সেদিন গিয়েছিলাম ফটোকপির দোকানে... কাজটা বড়, বেশ সময় লাগবে... আমি বিরক্ত হয়ে মোবাইলে গেইম খেলছিলাম... এমন সময় এক মেয়ে আসল দোকানে... হাতে কাগজ, মামাকে বলল, "মামা, কম্পোজ করে দিতে হবে... " মামা বলল, "লোক নাই, পরে আসেন..."
মেয়ে বলল, "মামা আমার এখনই লাগবে... প্লিইইইজ একটু করে দেন..." সুন্দরী মেয়েরা যখন লম্বা করে প্লিইইইইজ বলে তখন হিমালয়ের বরফ পর্যন্ত গলে যায়... কিন্তু ফটোকপি মামা গলে গেলেন নাহ, তিনি দ্বিগুণ কর্কশ কন্ঠে বললেন, "বললাম না, এখন দেয়া যাবে নাহ, পরে আসেন... "
আমি মনে মনে মামাকে গালি দেই, খেয়াল করে দেখলাম, দোকানের একটা কম্পিউটার খালি আছে... তার মানে ঐ কম্পিউটারে যে কাজ করে সে এখন অন্য কোথাও গেছে... আমি হবু সি,এস,ই ইঞ্জিনিয়ার, ফেসবুকে চ্যাটিং আর মাঝে মধ্যে কোডিং করার সুবাদে টাইপিং স্পিড মাশাল্লাহ কম নাহ... মনে মনে ভাবলাম, আইসসালা এই তো সুযোগ হিরু হওয়ার...
আমি ফটোকপি মামাকে বললাম, "মামা, আমি টাইপিং পারি, আমি উনাকে করে দিচ্ছি..." মামা কিছু বললেন নাহ, আমি কাজ শুরু করে দিলাম... ইংলিশ টাইপ, আমার জন্য কোনো বিষয়ই নাহ... পার্ট নিয়ে কি-বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে টাইপ করার চেষ্টা করছিলাম... মাঝে মধ্যে D এর জায়গায় F হয়ে যাচ্ছিলো, আমি ভয়ে ছিলাম, Duck এর জায়গায় কখন না আবার Fuck টাইপের ব্যাপার হয়ে যায়...
মাঝে মধ্যে ভুল হয়ে যাচ্ছিলো, মেয়েটা বেশ উত্তেজিত হয়ে আমাকে ঠিক করে দিচ্ছিলো... আমি ইচ্ছা করে আরও বেশি করে ভুল করছিলাম... মেয়ে তার কিন্নর কন্ঠে বলছিল, "ভাইয়া, এটা তো এটা না... এটা তো ওটা..." আমি মিষ্টি করে হাসি দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছিলাম...
টাইপিং করা শেষ হল, মেয়ে মিষ্টি করে হাসি দিলো, হাসির জবাবে আমিও হাসি দিলাম... কোনো এক বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেলো, ভাইয়া বলেছিলেন, মেয়েদের হাসির দুই প্রকারের মানে আছে, একঃ সে তোর প্রেমে পড়ে গেছে, দুইঃ সে তোর প্রেমে পড়বে...
মেয়ে টাকা দিতে চাইলো... আমি বললাম, “থাক লাগবে নাহ, আমি তো আর এই দোকানের কেউ নাহ”... আমি ভাবছিলাম, সময় এসে গেছে, এখন পরিচিত হওয়া যাবে, ফোন নাম্বারের বিনিময় ঘটবে, ভাগ্য ভালো থাকলে দৃষ্টি বিনিময়ও হতে পারে, তারপর কফি শপ, কিংবা কম করে হলেও এক কাপ চা...
কিন্তু কীসের কী, আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা বলে উঠল, “থ্যাংক ইউ মামা, আপনি না থাকলে আমার কী যে হত...” বলেই মেয়েটা তার কাগজ নিয়ে হেঁটে চলে গেলো...
আমি তাকিয়ে থাকি, সে চলে যায়... স্বপ্ন, স্বপ্ন চলে যায়... ফটোকপি মেশিন থেকে শব্দ আসছে, বলছে, “থ্যাংক ইউ মামা... ”