আমার নতুন বাসায় যেতে হলে বেইলি রোড হয়ে আসতে হয়,সেখানে একটা বইয়ের দোকানের ক্যাপশনে চোখ আটকে থাকে, তা হল “ তবুও বই পড়ুন”।
অভ্যাস বলি, শখ বলি আর স্বভাবই বলি, বই পড়া হল সবচেয়ে মূল্যবান গুণের একটি ।রূপকথার পঙ্ঘিরাজ, স্বপ্নপুরী, মেঘের রাজ্যে পরীর বাসা, ডাইনী আর রাক্ষসের দল শিশু মনকে যেন আলাদীনের জাদুর চেরাগ পাইয়ে দেয়, সিন্দাবাদ হয়ে সে ভেসে চলে সমুদ্রে সমুদ্রে। ইশপের উপকথা গল্পচ্ছলে তাকে মূল্যবোধ শিখিয়ে তোলে।
কৈশোরের অনুসন্ধানী হৃদয়ের অতি উপাদেয় খাবার হল শারলক হোমস, মাসুদ রানা, কখনো মন ডুবে যায় আইজ্যাক আসিমভের ফিকশনে কিম্বা বেড়িয়ে পড়ে জুল ভারনের সাথে পৃথিবী সাথে ভ্রমনে।
মৈত্রেয়ী দেবীর ণ হন্যতে, মির্চা এলিয়াদের লা নুই বেঙ্গলী,নিমাইয়ের মেম সাহেব, প্রাক যৌবনের আকর্ষিত প্রেম আর চুপি চুপি আবেগের প্রথম উষ্ণ চুমু । মনে হবে আহারে! কবে প্রেমে পড়ব, কে আসবে জীবনে? সে কে কে ?
অথবা যদি আরেকবার বুক ডিব ডিব করে উঠত! আরেকবার প্রেমে পড়তে পারতাম!
রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ এ দুই সত্তার যে মানসিক দ্বন্দ্ব, পার্ল এস বাকের গুড আর্থের চরিত্র গুলোর যে যাপিত জীবন, কিম্বা হেরমান হেসের সিধবার্থ কি জীবনের মানে সম্পর্কে আরেকবার ভাবাবে না?
সুনীলের পায়ের তলায় সর্ষে যে কারো অলস দুপুর গুলোকে নিয়ে যাবে বন পাহাড়ি টিলায়, কিম্বা জ্যোৎস্না স্নাত নদীর বুকে।
আবার রাশিয়ান লেখকদের লেখা ছড়িয়ে দিবে মিছরির মত বরফ, হাড় কাঁপানো হিমেল বাতাস, সামনে থাকা সবুজ গাছ গুলোকে মনে হবে পাতাঝরা, ধূসর বিবর্ণ।
কাহলিল জিব্রানের প্রফেট তা ত আপনার জীবনদর্শনেরই অন্য নাম, পড়লে মনে হবে আরে ! এই বইটাই ত খুঁজেছি এত দিন!
জীবনানন্দের কবিতারা, হিজলের গাছে ঘেরা বনের পাশ দিয়ে, নিয়ে স্রোতের শব্দ ঘেরা এক নদীতে, সাঁতার কাটা হাঁস, নৌকার পালের ছায়ায়, টেনে নেবে এক সবুজ মায়ায়।
লেখকরা তাদের জীবনের সেরা অনুভূতিগুলো একত্র করেন দুই মলাটের মাঝে যাকে আমরা বই বলি। সে নীরব ভাষা আপনার সাথে এত কথা বলবে এত কথা বলবে যে নিজেকে কখনো একা মনেই হবে না।
সে শব্দগুলো আপনাকে কখনো ডাইনী হত্যাকারী রাজকুমার বানাবে, কখনো ঘোড় সওয়ারী বীর, বুদ্ধিমতী প্রেমিকা, জ্ঞানী বৃদ্ধ, চিন্তাশীল বিজ্ঞানী। কখনো নায়ক কখনো বা ভিলেন।
সফল হোক বইমেলা ২০১৫ । আমরা সাধারণত পরিচিত লেখক দের বই কিনি। এতে করে আমরা তিনটা কাজ করি।
১। নতুন লেখক বের হয়ে আসার পথ নষ্ট করি ।
২। নতুন অভিজ্ঞতা, অনুভূতি আস্বাদনের পথ বন্ধ করি।
৩। তৃতীয়টি মারাত্মক , ভাষা সাহিত্যের বিকাশের পথ রুদ্ধ করি ।
তাই প্রতিবার বই মেলায় অন্তত দুজন নতুন লেখকের বই কিনুন। একটা বিষয় দারুণ সত্য যে পৃথিবীর সব চেয়ে খারাপ বই ও অন্তত একটা ভাল লাইন আপনাকে আস্বাদন করতে দেবে। সব চেয়ে অপ্রয়োজনীয় বই ও মগজকে একবার নাড়া দিবে। তাই এবার শ্লোগান হোকঃ
" আবারও মেলায় যাই,
নতুন হাতের নতুন বই চাই"
বইয়েরই ক্ষমতা আছে অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতে বিচরণের।তাই অনর্থক শো পিস প্রসাধনী, কুর্তা না কিনে আসুন বই কিনি। উপহারে থাকুক শুধুই বই।
প্রতিদিন চায়ের কাপের পাশে বই থাক, মনিটরের পাশে থাকুক বই, বই থাকুক বাথরুমে, জ্যামের বাসে, কিবা যাত্রা পথে।
ইলেকট্রিক বিলের লাইনে দাড়িয়ে আপনার হাতে একটা বই থাকতেই পারে। সময়কে উপভোগ করতে চান বা সময় থেকে পালিয়ে থাকতে চান বই হোক শ্রেষ্ঠ সঙ্গী।
আসুন আবার বই পড়ি।
আরেকটা বই পড়ি।