেড়িয়ে যাবার কথা। কিন্তু আমার হলো উল্টোটা।
ঠিক করলাম পড়াপড়ির মাঝে আর নাই। এবার করাকরি। আই মিন রচনা। বাৎসায়ন মুনি যদি কোনরকম বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়াই কামশাস্ত্র রচনা করে ফেলতে পারেন তবে আমার জন্য চটি রচনা আর এমন কী কঠিন কাজ? ঘনিষ্ঠ সহচরেরা তো আমার প্রতিভায় যারপরনাই মুগ্ধ। রসময় গুপ্ত সাহেবের চাইতে নাকি কোন অংশে কম ছিলামনা।
পুরোনো এক বইয়ে অনেকদিন পর এরকমই একটুকরো কাগজ পেয়ে মনে হলো সত্যি খারাপ কাজে আমিও মন্দ ছিলামনা।