মূলঃ হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেন
ভাষান্তরঃ সাইফুল্লাহ সাইফ
ক্যারেন খুব গরীব মেয়ে । তার জুতা নেই, সে খালি পায়ে হাঁটে । একদিন এক মহিলা তাকে রাস্তায় অসহায়ের মত পড়ে থাকতে দেখে । ক্যারেনকে দেখে তার খুব মায়া হল । তিনি ক্যারেনকে দত্তক নিলেন । তারপর তাকে সুন্দর একজোড়া লাল জুতা কিনে দিলেন ।
আরও একটু বড় হলে ক্যারেন তার প্রিয় লাল জুতোজোড়া পরে গির্জায় যেতে চায় ।
গির্জায় গিয়ে উপাসনার সময় ক্যারেন শুধু তার লাল জুতা নিয়েই ভাবে । উপাসনা শেষে পালক মহিলাটি ক্যারেনকে ধমকের স্বরে বলেন যে, ক্যারেন একজন উঠতি বয়সী খ্রিষ্টান, গির্জায় জুতা পরে যাওয়া তার ঠিক না ।
পরবর্তী রবিবারেও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ক্যারেন তার লাল জুতা পরে নেয় । এবারো উপাসনা কালীন পুরো সময়টা ক্যারেন তাকে দেখতে কেমন লাগে শুধু সেসব নিয়েই ভাবে ।
তারপর গির্জা থেকে বের হয়ে আসার সময় তার জুতাগুলো যেন নিজেরাই নাচতে শুরু করে দিল ।
ক্যারেন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বাড়ি ফিরছিল । গাড়ির ভেতর ক্যারেন একজন বয়স্ক মহিলাকে খুব নির্দয়-ভাবে লাথি মারলে গাড়োয়ান তার পা থেকে জুতোজোড়া খুলে ফেলে । বয়স্ক মহিলাটি অসুস্থ হয়ে যায় । তখন অসুস্থ মহিলাটির সেবা করা ক্যারেনেরই দায়িত্ব, কিন্তু সে তা না করে একটি বল নিয়ে ব্যস্ত থাকে । একজন বয়স্ক রোগীর সেবা করার কথা ভুলে গিয়ে ক্যারেন আবার তার জুতোজোড়া পরে নাচতে চায় ।
ক্যারেন নাচতে শুরু করলে এবার যেন তার জুতাগুলো আপনাআপনি জীবন্ত হয়ে উঠে । তারা নাচতে নাচতে ক্যারেনকে একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় । ভয়ে সে তার পা থেকে জুতা খুলে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু জুতাগুলো তার পায়ের সাথে পুরোপুরি আটকে যায় । সে মাঠে ও ঝোপে, বৃষ্টিতে ও রোদে বহুদিন ধরে নাচতে থাকে ।
সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে নাচার সময় সে একটি পরী দেখতে পায় । পরীটি তাকে বলে যে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাকে নেচে যেতে হবে । এবং সে নাচতে থাকবে যখন তার শরীরে শুধু হাঁর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না তখনো ।
ক্যারেন তার পায়ের চামড়া বিদীর্ণ হয়ে রক্তাক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়, মরুভূমি ও কাটার ঝোপঝাড়ে অবিরাম নেচে যায় ।
সে অবশেষে একজন জল্লাদের কাছে এসে তার পা কেটে দেয়ার অনুরোধ জানায়, যেন সে এই নির্মম যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় ।
জল্লাদ ক্যারেনের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজটি করল । কিন্তু তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন পায়ের সাথে জুতাগুলো তখনো নেচে চলছিল ।
আনন্দে ক্যারেন জল্লাদের হাতে চুমু দেয়, যে হাত দিয়ে লোকটি ক্যারেনের পা কেটে দিয়েছিল । লোকটি তাকে কাঠের তৈরি ছোট পা ও একজোড়া ক্র্যাচ বানিয়ে দিল ।
ক্যারেন এখন তার ভুলের অনুতাপ করতে গির্জায় যেতে চায় । কিন্তু যখনি সে গির্জায় যায়, তার লাল জুতোজোড়া এসে হাজির হয় সামনে । তারপর গির্জার দরজার সামনে নাচতে থাকে তারা, যাতে ক্যারেন ভেতরে ঢুকতে না পারে ।
ক্যারেন ঘরে এসে কান্নায় চোখ ভাসায় ।
অবশেষে একদিন পরীটি আবার তার কাছে আসে । সে ক্যারেনের কান্না ও ভুলের অনুতাপ দেখে তার ছোট কক্ষটিকে একটি গির্জা বানিয়ে দেয়, যাতে সে প্রার্থনা করতে পারে ।
ক্যারেন এতোটাই খুশি হয় যে একসময় তার হৃদয় গলে যায় । তারপর সে মারা যায় ।
বিঃ দ্রঃ প্রথম অনুবাদ । চেষ্টা করে দেখলাম । প্রথম হিসেবে ভুলত্রুটি থাকা খুব স্বাভাবিক । পরামর্শ দিলে অনুপ্রেরণা পাব । ধন্যবাদ ।
গল্পটি বাংলানিউজের শিশুদের পাতা ইচ্ছেঘুড়িতে আজ প্রকাশিত হল "লাল জুতার নৃত্য" শিরোনামে । দেখতে ক্লিক করুন. এখানে
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:০৬