একটা টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিন প্রায় শেষ। কিন্তু দুই দলের একটা করে ইনিংসও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ অবস্থায় ম্যাচের ফলাফল ড্র ছাড়া আর কী-ই বা আন্দাজ করা যায়? আবুধাবিতে সদ্য শেষ হওয়া পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা টেস্ট দেখা দর্শকরাও সেই আন্দাজই নিশ্চয় করেছিলেন। কিন্তু উভয় দলের দুইবারের নাটকীয় ধস এবং চতুর্থ ইনিংসের জাদুকর রঙ্গনা হেরাথের বিস্ময়কর বোলিংয়ে অবিশ্বাস্যভাবে জিতে গেছে শ্রীলঙ্কা।
ম্যাচটা শেষে শ্রীলঙ্কার জয় যতোটা না বিস্ময়কর হয়ে হাজির হয়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিস্ময় ছড়িয়েছে রঙ্গনা হেরাথের বোলিং। ক্রিকেট বিশ্বে হেরাথের বোলিং নিয়ে এতো বেশি আলোচনা হচ্ছে যে, কখনো কখনো ভ্রম হয়, হেরাথ যেনো বোলিং করেন না, দেখান বরং জাদু!
মুত্তিয়া মুরালিধরন ক্রিকেট ছাড়ার পর হেরাথই লঙ্কান বোলিং আক্রমণের প্রধান সেনানি। এ কথায় নিশ্চয় দ্বিমত নেই কারো। দ্বিমত থাকার যে সুযোগই নেই।
টেস্ট যখন চতুর্থ ইনিংসে গড়ায়, শ্রীলঙ্কার যখন পুঁজি থাকে খুব কম; হেরাথ বোলার থেকে জাদুকর হয়ে উঠেন আসলে তখনই। ইনিংসে পাঁচ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট তিনি কম পাননি। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে পাঁচ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে দলের অল্প পুঁজিকেও হিমালয়সম পর্বত বানিয়ে দিতে তার জুড়ি নেই।
আবুধাবিতে এবার শ্রীলঙ্কার পুঁজি ছিলো মাত্র ১৩৬ রান। পাকিস্তানের কাছে পড়ে ছিলো পুরো দুইটা সেশন। কট্টর লঙ্কানরাও নিশ্চয় এ সময় খেলা থেকে মন সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলো; করুণ হার দেখার চেয়ে খেলা না দেখে অন্য কাজেই মন দেয়াটাকে নিশ্চয় তাদের কাছে ভালো মনে হচ্ছিলো।
কিন্তু বিশ্বাস হারাননি হেরাথ। বল হাতে জাদুকর হয়ে উঠার যে বিস্ময়কর শক্তি আছে তার, সেটা নিয়েই তিনি জ্বলে উঠলেন আবুধাবিতে। গুনে গুনে তুলে নিলেন পাকিস্তানের ছয় ব্যাটসম্যানকে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন দিলরুয়ান পেরেরা। ফলাফল— ১৩৬ রানই পাকিস্তানের হয়ে উঠলো অস্পৃশ্য পাহাড়-চূড়া। তারা হেরে বসলো ২১ রানের ব্যবধানে।
চতুর্থ ইনিংসে ২৫০-এরও কম পুঁজি নিয়ে চারবার টেস্ট জিতেছে শ্রীলঙ্কা। প্রতিবারই তাদের ত্রাতা হয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ঘূর্ণির জালে জড়িয়ে শেষ করেছেন হেরাথ। এবার যে ঘটনা ঘটলো আবুধাবিতে, ১৩৬ রানের পুঁজি নিয়েও জিতলো শ্রীলঙ্কা; এটা তাদের ইতিহাসের অন্যতম বড় এক সাফল্য। এতো কম রানের পুঁজি বাঁচানোর আর কোনো নজির নেই লঙ্কানদের।
২০০৯ সালে গল টেস্টের শেষ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার জমা ছিলো মাত্র ১৬৮ রান। তারপরও তারা পাকিস্তানকে হারায় হেরাথের জাদুতে। পাকিস্তানকে যে যন্ত্রণা নিয়মিত দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা, তা থেকে ‘বঞ্চিত’ হয়নি ভারতও। দুই বছর আগে টেস্টের শেষ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার পুঁজি ছিলো ১৭৬ রান। ৪৮ রান দিয়ে সাত উইকেট নিয়ে সেই রানটাকেই ‘বিশ্বের সেরা’ ব্যাটিং লাইনের দল ভারতের জন্য চির-কণ্টকাকীর্ণ করে তুলেন তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ‘জাদু প্রদর্শনী’র মাধ্যমে সবচেয়ে কম টেস্ট খেলে ৪০০ উইকেট নেয়ার তালিকায় তিন নম্বরে উঠে গেছেন হেরাথ। এই তালিকার সবচেয়ে ‘বয়স্ক’ বোলার অবশ্য তিনিই। একটা তালিকায় অবশ্য হেরাথ এক নম্বরে; সেটা হলো পাকিস্তানের বিপক্ষে একশ উইকেট নেয়া। উপমহাদেশের এই দলের বিপক্ষে টেস্টে একশ উইকেট নেয়ার কীর্তি নেই আর কারো।
বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই করলেও হেরাথের বোলিংয়ে যে তার লেশমাত্র নেই, তা তো স্পষ্টই। তার বয়স ও বোলিংয়ের ধার বরং একে ওপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে। দিনে দিনে হেরাথ হয়ে উঠছেন এমন এক বোলার, যিনি বোলিং করেন না, বরং দেখান জাদু
মূল লেখা টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারে।