এখনো ঠিকমতো আলো ফুটেনি। আজ ননাবিরা চলে যাচ্ছে নিজের বাড়ি ছেড়ে। জন্মের পর থেকেই ননাবি এই এখানে তার পরিবারের সাথে বাস করে আসছে। ননাবি আর তার ছোট দুই ভাইবোন বারেং আর চিক্কোবি ও এই বাড়িটাতেই জন্ম নিয়েছে। কয়েক বছর আগে তাদের আজু নানু ও এই বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। কত স্মৃতিই যে জড়িয়ে আছে এই বাড়িটা নিয়ে। ঘরের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি ইঞ্চি, প্রতিটি সেন্টিমিটারই ননাবিদের স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। ননাবির মা কাঁদছেন। যুগের এ বেশি সময় ধরে সংসার করেছেন এই বাড়িটাতেই। আজ তাদের এটা ছেড়েই চলে যেতে হচ্ছে।
বারেং আর চিক্কোবির এখনো ঠিকমতো বোঝার বয়স হয়নি। তারা বুঝতে পারলো না কেন তাদের মা কাঁদছেন। তবে তারাও মন খারাপ করেছে, তা অন্য কারনে। এখান থেকে চলে গেলে তাদের আর কেও চকলেট বিস্কুট দিবেনা। কেও তাদের ছবিও তুলবেনা আর প্রতিদিন এত গাড়ি তারা আর দেখবেনা।
ননাবিরও মন কাঁদছে। বুকের মাঝে কেমন জানি করছে। ননাবি জানেনা তারা কোথায় যাচ্ছে। তার বাবা বলেছিলেন অনেক দূরে। গ্রাম থেকে দূরে, এমনকি দেশ থেকেই দূরে। আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি ননাবি। গলাটা ধরে আসছিল তাই সে ঘরে চলে যায়।
ননাবির মা উঠানের একপাশে দাড়িয়ে আছেন। তার পালন করা মুরগিগুলো এতক্ষণে উঠে উঠানে ঘুরে বেড়াতো। ডাক দিলেই চলে আসতো। কত মায়াই তো জন্মেনিল তাদের ঘিরেও। কিন্তু গতকালই ননাবির বাবা সেগুলো বাজারে বিক্রি করে এসেছে। তার টাকা নিয়েই তারা আজ এত দূরে যাচ্ছে। আবার নতুন করে জীবন, সংসার শুরু করতে।
ননাবি ঘরের পেছনের মাচাং এ বসে আছে। বাড়িটার প্রতিটি ইঞ্চিই যেন তাকে বলছে, "যেওনা ননাবি, আমাদের ছেড়ে যেওনা।"
ননাবিদের আশেপাশের অনেক গুলো বাড়িই আজ খালি পড়ে আছে। সবাই ননাবিদের মতই চলে গেছে গ্রাম থেকে দূরে, অনেক দূরে।
বাড়িটাকে নিয়ে, গ্রামটাকে নিয়ে স্মৃতিগুলো মনে পড়লেই মন কেঁদে ওঠে ননাবির। ক বছর আগেও তাদের সোনার সংসার ছিল। কত ভালই না ছিল তারা। হঠাৎ সব বদলে গিয়ে সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেল।
আবার কিছু ভূলতে না পারা স্মৃতি মনে পড়তেই ননাবির এক্ষুণি চলে যেতে ইচ্ছে করে। এইতো কয়েক মাস আগে তাদের পাশের বাড়িটার চিত্তিবোকে গাড়ি চাপা দিয়ে পঙ্গু বানিয়ে দিয়ে চলে গেল একদল মানুষ। আর শহর থেকে আসা লোকদের ননাবিদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, বাজে কথা বলা এসব মনে পড়তেই ননাবির শরীর শিরশির করে ওঠে।
একটু পরেই সূর্য উঠবে।একটু আলো ফুটলেই তারা রওনা দিবে। তারা চলে যাবে আজ অচেনা জায়গায়। নিজের বাড়ি থেকে দূরে, গ্রাম থেকে দূরে, স্মৃতি থেকে দূরে............
বিদ্রঃ গল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে লেখা। তবে গল্পটির সকল চরিত্র বা কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭