ছবি কুটির শিল্প মেলা থেকে তুলেছিলাম
বেঁচে থাকা মানে কি?
গতকাল দেখলাম সে হেঁটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে,
কথাও বললাম—
"কেমন আছেন?"জবাবে
বললো, "ভালো আছি।"
আজ থ হয়ে শুনি,
সে আর এই ভুবনে নাই।
এত সহজ কেন মানুষের মৃত্যু?
এইভাবে কথা বলতে বলতেও
মানুষ চলে যায়।
যে মুখে ছিল হাসির ঝিলিক,
সেই মুখ আজ নিশ্চুপ, স্থির।
কিছুক্ষণ আগেও ছিল প্রাণের স্পন্দন,
এখন শুধুই নিস্তব্ধতা—
এই নিঃশব্দ প্রস্থান,
এত সহজে,
এত দ্রুত কেন ঘটে যায়?
জীবন যেন একটা নাটাইয়ের সুতো,
ছিঁড়ে গেলেই ঘুড়ি উড়ে যায়,
চিরতরে অজানায়।
কিছুই বুঝে ওঠার আগেই।
বেঁচে থাকা মানে কি শুধু মৃত্যুর
জন্য অপেক্ষা নয় কি?
আমাদের ভুলের দুনিয়া
রিকশাওয়ালার জ্ঞানী জ্ঞানী কথা শুনে আমি বিস্মিত।
যে রিকশায় বসে আছি,
তার ঠিক পেছনের,পাশের,সামনের—
সব রিকশা থেকেই উঠে আসছে নানা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা
সিগন্যালে আটকা পড়ে।
আমার রিকশাওয়ালা হঠাৎ বললো, "ধরেন,
আমাদের মাসিক ইনকাম ২০-২৫ হাজার টাকা,
কখনো কখনো ৩০ হাজারও হয়।
কিন্তু পকেটে টাকা থাকে না। জানেন কেন?
কারণ বাংলাদেশের অর্ধেক রিকশাওয়ালা
সকালবেলা রিকশা নিয়ে বের হয়,
সারাদিন গাধার খাটুনি খাটে,
তারপর যার যার গ্যারেজে ফিরে যায়
মধ্যরাতে।
এরপর কী করে জানেন?
হাত-মুখ ধুইয়া, খাইয়া-দাইয়া, জুয়া খেলতে বসে।
প্রত্যেকটা গ্যারেজে একই দৃশ্য।
সাথে থাকে গাঁজা।
সারাদিনের কামাই,
তারপর মাস শেষে পকেটে কিছুই থাকে না।
এ কারণেই রিকশাওয়ালারা গরিব।"
আমি শুনে বললাম, "আপনার টাকা থাকে তো?
রিকশাওয়ালা হেসে বলে, আমার টাকা আমি জমিয়ে রাখি।
আমার পরিবার আছে।
আমার মেয়ের পেছনে ধরেন, প্রতিদিন ১০০ টাকা;
আমি যদি জুয়া খেলি, গাঁজা খাই,
তাহলে আমার মেয়ের অভাব হবে।
সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।"
রিকশাওয়ালার এই কথা শুনে
আমার মন নরম হয়
পাশের জন বলে উঠে, আপনি কী করেন? চাকরি?"
বললাম, "হ্যাঁ"
সে বলে, "চাকরি করলে লাভ নাই,
ঘুষ না খাইলে চাকরি করলে টাকা নাই।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি, ইনিও কি গাঁজা খায়?
রাতের বেলা জুয়ার আসরে বসে?
এত জ্ঞান নিয়ে!।
আমরা বুদ্ধির খেলায় ফেঁসে আছি।
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, সবাই জ্ঞানী।
যে যা বলে, সেটাই ঠিক,
যেন কোনো ভুলের জায়গাই নেই।
অথচ এই ভুলের দুনিয়ায় আমরা হারিয়ে যাই
প্রতিনিয়ত।
নিঃশব্দ আশ্রয়
তুমি যা শুরু করেছ তাতে অন্তরের চাওয়া পাওয়া গুলো,
কনস্ট্রাকশনের শব্দের মতন বিদঘুটে শব্দে হারিয়ে যাচ্ছে।
বিরক্ত হয়ে কিছুক্ষণ পর পরই ভাঙছে নীরবতা,
চার দেয়ালে বন্দী দীর্ঘশ্বাস ঘুরে ফিরে বারবার।
ক্লান্ত পাখি, খুঁজে ফেরে আশ্রয়,
আকাশটা দেখে একবার,
তারপর ডানা ঝাপটে নেমে আসে
বুকে জমে থাকা অনন্ত ক্লান্তি নিয়ে।
শব্দেরা এলোমেলো,
অনুভূতিগুলোও তাই,
তবুও,
হৃদয়ের গভীর থেকে যে দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে,
তার কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই,
যেন একি ঘূর্ণির ভেতর হতাশা।
আসলে কি চাই না
আসলে কি অসহ্য
আসলে কোন কোনে
হারিয়ে গেছে আরাম
কোথায় লুকিয়ে আছে শান্তি।
শুধু প্রতিধ্বনি, শুধু ব্যস্ততা,
ভ্রান্তির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে
ভুলে যাচ্ছি কিভাবে থামতে হয়,
শুনতে হয় নীরবতা।
শূন্যতায় লুকিয়ে আছে
ভালো ব্যবহার মিষ্টি কথা,
কিন্তু তুমি এতটাই ডুবে আছো
এলোমেলো শব্দের কোলাহলে,
আমি হারিয়ে ফেলছি দিন দিন নিঃশব্দ আশ্রয়।
অলস জীবন
এইখানে এইভাবে বসে থাকা যাবেনা আর
একটা কিছু করতে হবে
একটা কিছু করা দরকার।
এই কথা ভাবার পর
একইভাবে কেটে গেছে দশটি বছর।
তারপর আবার একদিন;
নতুন করে মনে হল-
এইভাবে একভাবে বসে থাকা
মানবো না আর;
একটা কিছু করতেই হবে।
তারপর
আবার ঘুম আবার রাত্রি আবার ভোর
আবার ভয় আবার চিন্তা
আবার চেষ্টা নতুন ভাবে বাঁচার,
আবার কেটে গেল
একে একে দশটি বছর।
আবার একদিন মনে হল
এইখানে এইভাবে একভাবে
বসে থাকা যাবে না আর।
শুধু শুধু বসে থাকা রীতিমত অন্যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৩